বৈসম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন বা কোটাবিরোধী ছাত্রআন্দোলন করেছে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা। তাদের দাবি বা কথা শোনার জন্য কেউ আসেনি এবং তাদের গুরুত্ব দেয়া হয়নি। প্রথম দিকে তাদের আন্দোলন ছিল শান্তিপূর্ণ। সরকার তাদের দাবির পক্ষেই ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আইনের প্রতি আস্থা রাখার জন্য ছাত্রদের বলেছিলেন, তবে তারা তা মানেনি। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য না বুঝে ছাত্ররা শ্লোগান তুলল ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার/ কে বলেছে কে বলেছে/ স্বৈরাচার স্বৈরাচার’। লেখক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবালের হৃদয়ে শ্লোগানটি বুলেটের মতো বিদ্ধ হলো। তিনি একটি নিবন্ধ লিখলেন, লেখার সাথে একটি চিরকুট জুড়ে দিলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার বিশ্ববিদ্যালয়, আমার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়। তবে আমি মনে হয়, আর কোনো দিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চাইব না। ছাত্রছাত্রীদের দেখলেই মনে হবে, এরাই হয়তো সেই রাজাকার। আর যে কয়দিন বেঁচে আছি, আমি কোনো রাজাকারের মুখ দেখতে চাই না। একটাই তো জীবন, সেই জীবনে আবার কেন নতুন করে রাজাকারদের দেখতে হবে?” তখন বই বিক্রেতা ও প্রকাশকেরা মুহাম্মদ জাফর ইকবালের বই তুলে নিলেন, বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত নিলেন। মুহাম্মদ জাফর ইকবাল কাদের বন্ধু ভাবতেন? আমাদের লেখক, প্রকাশক, বুদ্ধিজীবীরা কেউ কথা বললেন না, চুপ হয়ে রইলেন, নিরবতা পালন করলেন! এ সময় সাংবাদিক কবি জাফর ওয়াজেদ, সাংবাদিক মোস্তফা হোসাইন, কবি ও প্রকাশক নাসির আহমেদ কাবুল, ছড়াকার ইমরান পরশ তাদের কলম সচল রাখলেন। এ ছাড়া আর কোনো দেশপ্রেমিকের পোস্ট আমার চোখে পড়েনি, এটা আমার অযোগ্যতা। আমাদের এই চুপ থাকা মানে মুক্তিযুদ্ধ চেতনাবিরোধীদের আরও সবল করে দেওয়া। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে অনেক প্রকাশক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বই করেছেন, সরকার থেকে সুবিধা নিয়েছেন, অথচ দেশের সংকটময় মুহূর্তে তাদের কোনো ভূমিকা আমার দৃষ্টিগোচর হয়নি। আমরা জানি শেখ হাসিনা হেরে গেলে, বাংলাদেশ হেরে যাবে। অন্ধকারে ডুবে যাবে দেশ, আপনিও ডুবে যাবেন নিশ্চিৎ। আন্দোলনের এক পর্যায়ে ছাত্রআন্দোলনকারীদের ভেতরে ঢুকে গেল দেশবিরোধী রাজনৈতিক দল ও জংগীগোষ্ঠি। ছাত্রআন্দোলন ঘিরে সারা দেশে নৈরাজ্য চালিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা। অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, হত্যাসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ধ্বংসলীলা চালিয়েছে দৃর্বুত্তরা। মেট্রোরেল, সেতু ভবন, বিটিভি, টোলপ্লাজা, নারায়ণগঞ্জে পোশাক কারখানায় অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে তা দেশের জনগণ মিডিয়ার কল্যাণে দেখেছে। জানমাল রক্ষা ও আত্মরক্ষার জন্য পুলিশ গুলি চালিয়েছে, দুষ্কৃতিকারীরাও থেমে থাকেনি। এতে ছাত্র-জনতা, শিশু, পুলিশসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ আহত নিহত হয়েছে। এটা মোটেও কাম্য নয়। এই হত্যার নিরপেক্ষ তদন্ত করে বিচার করতেই হবে। আমরা শান্তি চাই। বলা হচ্ছে দেশে গণহত্যা হচ্ছে। নানান অপপ্রচার, মিথ্যাচার চলমান ফেইজবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন মিডিয়ায়। এর কাউন্টার দিচ্ছেন না আওয়ামী লেখক, প্রকাশক বুদ্ধিজীবীরা! তার চুপ হয়ে আছেন। কিন্তু কেন? এর পরিণতি ভয়াবহ হবার আগে কোমলমতি ছাত্রদের পাশে দাঁড়াতে কেন তারা ভুলে গেলেন? দাবী শতভাগে মেনে নেওয়ার পরও নতুন করে দাবি-দাওয়া তুলছে তারা। কিন্তু কেন? এর পেছনে নীলনকশা কারা করছে, এটা ভেবে দেখা দরকার। স্বাধীনতাবিরোধী কিছু লোক ও ক্ষমতালোভী চক্র এখন সরকারের পতন চায়। এ জন্য তারা নিরীহ ছাত্রদের ভুল পথে পরিচালিত করতে চাইছে। এতে ঘি ঢালছে দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা। আমরা যদি নিজেদের দায়িত্ব পালন না করি অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে লেখক, প্রকাশ ও বুদ্ধিজীবীদের এখনই জেগে ওঠার সময়। এ সময় নূরুলদীনের কথা মনে পড়ে যায়, ‘জাগো বাহে কোনঠে সবায়?’ জয়বাংলা লেখক: কবি, বুদ্ধিজীবী, প্রকাশক: বাঙালি