সাজ্জাদ হুসাইন
শেয়ার মার্কেট হল স্টক মার্কেট। যেখানে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিগুলি স্টক এক্সচেঞ্জে মাধ্যমে তাদের শেয়ার ক্রয় – বিক্রয় করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ – আপনি কোন কোম্পানিতে শেয়ার ক্রয় করলেন, তাহলে আপনি সেই কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার। এখানে আপনি যখন তখন আপনার শেয়ার বিক্রি করতেও পারবেন।
শেয়ার কেনার দরুন আপনি সেই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে পারেন। কোম্পানি যদি অগ্রগতি হয়, তাহলে শেয়ারের মূল্যও বাড়বে। পাশাপাশি মার্কেট শেয়ার বিক্রি করে লাভও পেতে পারেন। বিভিন্ন কারণজনিত একটি শেয়ারের মূল্য প্রভাবিত করে। কখনো এর দাম পড়ে যেতে পারে আবার কখনো দাম উঠতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে মূল্য পতন হ্রাস হয়।
কেন সব কোম্পানি জনসাধারণের কাছে শেয়ার বিক্রি করে?
একটি কোম্পানি বিস্তার ও উন্নয়নের জন্য মূলধন ও অর্থ প্রয়োজন। তাই মূলধন বৃদ্ধির জন্য জনসাধারণের কাছে শেয়ার বিক্রি করে থাকে। কোম্পানীর শেয়ারগুলি ইস্যু করার প্রক্রিয়াকে ইনিশিয়াল পাবলিক অফার (আইপিও) বলা হয়।
বাংলাদেশের শেয়ার বাজারে ব্যবসা করতে গেলে, দুই ভাবে করতে পারেন।
এক. প্রাইমারি শেয়ারের মাধ্যমে এবং
দুই. সেকেন্ডারি শেয়ারের মাধ্যমে।
প্রাইমারি শেয়ারঃ বাজারে কোন কম্পানি প্রথম প্রাইমারি শেয়ারের মাধ্যমে প্রবেশ করে। অর্থাৎ নতুন কোন কোম্পানিকে বাজারে অন্তর্ভুক্ত হতে হলে তাকে প্রথমে প্রাইমারি শেয়ার ছাড়তে হবে। শোনা যায় সবাই বলে প্রাইমারি শেয়ারে কোন লস নাই। সেকেন্ডারি শেয়ারে প্রচুর রিস্ক। এরকম কথা তারা কেন বলে আসুন জেনে নেই। প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারের একটা ফেস ভ্যালু থাকে। কোম্পানি যখন তার শেয়ারটি মার্কেটে ছাড়তে চায় তখন সে ফেস ভ্যালুর সাথে প্রিমিয়াম যোগ করে একটি নির্দিষ্ট টাকায় শেয়ারটি অফার করে। এসইসি যদি অনুমোদন দেয় তবে তারা তাদের শেয়ার কেনার জন্য দরখাস্ত আহ্বান করে। যাকে আমরা IPO/আইপিও বা ইনিশিয়াল পাবলিক অফার বলে থাকি। ধরা যাক কোন কোম্পানির ফেস ভ্যালু ১০ টাকা এবং তারা ৫ টাকা প্রিমিয়াম সহ শেয়ারের দাম নির্ধারণ করল ১৫ টাকা। এখন যদি ঐ শেয়ার IPO এর মাধ্যমে পেয়ে থাকেন তবে প্রতি শেয়ারে দাম পরে ১৫ টাকা। এখন ইচ্ছা করলে এই শেয়ার সেকেন্ডারি মার্কেটে বিক্রি করতে পারবেন। সাধারনত দেখা যায় প্রাইমারি শেয়ারের যে দাম তার তুলনায় সেকেন্ডারি মার্কেটে এর দাম বেশি হয়ে থাকে। শেয়ারটি যদি সেকেন্ডারি মার্কেটে ২৫ টাকায় ওপেন হয় তবে তখন বিক্রি করলে প্রতি শেয়ারে ১০ টাকা লাভ পেয়ে যাবেন। যদি মনে করেন এই কোম্পানি সামনে আরো ভাল করবে তবে প্রাইমারিতে প্রাপ্ত শেয়ার অনেক দিন ধরেও রাখতে পারেন পরবর্তিতে বেসি দামে বিক্রির জন্য। আবার মনে করুন, যে কোম্পানির প্রাইমারি শেয়ার কিনতে চাচ্ছেন তার প্রিমিয়াম অনেক বেশি। তাহলে সেকেন্ডারি মার্কেটে যে দামে শেয়ার কিনেছেন তার তুলনায় দাম কমেও ওপেন হতে পারে। তাই প্রাইমারি শেয়ার মানেই লাভ না মনে করে কোম্পানিটি কি দামে শেয়ার ছাড়ছে প্লাস কোম্পানির আয় কেমন অর্থাৎ কোম্পানিটি ভাল কিনা তা যাচাই করে কিনুন।
সেকেন্ডারি শেয়ারঃ প্রাইমারি শেয়ার যখন কেউ বিক্রি করে দেয় তখন তা সেকেন্ডারি শেয়ারে পরিনত হয়। সেকেন্ডারি শেয়ার বাজারে ব্যবসা করতে হলে শেয়ার মার্কেট সম্পর্কে ভাল জ্ঞান থাকতে হবে। অর্থাৎ ব্যবসা করার জন্য ফান্ডামেন্টাল প্লাস টেকনিক্যাল এনালাইসিস সম্পর্কে ধারনা থাকতে হবে। এ ধারনা অর্জন করতে পারলে শেয়ার ব্যবসায় ভাল লাভ করতে পারবেন। আর যদি দীর্ঘমেয়াদে শেয়ারে ব্যবসা করেন এবং একে পেশা বা বাড়তি ইনকামের সোর্স হিসেবে ব্যবহার করতে চান তবে সেকেন্ডারি মার্কেট খুবই উত্তম যায়গা।
কেউ যদি মনে করেন শেয়ার ব্যবসার মাধ্যমে রাতারাতি ধনী হয়ে যাবেন, তাদের এ ব্যবসায় আসতে নিষেধ করব। প্রতি ব্যবসাতেই লাভ লস থাকে এবং পরিশ্রমের দরকার। তাই যথেষ্ট মেধা ও বুদ্ধি খাটিয়ে ধীরেধীরে আপনি শেয়ার মার্কেটে অন্যান্য ব্যবসার তুলনায় তুলনামূলকভাবে অনেক ভাল প্রফিট করতে পারবেন এ আশ্বাস দেওয়া যায়।
ব্রোকার দিয়ে শেয়ার কিভাবে কেনে
শেয়ার ব্যবসা করতে গেলে প্রথমেই তাদের মনে প্রশ্ন আসে কিভাবে টাকা দিয়ে শেয়ার কিনব, টাকা কি ব্যাংকে দিতে হবে, কাকে টাকা দিব বা কিভাবে লাভের টাকা পাব। শেয়ার ব্যবসা করতে হলে প্রথমেই কোন একটি ব্রোকারে গিয়ে BO Account খুলতে হবে। BO Account খুললে ঐ ব্রোকার হাউস থেকে একটা ব্রোকার নম্বর ও BO Account নাম্বার দিবে। আসলে শেয়ার বেচাকেনার জন্য ঐ ব্রোকার নাব্বারটাই দরকার BO Account নাম্বারটা লাগে না। BO Account নাম্বার লাগে খালি প্রাইমারি শেয়ারের জন্য। যাই হোক একাউন্ট খোলার পর ঐ ব্রোকারে টাকা জমা দিতে হবে। টাকা নগদ ক্যাশ বা চেকে দিতে পারেন। ব্রোকারে দেখবেন সবাই একজন ব্যক্তিকে শেয়ারের দাম জিজ্ঞাসা করছে এবং সে কম্পিউটার দিয়ে দাম বলছে ও দেখছে। টাকা জমা দেবার পর যদি শেয়ার কিনতে চান তবে ঐ ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করুন, যে শেয়ার কিনতে চান তার দাম কত। তারপরে ঐ দামে যদি শেয়ার কিনতে চান তাহলে বলবেন অমুক কোম্পানি ৫০০ কিনেন। তখন ঐ ব্যক্তি আপনার ব্রোকার নাম্বারটি চাইলে তা দিন। আরেকটু সহজভাবে বলি মনে করেন আপনি BDCOM এর ১ লট কিনতে চান তখন বলবেন BDCOM ৫০০ কেনেন (যেহেতু BDCOM এর লট ৫০০ টায়) বা ২ লট কিনতে চাইলে বলেন BDCOM ১০০০ কেনেন। কিংবা DUTCHBANGLA ১ লট কিনতে চাইলে বলবেন ৫০ টা DUTCHBANGLA কেনেন। মনে রাখবেন ব্রোকারে কিন্তু শেয়ার বেচা কেনার সময় লট হিসেবে বলে না। আপনাকে লট এর গুণিতক আকারে সংখ্যায় বলতে হবে। আবার বিক্রি করার সময়ও এভাবে বিক্রি করবেন। শেয়ার কিনলে বা বিক্রি করলে কোন কাগজপত্র দেয়া হবে না। অটোমেটিক ঐ শেয়ার আপনার একাউন্টে জমা হয়ে যাবে এবং একাউন্ট থেকে টাকা মাইনাস হয়ে যাবে। আপনি চাইলে তাদের কাছ থেকে পোর্টফলিও প্রিন্ট করে নিতে পারেন। পোর্টফলিও লাগলে ঐ একই ব্যক্তিকে ব্রোকার নাব্বারটি দিয়ে বলুন পোর্টফলিও প্রিন্ট দিতে।
আজ আগামী ডেস্ক