আজ ফাল্গুনের প্রথম দিন; বিশ্ব ভালোবাসা দিবস

আজ আগামী- বিশ্ব ভালোবাসা দিবস হিসেবে বসন্তের প্রথম দিনকে বেছে নেওয়ায় বাঙালির প্রাণে থাকে উচ্ছাস, আনন্দ। যদিও ভালোবাসতে কোনো নির্দিষ্ট দিন ক্ষণ প্রয়োজন হয় না, তবু এই দিনকে ঘিরে উচ্ছাস থাকে। প্রেমিক যুগল অপেক্ষা করে। ’ভালোবাসা” শব্দটি মূলত এতটাই বিস্তৃত যে কোনো নির্দিষ্ট দিনে তাকে বেধে রাখা সম্ভব না। আবার কোনো নির্দিষ্ট সম্পর্কের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। তা যেমন মানুষের সাথে মানুষের তেমনি হতে পারে কোনো প্রাণীর প্রতিও। ভালোবাসার ধরণই এমন। কে কখন কোথায় কাকে ভালোবাসবে তার পূর্ব অনুমান করা সম্ভব না। ভালোবাসার শুরু কবে তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব না। তবে ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইনস ডে এর উৎপত্তি নিয়ে দু’একটি তথ্য রয়েছে। ভ্যালেন্টাইনস ডে’র সংক্ষিপ্ত ইতিহাসে জানা যায়, রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস একটা সময় তার দেশে বিয়ে নিষিদ্ধ করলেন। এর কারণ হলো যুদ্ধে যেতে প্রিয়তমাকে ছেড়ে যুদ্ধে যেতে অনেক তরুণই অনাগ্রহ প্রকাশ করছিল। এর ফলেই সম্রাট এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন’ তা কি আর আটকে রাখা যায়। এগিয়ে এলেন সেন্ট ভ্যালেন্টাইন। তিনি তরুণ তরুণীদের বিয়ে দিলেন। এভাবে চলতে গিয়ে অবশেষে ধরা পরলেন সম্রাটের হাতে। বন্দী অবস’ায় তার সাথে সম্পর্ক হয় একটি মেয়ের। যে মেয়েটি প্রথমে অন্ধ ছিল বলে জানা যায়। কারাগারে থাকা অবস’ায় তাদের প্রেম হয়। পরবর্তীতে তিনি ধর্মযাজকের আইন ভেঙে মেয়েটিকে বিয়ে করেন বলেও শোনা যায়। এই খবর সম্রাটের কানে যাওয়া মাত্রই তার ফাঁসির রায় হয়। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে তার প্রেমিকার কাছে লেখা শেষ চিঠিতে লিখেছিলেন ’লাভ ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন”। দিনটি ছিল ১৪ই ফেব্রুয়ারি। ৪৯৬ খ্রিষ্টাব্দে পোপ গেলাসিয়াস প্রথম এই দিনটিকে ভ্যালেন্টাইনস ডে হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৭০০ শতাব্দিতে দিনটিকে জনপ্রিয়ভাবে পালন শুরু করে ব্রিটেন। ভালোবাসা দিবসের পেছনের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে জনপ্রিয় ইতিহাস।
ভালোবাসা শব্দটির কোনো সীমারেখা থাকার কথা না থাকলেও আমরা তা একটি নির্দিষ্ট গন্ডিতে আবদ্ধ করে ফেলেছি। গায়কের সুরে যখন ভেসে ওঠে, সখী ভালোবাসা কারে কয়, সে কি কেবলি যাতনা ময়’- তখন সত্যি জানতে ইচ্ছে করে ভালোবাসা কারে কয়। তা কি আজ সত্যিই অবিশ্বাসের দ্বন্দ্বের জেরে মানুষের ভেতর থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে? যার ভেতরে ভালোবাসা থাকে না তাকে তো মানুষ বলা যায় না? পশুও কি বলা যায়? কারণ পশুরও তো ভালোবাসা থাকে। চারদিকে এত নির্মমতা, খুনোখুনি, হানাহানি,যুদ্ধাবস’া,হিংসা,শক্তি প্রদর্শনী এসব দেখে যে কারও মনে প্রশ্ন জাগতে পারে ভালোবাসা কোথায়? কোনো দিবসে নয় বরং প্রতিটি দিনই আসলে ভালোবাসা দিবস। কারণ ভালোবাসা ছাড়া একটি দিনও অতিবাহিত হওয়া সম্ভব নয়। ভালোবাসা হোক পৃথিবীতে সৃষ্ট প্রতিটি প্রাণীর জন্য।
ভালোবাসা বিহীন একটি দিনও পৃথিবীর কাটানো সম্ভব নয়। ভালোবাসার বিপরীতে থাকে ঘৃণা। ঘৃণার্ত জীবন নরকের সমান। পৃথিবীর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণী ভালোবাসার প্রত্যাশা করে। ভালোবাসা আছে বলেই আজও বন্ধন আছে। আর বন্ধন আছে বলেই মানব জাতি টিকে আছে। মানুষ মানুষকে ভালোবাসে। মানুষ পৃথিবীর প্রতিটি জীবকেও ভালোবাসে। এ কথা বলতে দ্বিধা নেই যে ভালোবাসার রকমে পরিবর্তন এসেছে। সেটা অন্য ব্যাপার। তবু ভালোবাসা আছে। ভালোবাসা থাকবে যতকাল টিকে থাকবে পৃথিবী নামক এই গ্রহ। পরিশেষে ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুনের শুভেচ্ছা রইলো।

কবি অলোক আচার্য

সকল পোস্ট : অলোক আচার্য