একটি সুইসাইড নোট

নাসির আহমেদ কাবুল ।পর্ব ৬ ।।
মৌরির বাসায় ফিরতে রাত হয়ে যায়। বাসায় ঢুকে দেখতে পায়, মা ড্রইংরুমে বসে বই পড়ছেন। মৌরিকে দেখে বই বন্ধ করে বলেন, ‘বসো। তোমাকে আমার কিছু বলার আছে।’
মৌরি সোফায় বসতে-বসতে বলে, ‘একটু দেরি হলো মা।’
: কৈফিয়ত চাইনি। তবে তোমাকে একটি কথা মনে করিয়ে দিতে চাই।
: কী মা?
: আমরা যে সমাজে বাস করি, সেখানে তোমাকে নির্দিষ্ট একটি গণ্ডির মধ্যে চলতে হবে মা। না হলে লোকে নানা কথা বলবে। এটা কি তুমি বুঝতে পারো না?
: কেন বুঝব না! আমি কি কিছু অন্যায় করছি মা?
: ন্যায়-অন্যায়ের কথা নয়। সমাজ-সংসারের একটা রীতি আছে। তাকে তো অবজ্ঞা করতে পারি না আমরা।
: আমি মানি মা। যদিও সমাজের অনেক কিছুই পছন্দ নয় আমার।
: কী পছন্দ, না পছন্দÑসেটা তোমার একান্তই ব্যক্তিগত। সমাজে শৃংখলার জন্য আমাদের অনেক কিছু মানতে হয়, অনেকেই হয়ত সেটা মন থেকে মানতে পারে না। আর যদি মানোই তাহলে রাত দশটা পর্যন্ত বাইরে থাকো কেন?
: পার্থ দার বাসা থেকে বের হতে দেরি হয়ে গেছে। ওখান থেকে শপিংমলে গিয়েছিলাম। রাস্তায় জ্যাম।
: দেখো মৌরি, আমি তোমাকে জেরা করছি না। তোমার উপর আমার বিশ^াস আছে। বিশ^াস আছে যে, আমার মেয়ে আমাকে না জানিয়ে কিছুই করবে না। অন্যায় তো নয়-ই।
: তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
: কী?
: আমার কোনো বন্ধু নাই কেন?
নুশরাত নাহিদ অবাক হয়ে মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন। তারপর হঠাৎ হাসিতে ফেটে পড়েন তিনি। মৌরিও মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে অবাক হয়ে বলে, ‘তুমি হাসছ কেন! হাসির এমন কী বললাম আমি?’
: আচ্ছা মৌরি, তুমি কবে বড় হবে বলো তো?
: কেন মা? আমার তো এখন আঠারো বলা যায়। একদিন বাকি। আমি তো এখন এডাল্ট। বড় হওয়ার আর কী বাকি আছে?
: বয়স হলেই বড় হয় না মৌরি।
: তাহলে?
: বড় হতে হলে বুদ্ধি থাকতে হয়। দায়িত্ব নেয়া শিখতে হয়।
: তুমি বলছ বুদ্ধি নেই আমার! মা, আমার বুদ্ধি আছে, বলতে পারো দুষ্টু বুদ্ধি নেই। যা ওই লোকটা মানে রাশেদুল সাহেবের আছে। কোনো দায়িত্ব তো দাওনি কখনও। কতবার বলছি, তোমার গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে নিয়ে চলো আমাকে। আমি দেখতে চাই, কেন বার-বার লোকসান গুনতে হবে তোমাকে। অথচ ওই লোকটার গার্মেন্টসে লাভের পর লাভ হচ্ছে। তুমি নিজেও যাচ্ছ না, খোঁজ-খবর নিচ্ছ না। কেন এমন করছ তুমি?
: সবই করব। আগে গ্রাজুয়েশনটা শেষ করো। তারপর তোমাকেই বুঝিয়ে দেবো সব। কী পারবে তো?
: পারব না মানে? একশ’বার পারব, যদি তুমি পাশে থাকো।
: কয়েকদিন পর্যন্ত তুমি রাশেদুলকে লোকটা-লোকটা করছ কেন? আগে তো…
: বাবা বলতাম তাই তো? এখন আর বলতে পারব না।
: কেন, কী হয়েছে খুলে বলো।
: তুমি নিজেও জানো মা। ওই লোকটা আমার বাবা নয়। তুমি এতদিন আমাকে বলোনি। কিন্তু আমি জেনে গেছি।
নুশরাত নাহিদ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন। তারপর বইয়ের পাতা উল্টাতে-উল্টাতে বললেন, ‘কী করে জানলে সে কথা জিজ্ঞেস করব না। না জানলেও এক সময় আমিই তোমাকে বলতাম। এতদিন বলিনি তুমি ছোট ছিলে বলে। আমার মনে হয়, যে কোনো পরিস্থিতি বোঝার বুদ্ধি-বিবেচনা এখন তোমার হয়েছে।’
: অতটা হয়নি মা। তবে তোমার যে ওই লোকটাকে মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে, সেটুকু বুঝতে পারছি আস্তে-আস্তে। আমার বাবা কে, কোথায় থাকেন তিনি, আমি জানতে চাই মা।
মৌরির কথায় নুশরাত নাহিদ কিছুটা বিমর্ষ হলেন। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, এই বিষয়টি আমি তোমাকে এক্ষুণি বলতে চাইনি। কারণ এসব শোনার জন্য পর্যাপ্ত বয়স এখনও হয়নি তোমার। তবে তোমার সে বয়স না হলেও তোমাকে আমি অন্তত মনের দিক থেকে পরিণত ধরে নিয়ে ব্যাপক স্বাধীনতা দিয়েছি। তুমি কি তা লক্ষ্য করেছ?
: হ্যাঁ মা।
: কিন্তু কেন জানো?
: না।
: তোমার নানাভাই খুব বড়লোক ছিলেন। কোটি-কোটি টাকা ছিল তার। তবে তিনি ছিলেন ভীষণ রকম কনজারভেটিভ। আমাদের সব সময় তিনি ঘরের মধ্যে আটকে রাখতেন। স্কুলে যেতে হতো বোরকা পরে। চাচাতো ভাইবোনদের সঙ্গেও দেখা-সাক্ষাত করতে দিতেন না তিনি। আমরা সেই রক্ষণশীল পরিবারের চার দেয়ালের মধ্যে বড় হওয়ার পর আমরা কি সে ধারা বজায় রাখতে পেরেছি? পারিনি। কারণ মেয়েদের সবকিছু নির্ভর করে স্বামীর ইচ্ছের ওপর। একটা কথা তোমাকে স্পষ্ট করে বলি মা, তোমার বাবার সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল আমার, বিয়ে হয়নি আমাদের। তোমার বাবার আগে একবার বিয়ে হয়েছিল বলে তোমার নানাভাই আর তাকে মেনে নিলেন না।
: তুমি এ কী বলছ মা? বাবার সঙ্গে বিয়ে হয়নি তোমার! তাহলে আমার জন্ম…
: যা বলছি সত্যি। আমরা দুজন-দুজনকে ভালোবাসতাম। কিন্তু দুজনেই জানতাম আমাদের বিয়ে হবে না। বাবা কোনোদিন মেনে নেবেন না। তাই আমি তোমার বাবার কাছে দাবি করলাম বিয়ে না হলেও একটি সন্তান আমার চাই-ই চাই। আমি ভাবলাম, তোমার বাবাকে জীবনে না পেলেও তার ঔরসজাত সন্তান তাকে না পাওয়ার সব জ্বালা-যন্ত্রণা ভুলিয়ে দেবে আমার। তোমার বাবা প্রথমে কিছুতেই আমার প্রস্তাবে রাজি হননি। শেষটায় আমার জেদাজেদিতে তিনি তার ভালোবাসার সন্তান আমার গর্ভে দিয়েছিলেন। আর সে সন্তান হলে তুমি।
: এ কী বলছ তুমি মা?
: এতে তোমার বাবার কোনো দোষ নেই। আমি তাকে বাধ্য করেছি। দোষ যদি কিছু হয়ে থাকে, আমার হয়েছে। তার বিনিময়ে তোমাকে পেয়েছি আমি। তোমার মধ্যে তোমার বাবাকে খুঁজে পাই বলে তোমাকে শাসন করতেও পারি না। কোনো কিছুতে না করতে পারি না।
মৌরি সোফা থেকে উঠে মায়ের বুকের মধ্যে মাথা রেখে বলে, ‘তোমার কোনো অপরাধ নেই মা। বরং আমার অহঙ্কার হচ্ছে যে, তুমি তোমার ভালোবাসাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কোনকিছুকে পাপ মনে করোনি। তুমি ভালোবাসাকে সবার উপরে স্থান দিয়েছ মা।’
: বাবার কথা শুনতে ইচ্ছে করছে তো তোমার? তাহলে শোনোÑতোমার বাবার সঙ্গে আমার পরিচয় হঠাৎ করে। সে তখন নামকরা আর্টিস্ট। প্রায়ই দেশের বাইরে ছবি প্রদর্শনী করে বেড়াতেন। একটি এক্সিবিশনে তার সঙ্গে প্রথম পরিচয় আমার। আমি তখন অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে। তারপর বন্ধুত্ব এবং অনেক পরে প্রেম। কিন্তু বাধ সাধলেন তোমার নানাভাই। তোমার বাবা আগে একবার বিয়ে করেছিলেন, স্ত্রী রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছেন বলে তাকে তোমার নানাভাই আর তাকে মেনে নিতে পারলেন না। তিনি জোর করে রাশেদুলের সঙ্গে আমার বিয়ে দিলেন! তখন আমি এক মাসের গর্ভবতী। তুমি তখন আমার গর্ভে।
: এ কথা জানত লোকটা, মানে রাশেদুল সাহেব?
: কোন কথা?
: তুমি…
: হ্যাঁ, আমিই তাকে বলেছিলাম, যাতে সে আমাকে বিয়ে করতে রাজি না হয়। কিন্তু লোকটা লোভী। সে আমাকে নয়, সম্পত্তিকে ভালোবাসে। আমাকে বিয়ে করে কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি পেয়েছিল সে। তোমার নানার বাকি সম্পত্তি আমি ও তোমার মামা শওকত হোসেন সমান ভাগ পেয়েছিলাম।
: মামার সঙ্গে তোমার যোগাযোগ নেই কেন?
: একেবারে যোগাযোগ নেই, তা নয়। মাঝে-মধ্যে ফোন করে খবর নেন। রাশেদুল সাহেবকে তার পছন্দ নয় বলে এখানে আসে না।
: আমাকে দেখলে চিনতে পারবেন মামা?
: তুমি যখন ছোট, তখন একবার দেখেছে তোমাকে।
: ওহ!
: তোমার মামা খুব ভালো মানুষ। অনেক বড় লোক। তার একমাত্র ছেলে লন্ডনে ব্যারিস্টারি পড়ছে। ছেলের সঙ্গে তোমার বিয়ের কথা বলতে এসেছিলেন একবার। আমি না করে দেয়ায় আর আসেননি। তোমার মামা খুব ভালো মানুষ হলেও তার স্ত্রী খুব অহঙ্কারী। ছেলেটাও ভালো হয়নি, এটুকুই শুধু বলা যায়। এ কারণে আমি রাজি হইনি তোমাকে তার ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে।
: মামার ঠিকানা জানো? আমাকে দেবে? আমি যাবো তার কাছে।
: তা যাও। কিন্তু তার বাসায় কখনও যেয়ো না।
: আচ্ছা। আমি তার বাসায় যাবো না, অফিসেই দেখা করব।
: রাশেদুল সাহেবকে তোমার মামা তিনবার কিনতে পারেন। আমিও ভাবছিলাম তোমার মামার সাহায্য নিয়ে একটা কিছু করব। রাশেদুল সাহেব দিনের পর দিন আমার উপর অত্যাচার বাড়িয়ে দিচ্ছে। সব সম্পত্তি তার নামে লিখে দেয়ার কথা বলছে।
: আমি জানি মা। আর সে কারণেই আমি মামার সঙ্গে দেখা করব। রাশেদুল সাহেব মনে করছে, তুমি একা। তাই তোমাকে ঠকাতে চাইছে।
: ঠকাতে পারবে না আমাকে। আমি শুধু তোমার গ্রাজুয়েশনটার অপেক্ষা করছি।
: বাবা কোথায় আছে জানো তুমি?
: না।
: তোমার বিয়ের পর আর যোগাযোগ হয়নি তার সঙ্গে?
: একবার শুধু কথা হয়েছিল। তারপর সে আর কোনো যোগাযোগ রাখেনি। আমিও যোগাযোগ রাখতে চাইনি।
: ঠিকানা জানো?
: না।
: দেখতে ইচ্ছে করে না তাকে?
: ইচ্ছে করে? তবে ভয় হয়।
: ওই লোকটাকে?
: হুঁ।
: ভয় পেলে জয় করা যায় না মা। তুমিই আমাকে শিখিয়েছ। তার নাম বলো। আমি খুঁজে নেবো তাকে। তোমার কোনো আপত্তি নেই তো?
: না। আপত্তি থাকবে কেন? এটা তো তোমাদের ব্যাপার।
: তার নাম আরিফ হাসান। চিত্রশিল্পী। এক সময় চারুকলার অধ্যাপক ছিলেন।
: ওকে আর বলতে হবে না। আমি তাকে খুঁজে বের করবই। আর ওই রাশেদুল হাসান সাহেবকে ডিভোর্স করবে তুমি।
: কী বলছিস তুই?
: যা বলছি, তাই করো মা। ওই লোকটা তোমাকে তার স্বার্থের জন্য ব্যবহার করছে। এখন তোমার সম্পত্তির ওপর লোভ তার। সম্পত্তির জন্য তোমাকে খুন করতেও দ্বিধা করবে না সে।
নুশরাত নাহিদ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন মেয়ের দিকে। তারপর বলেন, ‘এত কথা বলতে সাহস পাস কী করে?’
মৌরি মায়ের চোখে চোখ রেখে বলে, ‘সত্য বলতে সাহসের অভাব হয় না। আচ্ছা মা, এই অমানুষটাকে নিয়ে তুমি সারাটা জীবন কাটাবে কী করে?’
: কী করব তাহলে?
: আমি বাবাকে খুঁজে বের করব। বাবার সঙ্গে তোমার বিয়ে না হলেও বন্ধু হয়ে তো থাকতে পারবে। মা প্রতিটি মানুষের জীবনে একজন বন্ধু দরকার।
মা মেয়েকে বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে বলেন, ‘তোর বাবাকে একবার খুঁজে এনে দে। তার সাথে আমার অনেক কথা আছে মা। আচ্ছা, কী জানি বলছিলি বন্ধুর কথা?’
: ওহঃ তাই! বলছিলাম আমার কেন কোনো ছেলে বন্ধু নেই।
: তো আমি কী করব? ছেলে বন্ধু কি সুপার শপে কিনতে পাওয়া যায়, তাহলে চল এখনই তোকে এক ডজন ছেলে বন্ধু কিনে দেবো।
: না-না কেনার কথা নয়। আচ্ছা মা, পার্থ দা আমার বন্ধু হতে পারে না?
নুশরাত নাহিদ ¤øান হাসেন। তারপর বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাতে-উল্টাতে বললেন, হবে না কেন? তবে একজন একজনকে বোঝার ক্ষমতা থাকতে হবে তো।’
নুশরাত নাহিদ কিছুক্ষণ ভাবলেন। তারপর কয়েক মুহূর্ত মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘তুইও আমার পথ ধরলি!’
: বুঝলাম না মা। কী বলতে চাও তুমি?
নুশরাত নাহিদ হাসতে হাসতে বললেন, ‘তোর বাবার সঙ্গে আমার বয়সের বেশ কিছুটা পার্থক্য ছিল। সেটাই বলছি যে, তুইও এমন একজনকে বন্ধু হিসেবে বেছে নিলি যে তোর চেয়েও বয়সে বেশ বড়।
: তাতে কোনো সমস্যা মা?
: বলেছি তো সমস্যা নেই।
: থ্যাংকু মা। কাল আমার জন্মদিন মনে আছে তোমার?
নুশরাত নাহিদ খিল খিল করে হেসে উঠেন। তারপর বলেন, তোর জন্মতারিখটা মনে থাকবে না আমার? তুই আমার হঠাৎ পাওয়া ধন না মা, অনেক কষ্টে, অনেক বদনামের বিনিময়ে তোকে পেয়েছি আমি।
: সরি মা।
: বোকা!
: মা একটা কথা বলব?
: আবার কী কথা বাকি রয়ে গেলো?
: রাগ করবে না তো?
: না।
: কাল তো আমার জন্মদিন। এবার জন্মদিনটা আগের মতো পালন করব না, তোমার আপত্তি আছে?
: বুঝলাম না।
: কাল সকালে পার্থ দার কাছে যাবো। আমার যতদূর মনে পড়ে পার্থ দা একদিন কথায়-কথায় শিল্পী আরিফ হাসান নামটা বলেছিলেন।
: পার্থ কি আরিফকে চেনে নাকি?
: জানি না তো মা। সেটাই তো জিজ্ঞেস করব। সকালে পার্থ দার ওখানে যাবো। পার্থদা যদি বাবাকে চেনে তাহলে তাকে নিয়ে বাবার কাছে যাবো।
: পাগল নাকি তুই?
: না, মা। পাগল হইনি। এতদিন বাবার কথা জানতে পেরেছি। তাকে খুঁজে বের না করা পর্যন্ত আমার আর কিছু ভালো লাগবে না।
নুশরাত নাহিদ মেয়ের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে রইলেন। মেয়ের চেহারায় আজ ওর বাবার স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলেন। ঠিক সেই চোখ, কথা বলার সেই ভঙ্গি। কই এতদিন তো সে মেয়ের মধ্যে আরিফ হাসানকে খুঁজে পাননি। তাহলে সে কি ঘোরের মধ্যে ছিল। অথচ আরিফ হাসানের সঙ্গে বিয়ে না হলেও সে তো তার স্মৃতিতে বহন করার জন্যই অন্যায়ভাবে তার সন্তান গর্ভে ধারণ করেছিলেন। এতদিন পর নুশরাত নাহিদের মনে প্রশ্ন জাগল এটা কি অন্যায়, ব্যাভিচার যাকে বলে? কিন্তু সমাজ তো সে কথা জানে না। এই পাপ তো সমাজের কাছে নয়। এই পাপ সৃষ্টিকর্তার কাছে। নিশ্চয়ই তিনি এই অপরাধকে ক্ষমা করে দেবেন।
: তুমি কিছু ভাবছ মা?
: হুঁ। এতদিন পর আবার তুই আমাকে ঝড়ের মধ্যে ফেলে দিলি!
বাবাকে কি তোমার কথা কিছু বলব?
: আগে খুঁজে পাবি তারপর তো! যা ইচ্ছে তাই বলিস। আমার কিছু বলার নেই।
: খুঁজে তো আমাকে পেতেই হবে মা। না হলে যে আমার নিস্তার নেই।
: আচ্ছা, তোর যা ইচ্ছে তাই করিস। এখন আর রাত জাগিস না। ডাইনিংয়ে খাবার রাখা আছে। খেয়ে ঘুমিয়ে পড়।
: ওকে মা। গুড নাইট।

চলবে