কবিতা : তারই অপেক্ষায়/শীলা প্রামাণিক

তারই অপেক্ষায়
শীলা প্রামাণিক

বিজয় কেবল একটি উচ্চারিত শব্দ নয়
বিজয় একটি বিবর্ণ কষ্টের নাম।
বিজয় একটি রক্তিম নাম।
বিজয়ের জন্যে বাংলার তেরশত নদীর জল
হয়েছিল রক্ত লালে লাল।
বায়ুমণ্ডল হয়েছিল লাশের গন্ধে ভারি
মা বোনের সম্ভ্রম লুটের আর্তনাদ ছড়িয়ে পড়েছিল ইথারে ইথারে।
আমার বোনের পিতৃপুরুষের দেয়া নাম মুছে দিয়ে,
শকুনেরা নাম লিখেছে ধর্ষিতা।
সেই অবধি আকাশের বুক থেকে যত বৃষ্টি ঝরেছে
সব যেন আমারই বোনের চোখের জল।
ধরিত্রীতে যত আগুন জ্বলেছে সব যেন
আমারই মায়ের বুকের আগুন!
অবশেষে কারো কারো নাম যদিও বীরাঙ্গনা।
তবু আজও কত মা বোন সেই শকুনের দেয়া নাম বয়ে বেড়ায়,
আর বয়ে বেড়ায় পিতৃপরিচয়হীন অবহেলিত গর্ভজাত চিহ্ন।
তবু আমার মা ৫৫ হাজার বর্গমাইল আগলে রেখেছে-
তার স্নেহের সবুজ শাড়ির আঁচল ছড়িয়ে।
কত ১৬ই ডিসেম্বর আসে কত চলে যায়,
প্রিয়তমার হাত ছিটকে সেই যে বেরিয়ে গেল আমার ভাই
তারই অপেক্ষায় আমার বাংলার প্রকৃতিতে
ঋতু বদলের সাথে সাথে
কত রকম ফুলের বাহার, ফলের সম্ভার,
তারই অপেক্ষায় আসে বিজয়।
আমি বসে আছি প্রতিটি মা বোনের ভালে লিখে দেয়া
শকুনের নাম মুছে দেবার জন্য,
আমি বসে আছি প্রতিটি অবহেলিত, অযাচিত অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভজাত স্মৃতিচিহ্নের
যুদ্ধশিশু স্বীকৃতির জন্য।
আমি বসে আছি লক্ষ লক্ষ স্বজনের আত্মত্যাগে তিলে তিলে গড়া
লাল সবুজের পতাকা হাতে
তারই অপেক্ষায় এক অনাবিল বিজয়ের জন্য।