নিরাপদ থাকুক মাতৃস্বাস্থ্য



শাপলা খাতুন– ১ আগস্ট, বিশ্ব মাতৃস্তন্যপান সপ্তাহের প্রথম দিন। প্রতি বছর ১-৭ আগস্ট বিশ্ব স্তন্যপান সপ্তাহ পালিত হয়। ১৯৯০ সালের ইতালির ফ্লোরেন্সে ইনোসেনটি গবেষণাকেন্দ্রের ঘোষণার সম্মানে প্রতি বছর এটি পালিত হয়ে আসছে। বিশ্ব স্তন্যপান সপ্তাহ সারা বিশ্বে মায়েদের বুকের দুধ পান করানোর বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং উত্সাহিত করতে একটি বৈশ্বিক প্রচারাভিযান। ১৯৯২ সাল থেকে ‘নারী ও কর্ম’-এর সঙ্গে মহিলাদের স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রতি বছর বিশ্ব মাতৃ দুগ্ধ সপ্তাহ উদ্যাপন হয়ে আসছে এবং একই সঙ্গে মাতৃদুগ্ধের বিকল্প শিশু খাদ্যের আন্তর্জাতিক বিপণন সংস্থা ও সম্প্রদায়সমূহের সমর্থন নিয়ে বাস্তুতন্ত্র, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, শিক্ষা এবং মানবাধিকার বিষয়াদির ওপর ভিত্তি করে প্রতি বছর একটি থিম তৈরি করে এটি উদ্যাপিত হয়। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ২০১৬ সালে বিশ্ব স্তন্যপান সপ্তাহ উদ্যাপন শুরু হয়। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলি রেজুলিউশনে বিশ্ব স্তন্যপান সপ্তাহকে স্তন্যপানের একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হিসেবে সমর্থন করা হয়।
‘সেভ দ্য চিলড্রেন’-এর তথ্য মতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩৫ লাখ শিশু জন্মগ্রহণ করে। বর্তমানে মাত্র ৬৫ শতাংশ মা ছয় মাস বয়স পর্যন্ত তাদের শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন। ২০১১ সালে এই হার ছিল ৬৪ শতাংশ। ২০১৫ সালে ১৭ শতাংশ হ্রাসে নেমে আসে ৪৭ শতাংশে। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মাতৃকালীন ছুটি ছয় মাস করার পর ২০১৯ সালে এই হার বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৬৫ শতাংশ। বিশ্বে এই হার বর্তমানে ৪১ শতাংশ ।
মাতৃস্তন্য পান করানোয় মা ও শিশুর জন্য বিশেষ কিছু উপকারিতা রয়েছে। মাতৃস্তন্যপান নবজাতকের আকস্মিক মৃত্যুর ঝুঁকি হ্রাস করে দেয়। শিশুর মাতৃস্তন্যপান মায়েদের হূদরোগ সমস্যা, হাড়ক্ষয়, স্তন ক্যানসার, জরায়ুর ক্যানসারের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। সন্তানকে দুগ্ধ পানে মায়ের প্রচুর ক্যালোরি ক্ষয় হয়, যা প্রায় সাত মাইল পর্যন্ত হাঁটার ক্যালোরি খরচের সমান। ফলে মাতৃস্তন্যদানে মায়েদের মোটা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দূরীভূত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মায়েরা জন্মের পর তাদের শিশুদের বুকের দুধ দেননি তাদের স্তন ক্যানসার, জরায়ুর ক্যানসার, স্থূলতা ও ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ২২ হাজার নারী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয় এবং তাদের ৭০ শতাংশ বিনা চিকিত্সায় মৃত্যু বরণ করেন। আরো একটি আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১১ হাজার ৯৫৮ জন নারীর জরায়ুর ক্যানসার ধরা পড়ে, তাদের মধ্যে ৬ হাজার ৫৮২ জন মৃত্যু বরণ করেন।মায়েদের স্তন্যপানের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। স্তন ক্যানসার, জরায়ু কানসার, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য রোগ থেকে বাঁচতে অবশ্যই সন্তানকে বুকের দুধ পান করাতে হবে। সরকারকে বিভিন্ন সামাজিক পদক্ষেপ গ্রহণ করার মাধ্যমে মায়েদের মধ্যে স্তন্যপান করানোর ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সন্তান এবং নিজের সুস্থতার জন্য প্রত্যেক মাকে স্তন্যপান করাতে হবে।

লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়:
সূত্র-ইত্তেফাক

কবি অলোক আচার্য

সকল পোস্ট : অলোক আচার্য