নীল ভালোবাসা।। নাজমুন নাহার রিনু

নুড়ি নতুন দুটি ঘর তৈরী করেছে। একটু জমি কিনেছে। ভাড়া ঘর ছেড়ে নতুন ঘরে উঠবে। স্বামী তার এসব বিষয়ে মাথা ঘামায় না। স্বামী নিজের চাকরি বন্ধু পরিজন নিয়ে ব্যস্ত থাকে।

নুড়ি তার সন্তানের লালন পালন, সংসার নিয়ে সময় অতিবাহিত করে ও একটি সামান্য বেতনের চাকরিও করে। বিয়ের পর থেকে মনে হয়েছিল স্বামী তার সংসারের প্রতি উদাসীন।

সংসারের কেনো কিছু তার স্বামী মনে ধরে না। বাইরের জগৎ নিয়ে ভালো থাকে। নুড়ির খুব কষ্ট হয়। কি করবে। স্বামীকে যে ত্যাগ করতে পারবে না।
প্রায় রাতে স্বামী মদ্যপান করে আসে। কিছু বললে মারধর করে। আবার রাতে মোবাইল ফোনে চ্যাট ও ফিসফিস করে কথা বলে।

একদিন নুড়ি তার স্বামী হামিদকে বললো-

নুড়ি: তুমি রাতে কার সাথে কথা বলো?
হামিদ: যার সাথে কথা বলি সেটা আমার ব্যাপার।
নুড়ি: রাত জেগে চ্যাট কর। এটা না করে কিছু লেখালেখি করো।
হামিদ: তোর এত কিছু বলা লাগবে না। আমি কিছু করি না।
নুড়ি: এই যে তোমার মোবাইলে চ্যাট করেছো।
হামিদ: এত বড় সাহস তুই আমার মোবাইল ধরিস।

তারপর হামিদ নুড়ির মাজায় প্রচণ্ড জোরে লাথি মার। পীঠে বুকে লাথি মারে। অনেক মারধর করে। পরদিন সকালে নুড়ি বিছানা থেকে উঠতে পারে না। নুড়ি এত মারধর খেয়ে মাজা নিয়ে আর তেমন হাটাচলা করতে পারে না। আস্তে আস্তে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তারপরও স্বামীকে ত্যাগ করে না। নিজের জীবনকে এমন খারাপ মানুষের কাছ থেকে দূরে নিয়ে যেতে পারলো না।
সংসারে মাত্র দুই হাজার টাকা দেয় হামিদ। নুড়ি খুব কষ্ট করে সংসারের খরচ চালায়। ঘর ভাড়া দেয়। নিজে না খেয়ে স্বামীকে খাওয়ায়। এতদিন এভাবেই চলছিল। কিন্তু এখন সে নতুন ঘরে যাবে। নতুন ভাবে সংসারটাকে সাজাবে। মনে তার খুব ভালো লাগা কাজ করছে।

এরপর নতুন ঘরে উঠলো। হামিদও তার সাথে আসলো। ভালো যাচ্ছিলো তাদের ঝগড়াঝাটির জীবন। হঠাৎ একদিন হামিদ অফিস থেকে বাড়ি ফিরেছে। মুখ অন্ধকার। মাথার হাত দিয়ে শুয়ে রইলো। নুড়ি বললো।
নুড়ি: কি হলো? কোনো সমস্যা? শরীর খারাপ লাগছে?
হামিদ: নুড়ি, আমি বিপদে পড়েছি।
নুড়ি: কি হয়েছে?
হামিদ: আমার কলিক রিতুর সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছি। আমরা মেলামেশা করেছি। এখন তার পেটে বাচ্চা। রিতু ওকে বিয়ে করতে বলছে। তা না হলে ও আমার নামে মামলা করবে। এখন আমি কি করবো?
ওকে বিয়ে না করলেতো আমার সমস্যা হবে। তুমি কি বলো?
নুড়ি খুব শান্তভাবে বলে। ‘আমি কি বলবো? তোমার যেটা ভালো লাগে করো।’
পরেরদিন ভোরবেলা হামিদ নুড়ির ঘরে যায়।
দেখে নুড়ি ঘুমিয়ে আছে। অনেক ডাকে ওঠে না। হাত ধরে ডাকে। তখন বুঝতে পারে নুড়ি আর নেই। হাতে একটি চিঠি।

হামিদ,
আমি বেঁচে থেকে মরে ছিলাম। যখন বুঝতে পেরেছি। তুমি কখনো আমাকে ভালোবাসো নি। যদিও আমরা ভালোবেসে বিয়ে করেছিলান।তবে মনে হয় আমাদের ভালোবাসায় ক্ষামতি ছিলো। আমি তোমাকে ভালোবাসা দিয়ে জয় করতে পারি নি বা আমার ভালোবাসায় ঘাটতি ছিলো। আমি পৃথিবীতে থাকলে তোমার জটিলতা বাড়বে। তাই আমি ওপারে গেলাম। বাবুসোনাকে দেখো। ভালো মানুষ করে গড়ে তুলবে।

ইতি
নুড়ি।

কবি নীলকন্ঠ জয়

সকল পোস্ট : নীলকন্ঠ জয়