বহু গুণের অধিকারী নজরুল বাংলা গানে অনন্য এক জ্যোতিষ্ক/আইভি সাহা

বহু গুণের অধিকারী নজরুল বাংলা গানে অনন্য এক জ্যোতিষ্ক। তিনি বাংলা সাহিত্যের সাম্যের কবি, মানবতার কবি, দ্রোহের কবি, প্রেমের কবি, বিদ্রোহী কবি, সংগীত ভুবনের সুমহান অধিপতি, সব্যসাচী লেখক জাতীয় কবি শ্রদ্ধেয় কাজী নজরুল ইসলাম। দারিদ্র্যতাকে নিত্য সংগী করে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বেশি দূর এগোতে পারেনি।  জীবনের ছন্দ পতন হয়েছে বার -বার। কিন্তু ব্যক্তি জীবনে তিনি পড়াশোনা করেছেন প্রচুর। সাহিত্যের সব ভান্ডারে তাঁর অবাধ বিচরণ ছিল। নিজেকে সমৃদ্ধ করেছেন সকল খানে সকল কাজে; সাহিত্যের রস আস্বাদন করেছেন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে।

নানান প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তাঁর মেধা-মনন ও দক্ষতা দিয়ে অবিনশ্বর লেখনীর মাধ্যমে ‘সব্যসাচী নজরুল’ হিসেবে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন । জীবিকার প্রয়োজনে বহু বিচিত্র পেশায় কাজ করে করে  তাঁর চিন্তা, চেতনা ও অভিজ্ঞতার জগৎকে করেছেন আরও বেশী  সমৃদ্ধ।  কবির জীবন ছিল ভীষণভাবে টানাপোড় এবং বহুবিধ অভিজ্ঞতা।

সুখ-দুঃখ, প্রেম-বিরহ, অভাব-অনটন, হাসি-কান্না সব কিছু মিলেমিশে একাকার ছিল কবির জীবনে।
প্রকৃতিপ্রেমিক কবি বৃষ্টি, কদম-কেয়া , বেলী, জুই, চামেলি, পিউকাঁহা, কোকিল, নদ-নদী, সমুদ্র সবকিছু যেন নিজের আপন বলয়ে রেখে কাব্য রচনা করেছিলেন আপন মনের মাধুরি মিশিয়ে।

বাংলা সাহিত্যে কবি নজরুল এর আগমন ছিল উল্কার মতো অন্যায়,  অসত্য, অবিচার, অসাম্যের বিরুদ্ধে চরম বিদ্রোহ নিয়ে । তাই তো কবির লেখনিতে শুনতে পাই, ‘ বল বীর চির উন্নত মম শির’। বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংগীত ও সমাজ সাংস্কৃতির উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন তিনি।

বাঙালী জাতির হৃদয়ে নিজস্ব ইতিহাস- ঐতিহ্যকে ভালোবাসার প্রেরণায় সঞ্চালিত করেছেন। তাই কবি লিখেছেন, ‘গাহি সাম্যের গান/ মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান।’
কবি বাঙালী জাতিকে শেকল ভাঙ্গতে গান শুনিয়ে ছিলেন, “উষার দুয়ারে হানি আঘাত, আমরা আনিব রাঙা প্রভাত, আমরা টুটাব তিমির রাত, বাধার বিন্দ্যাচল ‘
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কবির গান, কবিতা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ছিল শক্তি ও অনুপ্রেরণা।  স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচারিত হয়েছে তখন, “দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার, লঙ্ঘিতে  হবে রাত্রি নিশীথে যাত্রীরা হুঁশিয়ার।’ কিংবা ‘চল চল চল উর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল…’। ‘কারার ঐ লৌহকপাট ভেঙে ফেল কর রে লোপাট’। আরো অনেক গান ছিল তখন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য উজ্জীবনী শক্তি ও সাহস হিসেবে।

কবি একাধারে গজল, শ্যামা সংগীত,  দেশাত্মবোধক, আধুনিক, ইসলামিক সংগীতসহ সব ধরনের গান রচনা করেছেন। যা তিনি নিজেই সুর দিতেন ও গাইতেন। তিনি আধুনিক বাংলা গানের রসতত্ত্বে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। যা কিছু গানের মধ্যে আছে, তার সব কিছুই নজরুল ভান্ডারে আছে। যা কিছু নজরুলে নেই, তা গানেও নেই। কী বাণী কী সুর! তার গানে ও কাব্যে আছে বিপুল প্রাণাবেগ, আছে সাম্য, মৈত্রী, ও মানবতার জয়গান।

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে লেখার কোনো শেষ নেই। আমার এই লেখাটির মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে এবং আমার সন্তানকে জানাতে চাই, জাতীয় কবির চিরন্তনী বাণী ও সুর এবং  লেখাগুলোকে যেন চর্চা করে সঠিক ভাবে।
কবির প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী  উপলক্ষ্যে আমার এই  ক্ষুদ্র প্রয়াসটুকু কবির প্রিয় একটি গানের চরণ দিয়ে শেষ করছি

‘ভুলি কেমনে আজও যে মনে
বেদনা সনে রহিল আঁকা
আজও সজনী দিন রজনী
সে বিনে গোনি সকলই ফাঁকা’

তারিখঃ ২৪/ ৫/ ২০২২