বাঁকা চাঁদ এলো ঈদের খুশি নিয়ে।। মাহমুদা রিনি

ঈদের আনন্দ শুরু হয় চাঁদ দেখার মধ্য দিয়ে, একমাস রোযা পালনের পর নতুন চাঁদ দেখার মধ্য দিয়ে ঈদের সূচনা হয় এবং জনজীবন মেতে ওঠে খুশির জোয়ারে। সামর্থ্য অনুযায়ী ঘরে ঘরে তৈরি হয় নতুন সব সুস্বাদু খাবারের আয়োজন। যারা জীবিকার প্রয়োজনে বাইরে থাকে তাদের ঘরে ফেরার আনন্দ অপরিসীম। আত্মীয় পরিজনের সাথে মিলিত হওয়া আনন্দের অনুভূতিই অন্যরকম। আর সবচেয়ে বেশি উপভোগ্য হলো শিশুদের ঈদ আনন্দ। শিশুরা ঈদের দিন নতুন নতুন কাপড় পরে ঘুরে বেড়ানো , বড়দের সালাম করে সালামি পাওয়া, ভাই- বোন, বন্ধুদের কার কত সালামি হলো তার হিসেব নিয়ে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে থাকে সারাদিন। শিশুদের পাশাপাশি বড়োরাও সামিল হয় সেই আনন্দে।

মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের ঈদ আনন্দ চিরায়ত। তারপরও সময় ভেদে ঈদ উদযাপনের পদ্ধতিতে এসেছে ভিন্নতা। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বা তার আগে পরে আমাদের গ্রামাঞ্চলে ঈদ ছিল ভিন্নধারায় উৎসব মুখর। কয়েকটি গ্রাম মিলে একটি জাময়াতের আয়োজন হতো। এতো জনসংখ্যাও তখন ছিল না। ঈদের জামায়াতকে ঘিরে তৈরি হতো গ্রামীণ মেলা। নানান প্রকারের মিষ্টি সহ লেসফিতা, চুড়িমালা বা বিভিন্ন ধরনের খেলনা সহ পসরা সাজিয়ে আয়োজন হতো। ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে সকলের প্রধান আকর্ষণ ছিল সকাল বেলা নতুন পোশাক পরে ঈদগাহ মাঠে মেলায় যাওয়া। একপাশে ঈদের জামায়াত হতো আর আসেপাশের মেলা ঘিরে ছেলে মেয়েরা মেলায় ঘোরাফেরা করে বেড়াতো। মেয়েরা কিনতো চুড়ি ফিতা, পুতুল সহ বিভিন্ন ধরনের খেলনা, ঘর সাজানো টুকিটাকি সরঞ্জাম কিনত। ছেলেরা যথারীতি নানান ধরনের খেলনা যেমন লাটিম, মার্বেল, ঘুড়ি লাটাই, খেলনা পিস্তল এইসব কেনায় ব্যস্ত থাকতো। আর এইসব সামগ্রী কিনতে অর্থের প্রধান উৎস হলো সালামি। ঈদের মেলা থেকে কী কী কিনতে হবে তার বাজেট নির্ধারণ হতো কে কত সালামি পাবে তার উপর! ছোটদের ঈদ আনন্দের প্রধান আকর্ষণ ছিল বা এখনো আছে তা হলো ঈদের সালামি। তুলনামূলক ছোটোরা বড়দের পা ছুঁয়ে সালাম করা এবং সালামি আদায় করা এটাই ছোটোদের ঈদ আনন্দের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। সালামির পরিমাণ স্থান কাল- পাত্র ভেদে দুইটাকা থেকে দুইহাজার বা ইচ্ছামতোও হতে পারে। সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুর বদল হলেও সালামির ব্যাপারটা বেশ আকর্ষণীয় ভাবেই চলে আসছে। বর্তমান সময়ের গ্রাম বা শহর সব জায়গাতেই ঈদ উৎসবের ধরণ অনেকাংশে বদলে গেছে।

ঈদের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গেলে বর্তমান সময়ে ঈদে সাধারণ মানুষকে যে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয় বা হচ্ছে প্রতিনিয়ত, তাকে পাশ কাটিয়ে নিরবিচ্ছিন্ন আনন্দ উৎসব করা সম্ভব নয়। কিছু বিষয়ে ভোগান্তি যেন ঈদের সাথে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে গেছে, যার অত্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে সমাধান প্রয়োজন ছিল, কিন্তু আমরা তা করতে বরাবরই ব্যর্থ হয়েছি। ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের ভোগান্তির দৃশ্য আমাদের গাসওয়া হয়ে গেছে। আছে সড়ক দুর্ঘটনার ভয়, প্রতি বছর শুধু ঈদের সময়ই সড়ক দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ প্রাণহানি হয় তা ভাবলেও শিউরে উঠতে হয়। অসংখ্য মৃত্যুর ঘটনা ঘটে সড়ক দুর্ঘটনায়। তারপর এবছর সব ভোগান্তির উপরে খাঁড়ার ঘা হয় দাঁড়িয়েছে দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত বৃদ্ধি। অতি প্রয়োজনীয় প্রায় সকল ধরনের দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এবং লাগামহীন গতিতে বেড়েই চলেছে। সয়াবিন তেল বাজার থেকে উধাও হওয়ার পথে।
ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়ার মতো ঈদ আনন্দের মধ্যে এই ক্রমাগত জনভোগান্তির কথা অপ্রাসঙ্গিক মনে হলেও এই সকল অস্বস্তি, অপারগতা বা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই মানুষকে খুশির ঈদ পালন করতে হচ্ছে। উৎসব, লোকলৌকিকতা বা সামাজিকতা এমনই একটি বিষয় যা কোনোভাবেই এড়িয়ে যাওয়া যায় না। যে কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে মধ্যবিত্ত পরিবারের অবস্থা হয় সবচেয়ে শোচনীয়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির এই চাপ সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছে মধ্যবিত্ত শ্রেণির সাধারণ মানুষেরকে। রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ধকল কাটিয়ে স্বস্তিদায়ক ঈদ উদযাপন অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের জন্য।

যাইহোক একমাস রোজা পালনের পর ঈদ আমাদের জীবনে আনন্দের বারতা বয়ে আনে। আশা করি সকল প্রতিকূলতা কাটিয়ে আমরা যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী ঈদ আনন্দে মেতে উঠবো। কামনা করি এবছর ঈদ উপলক্ষে বাড়ি ফেরা মানুষের জীবন হোক নিরাপদ। নির্বিঘ্নে তারা আবার কর্মস্থলে ফিরে যাক। সকল বাধা বিঘ্ন পেরিয়ে এবারের ঈদ শিশুদের মনোজগতে আনন্দস্মৃতি হয়ে থাকুক। সকলের জন্য অফুরন্ত শুভকামনা ও ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।

কবি নীলকন্ঠ জয়

সকল পোস্ট : নীলকন্ঠ জয়