বিজয়ের ৫১ বছর; সম্মিলিত প্রয়াসে স্মার্ট উন্নত বাংলাদেশ

অলোক আচার্য –স্বাধীনতা তুমি/রবি ঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান/স্বাধীনতা তুমি/কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো- কবি শামসুর রাহমানে স্বাধীনতা নিয়ে বিখ্যাত এই কবিতাটির প্রতিটি লাইন মনে করিয়ে দেয় স্বাধীনতা আসলে কি। স্বাধীনতা মানে মুক্তি। মন ও শরীর উভয়ক্ষেত্রেই স্বাধীনতা প্রয়োজন। একটি পরাধীন জাতি,গোষ্ঠী এমনকি একজন পরাধীন মানুষের কাছে বহু কাঙ্খিত শব্দটির নাম স্বাধীনতা। এক নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের মধ্যে দিয়ে যে বর্বরতার সূচনা হয়েছিল ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত থেকে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্মমতা শুরু হয় নিরস্ত্র বাঙালির ওপর। নিষ্পেষণ, নির্যাতন,জুলুম,ধর্ষণ আর লুটপাটের বিভীষিকাময় অবস্থায় দীর্ঘ নয় মাস পর এই ডিসেম্বরেই বাঙালির চূড়ান্ত বিজয় আসে। পৃথিবীর বুকে একটি নতুন দেশের জন্ম হয়। একটি দুটি করে ৫০টি বছর এই দেশের পেরিয়ে গেছে। আমাদের অর্জন এবং আমাদের ব্যর্থতাগুলো চোখ মেললেই চোখের সামনে ষ্পষ্ট হয়ে ওঠে? স্বাধীনতার অর্ধশত বছরে আমাদের অর্জন যে দৃশ্যনীয় তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। উন্নয়নের সব সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী। পাশাপাশি কিছু সামাজিক প্রতিবন্ধক আমাদের উন্নয়নকে সমালোচিত করছে। যার দায় মূলত আমাদেরই। অর্থনীতি,শিক্ষা,কৃষি,তথ্য-প্রযুক্তি,অবকাঠামো খাতে দেশ অগ্রসরমান। পদ্মাসেতু হয়েছে। যোগাযোগ ক্ষেত্রে বিপ্লব এসেছে। করোনাকালে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, থেমে যায়নি। বরং অন্য অনেক দেশের তুলনায় বেশ ভালো চলেছে।
আমরা একটি দুর্নীতিমুক্ত দেশ চাই। এটা সকলের চাওয়া হতে হবে। আমরা যা এই অর্র্ধশত বছরেও অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছি। সমাজের প্রতিটি স্তরে ছেয়ে আছে দুর্নীতি। ঘুষ, কালো টাকা,ভেজাল,প্রতারক সমাজের সর্বত্র চষে বেরাচ্ছে। যেখানে স্বাধীনতার স্বপ্ন ম্লান হচ্ছে যেখানে স্বাধীনতার স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। যে স্বাধীনতা ত্রিশ লক্ষ্য প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে সেই স্বাধীনতার স্বাদ সবাই সমানভাবে পাবে না তা হয় না। এই যে দেশে এত এত দুর্নীতির খবর প্রকাশ হয় এসব কেন হয়? আমরা কি কেউ দেশটাকে দুর্নীতিমুক্ত করার স্বপ্ন দেখছি? হয়তো কেউ কেউ তা দেখছি? স্বপ্ন কেবল নিজের জন্য না দেখে দেখতে হবে দেশের জন্য। দেশ যদি উন্নত হয়,দুর্নীতিমুক্ত হয়,অর্থনীতি গতিশীল হয় তাহলে লাভ আমাদেরই। আমরাই তার সুবিধা ভোগ করবো। এই যে পদ্মা সেতু আমরা ব্যবহার করবো তার সুফল ভোগ করবে দেশের সব নাগরিক। দেশের অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসবে, মানুষের জীবনযাত্রা পাল্টাতেও ভূমিকা রাখবে। গতি আসবে মানুষের জীবনে। আমরা বিশ^ দরবারে নিজেদের সামর্থ্য, প্রত্যয় জানান দিয়েছি। পশ্চিম পাকিস্থানীদের নিষ্পেষণে আমরা স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলাম। তখন পূর্ব পাকিস্থানের মানুষের চোখে একমাত্র স্বপ্ন ছিল এই নির্যাতনের হাত থেকে, বৈষম্যের হাত থেকে মুক্ত হওয়া।
ধর্মীয় স¤িপ্রতির এক অনন্য উদাহরেণর নাম বাংলাদেশ। সেই আদিকাল থেকেই এদেশে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান পাশাপাশি হাত ধরে বসবাস করে আসছে। স্বাধীনতার পর থেকেও একই পতাকার নিচে আমরা সবাই আজ বসবাস করছি। আমরা চাই না এদেশে সা¤প্রদায়িকতার বিষবাস্প ঘিরে ফেলুক। সব ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী যেন শান্তিতে বসবাস করতে পারে। স্বাধীনতার এটাও উদ্দেশ্য। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার স্বপ্ন। এদেশে কেউ ক্ষুধার্ত থাকবে না, দুর্নীতি থাকবে না, ধর্ষণ থাকবে না, ভয় থাকবে না। তাহলে দেশ একদিন সত্যিকারের সোনার বাংলা গড়ে উঠবে। সোনার বাংলা গড়তে আমাদের একটি সুন্দর দেশ গঠনের স্বপ্ন দেখতে হবে। দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে গড়ে তোলার জন্য আমাদের সবাইকে সৎ ও পরিশ্রমী হতে হবে। এছাড়া স্বাধীনতার স্বপ্ন অধরা থেকে যাবে। উন্নয়ন ও সামাজিক শৃঙ্খলা একে অপরের পরিপূরক। আজ আমাদের যে অগ্রগতি তা এক রুপকথা। যে পাকিস্তান আমাদের থামাতে চেয়েছিল তারাও আমাদের পেছনে। কিছু ঘটনা রয়েছে যা আমাদের উন্নয়নের গতি ¯øথ করে। সে জায়গাগুলোত কাজ করতে হবে। সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।

কবি অলোক আচার্য

সকল পোস্ট : অলোক আচার্য