বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে র‍্যাংকিং পদ্ধতি প্রয়োজন //সানজিদা মাহমুদ মিষ্টি

শিক্ষা হলো ব্যক্তির আচরণের ইতিবাচক পরিবর্তন। শিক্ষার কয়েকটি ধারা রয়েছে, যার মধ্যে উচ্চশিক্ষা একটি প্রধান ধারা। উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা শেষ করে শিক্ষার্থীদের একটি যোগ্যতা মূল্যায়নকারী পরীক্ষার মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার স্তরে প্রবেশ করতে হয়। এই স্তরে পড়াশোনা অন্যান্য স্তরের পড়াশোনা থেকে একটু আলাদা এবং স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। কারণ এই স্তরের পড়াশোনায় শিক্ষার্থীরা নিজেদের সুবিধামতো গবেষণা করার সুযোগ পেয়ে থাকে।

আমাদের দেশের উদীয়মান অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অনেকাংশে উচ্চশিক্ষার ওপর নির্ভরশীল। আমাদের দেশের উচ্চশিক্ষায় গুণমান বৃদ্ধির জন্য গবেষণার পাশাপাশি প্রতি বছর পদ্ধতিগত বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিং ব্যবস্থার গুরুত্ব অনেক বেশি। ইউনেসকোর মতে, উচ্চশিক্ষা স্তরের গবেষণায় জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় সব ধরনের শিক্ষা প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত হবে, যা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষকবৃন্দ প্রদান করবেন। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য অধিভুক্ত কলেজসমূহ, যেগুলোতে উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ রয়েছে, সেগুলোতেও অনেক বেশি পরিমাণে গবেষণা করার সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা উচিত। পাশাপাশি নতুন নতুন গবেষকদের গবেষণায় আগ্রহ বৃদ্ধির জন্য নানাভাবে উত্সাহ প্রদান করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর তথ্যমতে, দেশে সরকারি ৪৯টি, বেসরকারি ১০৪টি এবং আন্তর্জাতিক ২টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার হার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় অনেকটা বেশি। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে খুব একটা পিছিয়ে রয়েছে এমনটি নয়। পাশাপাশি প্রতি বছর নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রজ্ঞাপন জারি, পুরাতন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জায়গা সম্প্রসারণ, উচ্চশিক্ষার স্তরের উন্নয়নের জন্য গবেষণার মান উন্নয়ন করা, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার চাহিদা নিরূপণ করা, উচ্চশিক্ষার উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে প্রতি বছর ইউজিসি নানা ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে জার্নাল প্রকাশ করে থাকে, যাতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা গবেষণার দিকে আরো বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠে।

গবেষণায় বিবেচ্য বিষয়গুলো হলো প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামোগত সুবিধা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব সুনামও অনেক বড় একটা বিষয়। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যার চতুর্থ ও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূচক হলো শিক্ষা। বর্তমান সরকার শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী প্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞান অর্জন, বৈশ্বিক চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভাবনমূলক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষাদানে সম্পৃক্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আধুনিকভাবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। পৃথিবীর অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন তাদের গবেষণার মানকে ত্বরান্বিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের র্যাংকিং পদ্ধতি চালু আছে, পক্ষান্তরে বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণা পদ্ধতি ত্বরান্বিত করার জন্য তেমন কোনো র্যাংকিং পদ্ধতি এখনো পর্যন্ত চালু হয়নি। যদি এই র্যাংকিং পদ্ধতি চালু থাকত, তাহলে বাংলাদেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার মানের আরো বেশি উন্নয়ন সম্ভব হতো। গুণগত মানসম্পন্ন পাঠদান নিশ্চিতসহ শিক্ষার অন্যান্য ক্ষেত্রের মান বজায় রাখতে অবশ্যই গবেষণা পদ্ধতির উন্নয়ন জরুরি। একটি দেশে যথার্থ গবেষণার পদ্ধতি না থাকলে সেই দেশের উচ্চশিক্ষা এগিয়ে নেওয়া যায় না। আবার শুধু একনাগাড়ে গবেষণা করে গেলেই হবে না, বরং অনেকগুলো মানদণ্ডের ভিত্তিতে গবেষণাগুলোর যাচাই-বাছাই করা উচিত। এভাবে মানদণ্ডের ভিত্তিতে যদি গবেষণাগুলো যাচাই-বাছাই করা হয়, তাহলে একদিকে যেমন গবেষণালব্ধ একটি ভালো ফলাফল পাওয়া যায়, ঠিক তেমনিভাবে পূর্বের গবেষণা থেকে ভুলগুলো শুধরে নেওয়া যায়।

বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির কারণে গবেষণা প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করা অনেক বেশি সহজতর হয়ে গেছে। এক দেশে বসে অন্য দেশের শিক্ষকদের সঙ্গে মিলিত হয়ে গবেষণাকাজে অংশগ্রহণের সুযোগ পাওয়া যায়। তথ্যপ্রযুক্তির কারণে গবেষণাকাজে অংশগ্রহণ করে নানা ধরনের সার্টিফিকেট পাওয়া যায়। এ ধরনের সার্টিফিকেট গবেষণাকাজে অংশগ্রহণ করার জন্য অনেক বেশি উত্সাহ সৃষ্টি করে। অন্যান্য দেশের গবেষণা পদ্ধতির মাধ্যমে আবার অনেক নতুন নতুন জিনিস জানা যায়। এসব গবেষণার ফলাফল ব্যবহার করে আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে আরো বেশি মানসম্মত করে তোলা সম্ভব। তাই আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণায় অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে সরকারের পাশাপাশি ইউজিসিকে আরো বেশি সচেষ্ট হতে হবে।

লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

কবি অলোক আচার্য

সকল পোস্ট : অলোক আচার্য