শহর থেকে দূরে।। মধুবন্তী আইচ

ভোরের আবছা আলোয় বাড়ির দরজার তালাটা খুলতেই খুব চেনা একটা ডাক কানে এলো ‘আজ্জু দা’! পিছনে ঘুরে আজান দেখলো সুনয়না আর সতীশ জ্যেঠু দাঁড়িয়ে!

বছরখানেক পরে অনেকটা পথ পাড়ি দেওয়ার ধকল আর ভোরবেলার এই বিস্ময়ের জের একসাথে নিতে না পেরে আজান বাড়ির দাওয়াতেই ধপ্ করে বসে পড়ে কোনোরকমে জিজ্ঞেস করলো, ‘আঁখি তুই! কেমন আছিস?’ খুব পরিচিত সেই খিলখিল হাসিটা হাসতে হাসতে সুনয়না জানতে চাইলো, কী ভেবেছিলে আজ্জু দা? এই একবছর পর ছেলে কোলে গোলগাল হয়ে ফিরবো!’
এক দমকা হাওয়ায় উঠোনের দিক থেকে উড়ে এলো একরাশ লাল কৃষ্ণচূড়া… হঠাৎ কিছু ফিরে পাওয়ার উচ্ছ্বাসে নাকি কিছু হারিয়ে ফেলার শূণ্যতা মনে করাতে, আজান ঠিক অনুভব করতে পারলোনা…!।

সেইদিন বিকেলে ধেয়ে আসা কালবৈশাখীতে চারিদিক অন্ধকারে ঢেকে গিয়ে, গ্রামের রাস্তায় লাল ধুলো উড়িয়ে অবশেষে যখন এক ফোঁটা দু’ ফোঁটায় মাটি ভিজতে লাগলো, তখন ভাঙ্গা শিব মন্দিরের পাশে আমবাগানে আজানের হাতের মুঠোয় ধরা পড়লো একটা ডুড়ে আঁচল যেটা একবছর আগে এইরকমই এক ঝড়ে উড়ে চলে গেছিলো অন্য কারুর সাথে গাঁটছড়ায়।
‘আর একটু অপেক্ষা কেন করলি না আঁখি?’
কোঁচরে ধরা আমগুলো নাড়াচাড়া করতে করতে উত্তর এলো, ‘করেছিলাম তো! পুরো ছ’ টা মাস! কিন্তু তারপর অভিমানে আর জেদ করে ভেবেছিলাম চিঠির উত্তর না পাওয়া, কাছের মানুষ টা’র দূরে চলে যাওয়ার কষ্টটা কাউকে ফিরিয়ে দিয়ে নিজে খুব ভালো থাকবো…!’

চুপকথাদের অগুনতি পল – অনুপল সীমানা পার হয়ে, শেষ বিকেলের মরে আসা আলোয়, আমবাগানের আলো-আঁধারিতে একরাশ নিস্তব্ধতার মাঝে ভেসে আসা আজানের মন খারাপ-করা সুর মিশে যেতে লাগলো অঝোরে ঝরে যাওয়া বৃষ্টিকণাদের সাথে…!

কবি নীলকন্ঠ জয়

সকল পোস্ট : নীলকন্ঠ জয়