শামসুর রাহমান : কবিতায় স্বাধীনতা, কবিতায় মুক্তি


আধুনিক কবিদের মধ্যে দেশের প্রধানতম কবি হিসেবে গণ্য কবি শামসুর রাহমান। বাংলা কবিতকে যিনি এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। শামসুর রাহমানের কবিতায়, ছড়ায় রয়েছে স্বকীয়তা। যার লেখায় রয়েছে প্রতিবাদ, অন্যায় আর নিপড়নের বিরুদ্ধে অবস্থান। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর গণহত্যা, অত্যাচার, নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আর ঘৃণা নিয়ে বহু সাহিত্য রচিত হয়েছে। নাগরিক কবি বলে পরিচিত ”অভিশাপ দিচ্ছি” কবিতাটি সেই গণহত্যাকারীদের প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ পেয়েছে। কবিতার প্রতিটি চরণ এক একটি প্রতিবাদ। প্রতিটি শব্দ যেন পাকবাহিনীর অত্যাচারের প্রতি নির্দশ করে।

কবি শামসুর রাহমান আধুনিক প্রধানতম কবিদের ভেতর গণ্য। কবি হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত। স্বাধীনতা নিয়ে যত কবিতা, গল্প রচিত হয়েছে তার মধ্যে শামসুর রাহমানের ‘স্বাধীনতা তুমি’ এবং ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’ কবিতা দুটির বৈশিষ্ট্য অনবদ্য।

কবি শামসুর রাহমান ২৩ অক্টাবর ১৯২৯ সালে পুরান ঢাকার মাহুতটুলিতে জন্মগ্রহণ করন। সেখানে তার নানাবাড়ি। কবি শামসুর রাহমানরা ১৩ ভাইবান ছিলেন। পেশায় ছিলেন সাংবাদিক ছিলেন। ১৯৫৭ সাল দৈনিক মর্নিং নিউজ-এ সহ-সম্পাদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। তারপর চাকরি নেন রেডিও পাকিস্তান এবং এরপর আবার আগের কর্মস্থলে ফিরে আসেন। তারপর কবি আরও কয়েকটি পত্রিকায় গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।

তিরিশের দশকে শক্তিমান পাঁচ কবির পর তিনি আধুনিক বাংলা সাহিত্যর কবিতার প্রধান পুরুষ হিসেবে প্রসিদ্ধ। মানুষের ওপর জুলুম নির্যাতন কবিকে বিদ্ধ করতো। তিনি শাসকদের রক্তচক্ষুকে ভয় করেননি। তার কলম প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে বারবার। বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা এবং আসাদের শার্ট এসব প্রতিবাদী কলমের উপস্থাপনা। তার কবিতাগুলো আজও আমাদের সেদিনের কথা মনে করিয়ে দেয়। ১৯৭০ সালের ২৮ নভম্বর সেই ভয়াল ঘূর্ণিঝড় বিধস্ত সে এলাকার লাখ লাখ মানুষের দুঃখ দুর্দশা ও মৃত্যুতে কাতর কবি লিখছিলেন ’আসুন আমরা আজ ও একজন জল’ নামক কবিতা।
শামসুর রাহমান সর্বজন শ্রদ্ধেয় কবি। কবির কবিতায় অধিকাংশ সময় ফুটে উঠেছে যান্ত্রিক শহরর একঘয় ক্লান্তি এবং নাগরিক জীবনর সব উপাদান। স্বাধীনতা তুমি কবিতায় স্বাধীনতাক বিভিন্নভাবে বর্ণনা করছন। কাথাও স্বাধীনতাক ব্যাখ্যা করা হয়ছে সরলভাবে। স্বাধীনতা তুমি ফসলর মাঠ কষকর হাসি। মাঠ ভরা ফসল বাংলার চিরায়তরূপ। এই চিরায়ত রূপকেই তিনি কবিতায় স্বাধীনতার উপজীব্য করেছন। মাঠ ভরা ফসল দেখে কৃষক যখন আনদিত হয়, তার পরিশ্রমের ফসল মাঠে বাতাস মাথা দোলাত দেখে যে সেই আনদঘন মুহূর্ত স্বাধীনতা।
তার বহু প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্য রয়ছ ’প্রথম গান দ্বিতীয় মত্যুর আগে, রৌদ্র করোটিতে, বিধ্বস্ত নিলীমা, নিরালোকে দিব্যরথ, ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা, এক ধরনের অহংকার, বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে, প্রতিদিন ঘরহীন ঘরে, অদ্ভুত উটের পিঠে চলছে স্বদেশ, বন্দী শিবির থেকে, দুঃসময়ের মুখোমুখি, আমি অনাহারী, দেশদ্রোহী হতে ইচ্ছে করে, মাতাল ঋত্বিক, খুব বেশি ভালো থাকতে নেইসহ আরও বহু কবিতাগ্রন্থ তিনি রচনা করেছেন। তিনি মূলত কবি হিসেবে পরিচিত পেলেও তিনি উপন্যাসও লিখেছেন। তার লেখা উপন্যাসগুলো হলো- অক্টোপাশ, অদ্ভুত আঁধার এক, নিয়ত মন্তাজ এবং এলো সে অবেলায়। এছাড়াও রয়েছে প্রবন্ধগ্রন্থ,অনুবাদ কবিতা, শিশু-কিশোর সাহিত্য, অনুবাদ নাটক।

কবি শামসুর রাহমান বাংলা একাডমি পুরস্কার,একুশ পদক, স্বাধীনতা পদকসহ বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

অলোক আচার্য
সাংবাদিক ও লেখক।

কবি নীলকন্ঠ জয়

সকল পোস্ট : নীলকন্ঠ জয়