সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের পঞ্চম প্রয়াণ দিবস

সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের পঞ্চম প্রয়াণ দিবস আজ। ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ৮০ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন দেশবরেণ্য এ লেখক।

সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের পঞ্চম প্রয়াণ দিবস আজ। ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ৮০ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন দেশবরেণ্য এ লেখক।

কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প, অনুবাদ তথা সাহিত্যের সকল শাখায় সাবলীল পদচারণার জন্য তাকে সব্যসাচী লেখক বলা হয়। তাঁর লেখকজীবন প্রায় ৬২ বছর ব্যাপী বিস্তৃত। সৈয়দ শামসুল হক মাত্র ৩১ বছর বয়সে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেছিলেন। বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়া সাহিত্যিকদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে কম বয়সে এ পুরস্কার লাভ করেছেন। এ ছাড়া বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক এবং ২০০০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।

বাংলা সাহিত্যের এমন কোনও শাখা নেই, যা তাঁর সৃষ্টিতে সমৃদ্ধ হয়নি। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, কাব্যনাট্য, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, শিশু-কিশোরসাহিত্য, সায়েন্স ফিকশন, সাহিত্য-কলাম, অনুবাদ, আত্মজীবনী, স্মৃতিকথা, ভ্রমণকাহিনি—সব ক্ষেত্রেই তাঁর সদর্প পদচারণা। আশি বছরের বর্ণাঢ্য জীবনে সব সময় সন্ধান করেছেন সাহিত্যের নতুন প্রকরণ। গল্পপ্রবন্ধ, গল্পপট, গাথাকাব্য-এর মতো নিজস্ব সাহিত্যশাখা তৈরি করেছেন। সাহিত্যকর্মের সমান্তরালে রচনা করেছেন স্মরণীয় কিছু চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য এবং কালজয়ী বাংলা গান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতোই তাঁর সৃষ্টিপ্রতিভা বিস্তৃত হয়েছে চিত্রকর্মেও। নিজের বেশকিছু রচনার ইংরেজি অনুবাদও করেছেন তিনি।

কর্কটরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত শেকসপিয়রের ‘হ্যামলেট’ বাংলায় রূপান্তরসহ লিখে গেছেন তিনটি কবিতার বই, একটি গল্পের বই এবং ‘ভাবনার ডানা’ নামের ব্যতিক্রমী ভাবনাগুচ্ছ।

এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম বয়সে বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক তিনি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপ্ত না করে পৃথিবীর পাঠশালায় শিক্ষিত হয়েছেন; আজ দেশ-বিদেশে তিনি নিজেই প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণার বিষয়। ‘সব্যসাচী’ অভিধায় অভিষিক্ত সৈয়দ শামসুল হকের মঞ্চনাটক ‘নূরলদীনের সারাজীবন’, ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশে মঞ্চস্থ হয়েছে। তাঁর কাব্য ‘পরানের গহীন ভিতর’ বাংলা কবিতার অমৃত সম্পদ। তাঁর বড়গল্প ‘রক্তগোলাপ’ বিশ্বসাহিত্যের জাদুবাস্তব ধারার পথিকৃৎ সংযোজন। তাঁর উপন্যাস ‘খেলারাম খেলে যা’ আঙ্গিক ও বিষয়শৈলীতে এক সাহসী উপস্থাপনা; একই সঙ্গে ‘নিষিদ্ধ লোবান’, ‘নীল দংশন’ বা ‘বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ’ উপন্যাস বাঙালির মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেছে অনন্য ব্যঞ্জনায়। তাঁর প্রাবন্ধিক গদ্যগ্রন্থ ‘মার্জিনে মন্তব্য’, ‘কথা সামান্যই’ এবং ‘হৃৎকলমের টানে’ গোটা বাংলা সাহিত্যের পরিপ্রেক্ষিতেই অভিনব। বাংলা সাহিত্যের ভূগোলে তিনি ‘জলেশ্বরী’ নামের কল্পিত ভূখণ্ডের স্রষ্টা। সমস্ত অন্যায়-অসাম্য ও অবিচারের বিরুদ্ধে তিনি ‘জাগো বাহে কোনঠে সবাই’ বলে জাগরণের ডাক দেন।

সৈয়দ শামসুল হক ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন ও মা হালিমা খাতুন। সৈয়দ হক তাঁর বাবা-মায়ের আট সন্তানের জ্যেষ্ঠতম। সৈয়দ হক প্রথিতযশা লেখক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হককে বিয়ে করেন। তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে।

২০১৬ সালের ১৫ এপ্রিল ফুসফুসের সমস্যা দেখা দিলে তাঁকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়। লন্ডনের রয়্যাল মার্সডেন হাসপাতালে পরীক্ষায় তাঁর ফুসফুসে ক্যানসার ধরা পড়ে। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি দেন। চার মাস চিকিৎসার পর ২ সেপ্টেম্বর তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

বাংলা সাহিত্য অঙ্গনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক।

কবি নীলকন্ঠ জয়

সকল পোস্ট : নীলকন্ঠ জয়