সূর্য এর দীপ্ত মান এ টি এম শামসুজ্জামান //রহিম ইবনে বাহাজ


বাংলাদেশের চলচ্চিত্র, নাটক এবং বিনোদন ভুবনের একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র সূর্য এর দীপ্ত শক্তি মান অভিনেতা আবু তাহের শামসুজ্জামান তাঁর সংক্ষিপ্ত নাম এ টি এম শামসুজ্জামান এই নামেই বেশি পরিচিত শুধু অভিনেতা নয় একাধারে কাহিনিকার,গল্পকার,সংলাপ রচয়িতা, এবং পরিচালক।
একটা মানুষ বিনোদন দুনিয়ায় কত জায়গায় তাঁর বিচারণ
বাংলাদেশ সিনেমা প্রেমীদের খুব পরিচিত একটি নাম এ টি এম শামসুজ্জামান
তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন হয়না,চলচ্চিত্রে সফলতা অর্জনের জন্য পেয়েছেন অনেক পুরস্কার, সম্মাননা।

আজ ১০ সেপ্টেম্বর ১৯৪১ সালে আজকের এই দিনে নোয়াখালী দৌলতপুর নানা বাড়ীতে জন্ম গ্রহণ করেন।
তাঁর গ্রামের বাড়ী লক্ষীপুর জেলার ভোলাকোটের বড় বাড়ী,
আর ঢাকায় থাকতেন দেবেন্দ্রনাথ দাস লেনে,
তাঁর পিতার নাম নূরজ্জামান, তিনি নামকরা উকিল ছিলেন এবং শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এর সঙ্গে রাজনীতি করতেন।
এ টি এম শামসুজ্জামান এর মায়ের নাম নূরুন্নেসা বেগম।
পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে শামসুজ্জামান সবার বড়।
তিনি ঢাকায় পগোজ স্কুল , কলেজিয়েট স্কুল, রাজশাহী লোকনাথ হাই স্কুলে পড়াশোনা করেছেন।
পগোজ স্কুলে পড়াশোনা কালে তাঁর বন্ধু ছিল আরেক অভিনেতা প্রবীর মিত্র।
এবং ময়মনসিংহ সিটি কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেন পাশ করেন
তারপর জগনাথ কলেজে ভর্তি হন। ১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরী র বিষকন্যা চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসাবে কাজ শুরু করেন

এ টি এম শামসুজ্জামান চলচ্চিত্রে আগমন হয় ১৯৬৫ সালের দিকে, তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র “নয়া জিন্দগানী ” মুক্তি পায়নি
১৯৬৮ সালে পরিচালক নারায়ণ ঘোষ মিতার পরিচালনা ” এতো টুকু আশা” চলচ্চিত্রে তাঁকে খবরের কাগজ বিক্রেতা চরিত্রে পর্দায় প্রথম বারের মতো দেখা যায়,এরপর তিনি সোয়োরাণী দোয়োরাণী (১৯৬৮) মলুয়া (১৯৬৯) বড় বউ(১৯৭০) ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন, তিনি মলুয়া চলচ্চিত্রে সংলাপ রচয়িতা করেন।
তিনি প্রথম কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছেন জলছবি (১৯৭১) চলচ্চিত্রের জন্য।
ছবির পরিচালক ছিলেন নারায়ণ ঘোষ মিতা এবং এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমেই অভিনেতা ফারুক এর অভিষেক হয়
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমি তে নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ওরা ১১ জন ( ১৯৭২) এবং জীবনী মূলক লালন ফকির (১৯৭২)চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন
দ্বিতীয় চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি প্রথম বাচসাস পুরস্কার পান। চলচ্চিত্র কার আমজাদ হোসেন এর “নয়ন মণি” চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে অভিনয় আলোচনায় আসেন।
এ টি এম শামসুজ্জামান অভিনয়ের জন্য আজীবন সম্মাননা সহ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ৬ বার তন্মমধ্য দায়ী কে(১৯৮৭)চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনয় বিভাগে ম্যাডাম ফুলি ( ১৯৯৯) চুড়িওয়ালা (২০০১) ও মন বসেনা পড়ার টেবিলে (২০০৯) চলচ্চিত্রে অভিনয় এর জন্য শ্রেষ্ঠ কৌতুক অভিনেতা বিভাগে এবং চোরাবালি (২০১২) চলচ্চিত্রে পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে পুরস্কৃত হন।
এছাড়া ৪২ তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার আয়োজনে তাঁকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়।
শিল্পকলা অবদানের জন্য ২০১৫ সালে তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার রাষ্ট্রীয় একুশে পদকে ভূষিত হন।
এ টি এম শামসুজ্জামান বেশ কিছু পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় সিনেমা প্রেমীদের মনের ভেতর ভালোবাসা জায়গা করে নেয়
উল্লেখ করা যায়,” অনন্ত প্রেম ” দোলনা”অচেনা” মোল্লা বাড়ীর বউ” হাজার বছর ধরে এবং চোরাবালি,
বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে এ টি এম শামসুজ্জামান ২০০৯ সালে শাবনূর – রিয়াজ জুটির এবাদত ছবি দিয়ে পরিচালক হিসেবে অভিষেক ঘটে।
সব্য সাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের” নিষিদ্ধ লোবান ” উপন্যাস অবলম্বনে নাসির উদ্দীন ইউসুফ নির্মিত “গেরিলা” ( ২০১১)
চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ১৪ তম মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে একটি বিশেষ পুরস্কার লাভ করেন।
আমার মনে হয় সফলতার জন্য ই এ-তো পুরস্কার, সম্মান। আমাদের দেশীয় চলচ্চিত্র মিডিয়া পাড়া অঙ্গনে সহ অভিনেতা অভিনেত্রী, পরিচালক ক্যামেরার পিছনের মানুষ গুলো খুব মনে রাখবে যুগ যুগ ধরে, আর দর্শক এ টি এম শামসুজ্জামান কে হৃদয়ের মনিকোঠায় জায়গা নিয়েছেন এতে কোন সন্দেহ নেই।
আমরা একটি বিষয় বরাবরই বলে থাকি
এই শূন্যতা কোন দিন পূরণ হবেনা
আমার মনে হয় এই কথা গুলো সবার ক্ষেত্রে উপযোগী?
এবং ঢালাও ভাবে এ কথা গুলো ঠিক কি না?
পাঠক আপনারই বলবেন।
কিন্তু এ টি এম শামসুজ্জামান চলে যাওয়া শূন্যতা হয়েছে কেউ যদি অস্বীকার করতে পারেন তবে আমি বলব, সে উন্মাদ কারণ সুস্থ স্বাভাবিক একজন মানুষ এ মহান মানুষ কে সম্মান করবে আজীবন মনে রাখবে তাঁর অভিনয়ের কাজ গুলো, তাঁর সংলাপ বাচন ভঙ্গি চোখের ইশারা শুধু সংলাপ দিয়ে অভিনয় করেন নি
তার হাঁটাচলা ও একটা উপভোগ করতাম

এ টি এম শামসুজ্জামান ব্যক্তিগতজীবনে
স্ত্রী রুনী জামান
এই দম্পতির তিন ছেলে তিন মেয়ে রয়েছে।
২০১২ সালে ১৩ মাচ্ এটিএম শামসুজ্জামানের ছোট ছেলে এটিএম খলীকুজ্জমান কুশল নিজ বড় ভাই এ টি এম কামালুজ্জামান কবির কে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন।
হত্যা কান্ডের পর এ টি এম শামসুজ্জামান নিজেই কুশলের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
হত্যার অভিযোগে খলীকুজ্জমান কুশল কে ২০১৩ সালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত।
গুনী এই অভিনেতা ২০২১ সালের ২০ শে ফেব্রুয়ারী দেবেন্দ্রনাথ দাস লেনে নিজ বাসায় ইন্তেকাল করেন
তিনি দীর্ঘ দিন যাবৎ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন,
মৃত্যু কালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর
জুরাইন গোরস্তানে তাঁকে সমাহিত করা হয়। এ টি এম শামসুজ্জামান কে যুগ -যুগান্তরে
মনে রাখবে তাঁর অভিনয়
আজকের এই দিনে জন্ম গ্রহণ করায়
শুভেচ্ছা জানিয়ে লেখা ইতি টানব,
ওই পারে ভালো থাকবেন।

রহিম ইবনে বাহাজ
কবি ও কলাম লেখক
Rahimibnebahaz87@gmail.com
অ.আ প্রকাশকাল: 9:30 A.M

কবি অলোক আচার্য

সকল পোস্ট : অলোক আচার্য