স্বাগতম ২০২৩; এগিয়ে চলার প্রত্যয়

অলোক আচার্য –মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগামী ৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত এবং একটি স্মার্ট দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছেন। ডিজিটাল থেকে একটি স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা তিনি। এই বাংলাদেশ নিয়ে স্বপ্ন দেখা যায়। একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা চলেছে সেখানে পৌছাতে হলে প্রতিটি নাগরিককে একসাথে কাজ করতে হবে। আমাদের অভ্যাস, চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন করতে হবে। একটি বাংলাদেশ একটি পরিবার হিসেবে দেখতে হবে। আমরা যেভাবে পরিবার আগলে রাখি সেভাইে দেশকে আগলে রাখতে হবে। বিজয়ের একান্ন বছরে যে স্মার্ট উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখছি সেখানে সহযাত্রী আমরা। দেখতে দেখতে আরও একটি বছর পার হয়ে গেলো। বিগত বছরে পদ্মাসেতু,মেট্রোরেলসহ সারাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক উন্নতি হয়েছে। করোনা মহামারীর ক্ষত কাটিয়ে বাংলাদেশের নতুন যাত্রা শুরু হয়েছে। যদিও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সারা পৃথিবীকেই একটি বিরুপ পরিস্থিতির মুখোমুখি করছে। নতুন বছর অর্থ প্রতিটি মানুষের চোখে আলাদা স্বপ্ন, আলাদা পরিকল্পনা। ২০২৩ সালকে সাদরে বরণ করতে উন্মুখ আমরা। অনেক স্বপ্ন নিয়ে নতুন একটি বছর আমাদের সামনে দাড়িয়ে। দেশ মানে জনগণ। খেটে খাওয়া কুলি মজুর থেকে শুরু করে সকলের। সমাজ থেকে মানুষের সাথে মানুষের শ্রেণিভেদ দূর করতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের এটি অন্যতম শর্ত।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আমাদের সমাজের বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান করা জরুরি। যে সমস্যাগুলো সমাজকে বিপথে ধাবিত করছে। কারণ আমাদের প্রধান শক্তি তারুণ্য। তাদের হাতেই নতুন বাংলাদেশ। আর সমস্যাগুলো সেই তারুণ্যকেই গ্রাস করছে। যেমন- দুর্নীতি,ধর্ষণ,বাল্যবিয়ে,মাদক,কিশোর গ্যাং,সাইবার বুলিং ইত্যাদি নানা সমস্যা। দুর্নীতি আজ এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে তা নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কঠিন। দেশটা যখন উন্নতির দিকে ধাবমান তখন এসব দুর্নীতিবাজ মানুষের জন্য উন্নয়নের সুফল দেশের প্রান্তিক মানুষ পর্যন্ত পৌছায় না। ফলে উন্নয়নের সুফল তার কমই ভোগ করতে পারছে। তাদের প্রাপ্য সুবিধা নিয়ে ওপর মহলের কতিপয় দুর্নীতিপ্রবণ মানুষেরা আরাম আয়েশে বিলাসবহুলভাবে জীবন কাটাচ্ছে। দুর্নীতির ঘূণপোকা দেশের উন্নয়নকে কেটে শেষ করে ফেলছে। দেশের নৈতিক অধঃপতনের পেছনে অন্যতম প্রধান দায়ী মাদকদ্রব্য। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপরাধী মাদক সেবী বা মাদকের সাথে সংশ্লিষ্টতার খোঁজ পাওয়া যায়। যখন একজন ব্যক্তি মাদক গ্রহণ শুরু করে তখন তার চিন্তা করার স্বাভাবিক ক্ষমতা কমতে থাকে। একসময় মাদকের জন্য অর্থ যোগাড় করতে গিয়ে প্রথমে পরিবারে চাপ সৃষ্টি করে এবং পরিবার যখন তা দিতে অস্বীকার করে তখনই সে বাইরের অপরাধের সাথে জড়িয়ে যায়। এই অপরাধ ছোট থেকে বড় হতে থাকে। সে সমাজে একজন সন্ত্রাসী,মাদকসেবী বা মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পায়। এভাবেই মাদক একটি সমাজকে অসুস্থ করে দেয়। অসুস্থ সমাজে নানা রকম অপরাধ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো সমাজে মাদকদ্রব্যের বিস্তার রোধ করা। যখন নারীরা সমানতালে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় সামিল হচ্ছে তখন বাল্যবিয়ে আমাদের অভিশাপ হয়ে ঘাড়ে চেপে বসেছে। কোনোভাবেই এর লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। আর সেই কিশোরীর মতো পরিণতি না হলেও বাল্যবিয়ের ফলে এক কিশোরীর স্বপ্নের যে মৃত্যু ঘটে তাও তো মৃত্যুই। আধুনিক সভ্যতার অগ্রযাত্রায় নারীর অবদান অনস্বীকার্য। আর এই অগ্রযাত্রায় এখন প্রধান বাধা হলো বাধ্যবিয়ের মতো বাধা। যার জন্য সেই হতভাগ্য কিশোরীর পরিবার দায়ী থাকে। মাঝে মধ্যেই পত্রিকায় বাল্যবিয়ের অপরাধে শাস্তিও হচ্ছে। কিন্তু সামাজিক সচেতনতা গড়ে না ওঠার দরুণ তা রোধ করা যাচ্ছে না। আজও সেই একই মানসিকতা রয়েছে বহু পরিবারে। মেয়েকে যত দ্রæত বিয়ে দেওয়া যায় ততই মঙ্গল! এই ধরনের আদি মনমানসিকতা থেকে আমরা আজও অনেকেই বের হতে পারিনি। সেই চেষ্টাও করছি না। আবার এই করোনাভাইরাস মাহামারীর সময় বাল্যবিয়ের হার বেড়েছে। ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রতিটি নাগরিকের সম সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সমাজে নারী-পুরুষ বিভেদের দেয়াল মুছে ফেলতে হবে। অনেক সফলতা থেকে আমরা অনেকটাই দূরে রয়েছি। সেই দূরত্ব ঘুচিয়ে আমাদের সামনে এগিয়ে চলতে হবে। বিগত অনেক বছর ধরেই এদেশে প্রথম দিন শুরু হয় সবচেয়ে আনন্দময় পরিবেশে। দেশের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা নতুন বই হাতে বাড়ি ফেরে। এর চেয়ে সুন্দর শুরু আর কি হতে পারে! তাদের মুখের এই বিস্তৃত হাসিটুকুই সারা বছর দেশের প্রতিটি মানুষের হাসি হয়ে থাক এই কামনায় নতুন বছরকে স্বাগত জানাই। একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে সবাই একসাথে কাজ করি।

কবি অলোক আচার্য

সকল পোস্ট : অলোক আচার্য