অলোক আচার্য — ভালোবাসার সূত্র কি? মানুষ কেন ভালোবাসে এ প্রশ্ন নিয়েই গবেষণা হয়েছে। ভালোবাসার রসায়ন মস্তিষ্কের কোথায় নিহিত রয়েছে? তবে এটা ঠিক ভালোবাসা এবং ঘৃণা বিপরীতমুখী অবস্থানে থাকে। ফাগুন এলেই মনে আগুন লাগে। মস্তিষ্কে ভালোবাসার স্ফুরণ জাগে। এতদিন মনে করা হতো এর জন্য এর পেছনে লাভ হরমোনের দায় রয়েছে বলেই জানে বিশ^। লাভ হরমোনের আরেক নাম অক্সিটোসিন। আমাদের মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অঞ্চলে এটি উৎপন্ন হয় এবং পিটুইটারি গ্রন্থির মাধ্যমে রক্ত¯্রােতে নিঃসৃত হয়। ভালোবাসা মূলত একটি মানবিক আবেগ,কাম-তৃষ্ণা এবং একে অপরের প্রতি কাছে আসার তীব্র আকাঙ্খা। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় লাভ হরমোন নিয়ে নতুন কিছু তথ্য সামনে এসেছে। তথ্যগুলো এতটাই পূর্ব ধারণা বিরোধী যে এতদিনের ধারণা বদলেও যেতে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রেম-ভালোবাসার ক্ষেত্রে লাভ হরমোনের বিশেষ কোনো হাত নেই। ’সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা ’প্রেইরি ভোল’ নামের একটি প্রাণীর ওপর অক্সিটোসিন হরমোন প্রয়োগ করে গবেষণা করেন। এটি ইঁদুরের একটি বিশেষ প্রজাতি। যাই হোক, সেই গবেষণায় দেখা যায়, প্রেম-মিলন বা সন্তান প্রতিপালনের জন্য অক্সিটোসিন হরমোনের সাহায্য নিতে হচ্ছে না প্রেইরি ভোলকে। যাই হোক গবেষণাটি কিন্তু বেশ অবাক করার মতো ধারণা সামনে এনেছে। এতদিনকার লাভ হরমোনে তাই একটু-আধটু সন্দেহ হলেও কিছু বলার নেই। তবে নিজের ভালোবাসার উপর কোনো সন্দেহ থাকতে নেই। গবেষকদের মতে, প্রেম থেকে শুরু করে যৌন মিলন এবং সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনের পুরো প্রক্রিয়াটাই অত্যন্ত জটিল। আবার কে জানে হয়তো পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ প্রক্রিয়াটাই ’ভালোবাসা’। আমরা মানুষের বিষয়টাকে জটিল করে তুলছি। মানুষ বা প্রাণী প্রকৃতিগতভাবেই ভালোবাসে। পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত টিকিয়ে রেখেছে এই ভালোবাসা। কোনো রসায়ন, কোনো সূত্র এর সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। দু’টি চোখ কখন যে মিশে যায়, কখন যে কাকে আপন করে নেয় তা সেই আবিগ তাড়িত হৃদয়ও ঠিক করতে পারে না। বিশ^ ভালোবাসা দিবস হিসেবে বসন্তের প্রথম দিনকে বেছে নেওয়ায় বাঙালির প্রাণে থাকে উচ্ছাস, আনন্দ। বসন্ত মানেই তারুণ্য, বসন্ত মানেই উচ্ছাস। বসন্ত মানেই রং,রুপ মোহময়তা, দখিনা বাতাসে হারিয়ে যাওয়ার মুহূর্ত। আর তাই বসন্ত মানেই ভালোবাসা। যদিও ভালোবাসতে কোনো নির্দিষ্ট দিন ক্ষণ প্রয়োজন হয় না, তবু এই দিনকে ঘিরে উচ্ছাস থাকে। প্রেমিক যুগল অপেক্ষা করে। ’ভালোবাসা” শব্দটি মূলত এতটাই বিস্তৃত যে কোনো নির্দিষ্ট দিনে তাকে বেধে রাখা সম্ভব না। আবার কোনো নির্দিষ্ট সম্পর্কের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। তা যেমন মানুষের সাথে মানুষের তেমনি হতে পারে কোনো প্রাণীর প্রতিও। ভালোবাসার ধরণই এমন। কে কখন কোথায় কাকে ভালোবাসবে তার পূর্ব অনুমান করা সম্ভব না। ভালোবাসার শুরু কবে তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব না। ভালোবাসা শব্দটির কোনো সীমারেখা থাকার কথা না থাকলেও আমরা তা একটি নির্দিষ্ট গন্ডিতে আবদ্ধ করে ফেলেছি। গায়কের সুরে যখন ভেসে ওঠে, সখী ভালোবাসা কারে কয়, সে কি কেবলি যাতনা ময়’- তখন সত্যি জানতে ইচ্ছে করে ভালোবাসা কারে কয়। কোনো দিবসে নয় বরং প্রতিটি দিনই আসলে ভালোবাসা দিবস। কারণ ভালোবাসা ছাড়া একটি দিনও অতিবাহিত হওয়া সম্ভব নয়। ভালোবাসা হোক পৃথিবীতে সৃষ্ট প্রতিটি জীবনের প্রতি।।