একজন গান সম্রাট এর কথা বলছি//রহিম ইবনে বাহাজ

“খোদা” কথা বলার ক্ষমতা সবাই কে দিয়েছেন, কিন’ গান গাওয়ার ক্ষমতা দিয়েছেন অল্পসল্প লোক দের। এই ধ্রুব সত্য বাণী টি বলেছেন কবি ওয়াল্ডার স্মিথ পেস্ন্লব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোর দয়ালের ডাকে সাড়া দিয়ে আজকের এই দিনে ৬-এ জুলাই ২০২০ চলে গেছেন, আমি অফিস হতে বের হয়ে বাসায় আসব, অফিসের সামনে একটি চায়ের দোকান রঙিন টিভিতে বড় অক্ষরে শিরোনাম ব্রেকিং নিউজ শিল্পী এন্ড্রু কিশোর আর নেই, এই সংবাদ দেখা মাত্রই ভেতরে একটি মোচড় দিল, গগন টা ভেঙে পড়ল মাটি কেঁপে উঠলো নয়নের জল ধরে রাখতে পারলাম না। সোজা বাসায় আসলাম, তখনো টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার চলছে বিশ্বাসের স্তব্ধ টা ভেঙে গেল, বন্ধু মন্তষ পাল, ও মাসুদ ফোনে ফোন দিচ্ছে কথা বললাম সবাই আমাকে সানত্মনা দিচ্ছে আমার কোন স্বজন বিয়োগ হলে এতো টা ভেঙে পড়তাম না, আমি মিডিয়া পাড়া কাজ করার কারণে বাংলাদেশের ৫৪ জেলায় গিয়েছি কাজ করেছি, কোন শপিং মল, গ্রাম, শহর, উপ শহর, বন্দর, গাড়িতে, কারো বাসা বাড়ীতে এখন ও কানে ভেসে আসে এন্ডু কিশোর এর গান, তাঁর গানই যে, মানুষের আত্মার সাথে আত্মীয় হয়ে গেছে, অফিসের কাজে নারায়ণগঞ্জ মিতালী মার্কেটে সপ্তাহে তিন দিন আসি, গাজীপুর, মিরপুর, সদর ঘাট এগুলো তে আমার মার্কেটিং কাজ যেখানেই যাই এন্ডু কিশোর এর গান বাজে, মানুষ শুনে এন্ড্রু কিশোর মানেই দরাজ ভরা গান, আমি মাঝে মধ্যে অপরিচিত লোকজন দের আগ্রহ করে প্রশ্ন করি, আচ্ছা এন্ড্রু কিশোরের গান শুনেন কেন? উওর এলো, সেই ছোট বেলা যখন বাংলাদেশ বেতারে অনুরোধের আসর গানের ডালি, আমরা বন্ধুরা মিলে চিঠিতে এন্ড্রু কিশোরের গান শুনার জন্য অপেক্ষায় থাকতাম, যখন রেডিওতে নিজের নাম শুনতাম খুব ভালো লাগতো, আর এখন সবই ডিজিটাল মন চাইলেই যে কোন গান শুনতে পাই, আর এন্ড্রু কিশোর এর গান, খাদ্যের মতো, যা অন্য শিল্পীর গানে মন ভরে না। এন্ডুকিশোর ১৯৫৫ সালের ৪ঠা নভেম্বর রাজশাহী জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন, তার পিতা ক্ষিতিশ চন্দ্র বাড়ৈ, এবং তার মাতা মিনু বাড়ৈ রাজশাহী বুলনপুর
মিশন গার্লস হাইস্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন, মায়ের কাছের তার পরাশোনা হাতে খড়ি হয়েছিল। তার শৈশব কৈশোর ও যৌবন কাল কেটেছে রাজশাহী তার মাতা ছিলেন সংগীত অনুরাগী তার প্রিয় শিল্পী কিশোর কুমার প্রিয় শিল্পীর নামানুসারে তার ছেলের নাম রাখেন কিশোর মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতেই তিনি সংগীতাঙ্গনেই পা রাখেন এন্ডুকিশোর আব্দুল আজিজ বা”চুর অধীনে প্রাথমিক ভাবে সংগীত পাঠ গ্রহণ শুরু করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের পর কিশোর, নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, আধুনিক, লোক ও দেশাত্ববোধক গান রাজশাহী বেতারের তালিকা ভুক্ত শিল্পী ছিলেন, কিশোর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিবাগের পড়াশোনা করেছেন। এন্ডুকিশোর চলচিত্রে সংগীত শিল্পী হিসাবে যাত্রা শুরু করেন ১৯৭৭ সালে আলম খান সুরারোপিত মেইল ট্রেন চলচ্চিত্রে/অচিন পুরের রাজকুমারী নেই, গানের মধ্যে দিয় তার রেকর্ড কৃত দ্বিতীয় গান বাদল রহমান পরিচালিত এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী চলচ্চিত্রে, “ধুম ধাড়াক্কা” তবে এ জে মিন্টু পরিচালিত ১৯৭৯ সালে মুক্তি প্রাপ্ত প্রতীজ্ঞা চলচ্চিত্রের “ এক চোর যায় চলে” গানে প্রথম দর্শক তার গান শুনে এবং গানটির জনপ্রিয়তা লাভকরে। এন্ডকিশোর চলচ্চিত্রে গানের প্রথম সম্মাননা লাভ করেন “বড় ভাল লোক ছিল” (১৯৮২) চলচ্চিত্রে র জন্য মহিউদ্দিন পরিচালিত এই চলচ্চিত্রে সৈয়দ শামসুল হকের লেখা ও আলম খানের সুরে “ হায়রে মানুষ রঙ্গিন ফানুস” গানটি জনপ্রিয়তা লাভ করেন এবং এই গানের জন্য তিনি প্রথম বারের মতো শ্রেষ্ঠ পুরুষ কন্ঠ শিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্রে পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৪ সালে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল গীত ও সুরে নয়নের আলো চলচ্চিত্রে তিনটি গানে কন্ঠদেন সে গুলো হলো “আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি “ আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন” ও আমার বুকের মধ্য খানে, এটি বুলবুলের পূর্ণাঙ্গ সংগীত পরিচালক হিসেবে প্রথম চলচ্চিত্রে নয়নের আলো চলচ্চিত্রে টি নির্মাণ ব্যয় কম থাকার কারণে তিনি সৈয়দ আব্দুল হাদী, রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিনের মতো বড় ব্যস্ত শিল্পীদের নিতে পারছিলেন না ফলে পুরম্নষ কন্ঠের জন্য এন্ডুকিশোর এবং নারী কন্ঠের জন্য সামিনা চৌধুরীকে নির্বাচন করেন সেখানে অভিনেতা জাফর ইকবালের ঠোঁটে তার
তিনটি গানই বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। দর্শক উষ্ণতায় তার কন্ঠে কি আছে আমি কি করে বলি গান শুনে খালি মনে হয় কোনদিক থেকে তরল সোনা গলে গলে পড়ছে তাতে কোন অভিমান, কান্না, চিৎকার, রাগ, সব অলংকরণের কাজ করছে রেকর্ডিং এর মেশিনের কাটা জানে এন্ডুকিশোরের ভার ও ভারকি যেন আস্ত নায়েগ্রা এবং ভয়ংকর একই সাথে ভয়ংকর সুন্দর এন্ডুকিশোরের সাথে বা সঙ্গে প্রথম দিনে কাজের গল্প বলেছেন কনকচাঁপা কিশোর দার সাথে পয়লা দেখা প্লেব্যাকেই এছাড়া আর তাকে দেখারি বা উপায়ই কী? সুরকার মইনুল ইসলাম খানের সুর ও সংগীতায়োজনের “ নাফর মান” ছবির মরতের গান শ্রম্নতি স্টুডিওতে ১৯৮৬ সালে জানুয়ারীতে আমি নিতান্তই ছোট মানুষ ভয় পাচ্ছিলাম এত বড় শিল্পী গাইতে গিয়ে দেখি ইয়া আল্লাহ্‌উনি যেন আমার বড় ভাই পয়লা হাসিতেই বাজিমাত। এর পর তার সাথে কত গান গাইলাম কত, মঞ্চ কাঁপলো আমার গানে মঞ্চ কাঁপেনা কিন্তু কিশোর দার গানে আমি আমরাও মঞ্চ নিয়মিত কাপে কত বিদেশ গেলাম আপন বড় ভাইয়ের মত হয়েও তিনি এখনো আমার কাছে বিস্ময় আপাত দৃষ্টিতে রাগী রাগী মানুষটা আসলে খুবই ফুর্তিবাজ। সবার বিপদে আপদে সময় মত দাঁড়িয়ে যান সবার আগে পারিা বলে কোন কথা তার অভিধানেই হাজার হাজার গান গেয়েছি এই ভবনা দূরে থাক তাকে চখে দেখেছি বা তিনি আমাকে চেনেন এই ভাবনাতেই আমি আপ্লুত হই এখনো কিশোর দার হয়তো তা জানেনইনা আমি ধন্য তিনি আমাকে স্নেহ করতেন। একটি সিনেমা যদি গল্প দূর্বল হয় মেকিং দূর্বল হয় কিন্তু গান যদি দর্শকের মনে টানে যুগ যুগ ধরে গানগুলো বেঁচে থাকে আমার দেখা অনেক সিনেমা ব্যবসা সফল করতে পারিনি কিন্তু এন্ডুকিশোরের গানে মুগ্ধতায় ভরে দিয়েছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে প্রায় সব নায়ক তার গানের ঠোঁট মিলিয়েছেন শুধু অভিনয়ের কারণে ছবি ব্যবসা সফল হয় না, প্রেম, বিরহ, ত্রিভুজ প্রেমের গল্প, সামাজিক দেশের মোট কথা সব বিষয়ের উপর গান নির্মাণ করতে হয় আর এন্ডুকিশোরের সব ধরণের গান গেয়ে উপাধি পেয়েছেন প্লেব্যাক সম্রাট এ খ্যাতি বা অর্জন শুধু একজন এন্ডুকিশোরের জন্য প্রযোয্য।
এই গানগুলো হাজার বছরের শেষ হতে পারে না। এন্ডুকিশোর ২০২০ সালের ৬জুলাই ৬৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। ব্লাড ক্যান্সারে আক্রানত্ম হয়ে দীর্ঘ দিন তিনি সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করছিলেন সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা করেও ক্যান্সার নির্মূল হয়নি প্রখ্যাত এই সংগীত শিল্পীর। চিকিৎসক হাল ছেড়ে দেওয়ায় ক্যান্সার নিয়েই ৯ মাস পর ২০২০সালের ১১ জুন তিনি দেশে ফিরেন মৃত্যুর পূর্ব পর্যনত্ম তিনি রাজশাহীতে ছিলেন এবং তাহার বোনের তত্বাবধানে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। ব্যাক্তিগত জীবনে এন্ডুকিশোর লিপিকা অ্যান্ড্রু ইতির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তাদের দুটি সন্তান রয়েছে কন্যা মিনিম অ্যান্ড্রু সংজ্ঞা এবং পুত্র জয় অ্যান্ড্রু সপ্তক। তিনি চলচ্চিত্রে গানের জন্য সাত বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। প্লেব্যাক সম্রাট না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছে সেখানে চির নিদ্রায় শায়িত আর ঘুম ভেঙ্গে নয়নের দুটি পাতা খুলে গায়বে না গান। সত্যি মৃত্যুর স্বাদ এমনি এন্ডু কিশোরের বাংলা গান যে যুগ যুগ না হাজার বছর বেছে থাকবে এতে কোন সন্দেহ নেই কালের স্রোতে হারিয়ে যাবার গান এন্ডুকিশোর কন্ঠ দেন নি এন্ডু কিশোরের গানের প্রতিটি গানের গীতিকার ও সুরকার অনেক দিন বা মাস পরিশ্রম করে ঘাম ঝরিয়ে সৃষ্টি করা হয় প্রতিটি গান। এন্ডুকিশোরের গানগুলো আমাদের প্রাণ হয়ে বেঁচে থাক। গান সম্রাটের প্রথম প্রাণ দিবসে শ্রদ্ধাও ভালোবাসায় সিক্ত হোক শোকসপ্ত পরিবারের রইলো সমবেদনা।

রহিম ইবনে বাহাজ
কবি ও কলাম লেখক

কবি অলোক আচার্য

সকল পোস্ট : অলোক আচার্য