একটি মাত্র কবিতা লিখতে চেয়েছি।। মাহমুদা রিনি



আমি একটি মাত্র কবিতা লিখতে চেয়েছি—-
সেই জন্ম থেকে আজ অব্দি শুধু শব্দ কুড়িয়েছি।
মায়ের জরায়ুর নাড়ি ছেড়ে কলম ধরতে চেয়েছি
শুধু একটি কবিতা লিখব বলে!
চলতে চলতে ভাবনার বদল হয়েছে—
বার বার বদলেছি আমি,
ছিঁড়ে গিয়েছে অনুভূতির সুতো।
ছিঁড়ে যাওয়া শব্দে কবিতা লেখা যায়নি!
মায়ের গর্ভগুহা থেকে ভেবেছিলাম লিখব মায়ের কথা।
অন্ধকার; ভারী পাথরের মত আশা নিরাশার
বোঝা মা বহন করেছে আমি তা অনুভব করেছি,
কিন্তু লিখতে পারিনি।
আমি হাঁটতে শিখেছি, বারংবার হোঁচট খেয়ে পড়ে
রক্তাক্ত হয়েছি!
ধীরে-ধীরে আমার আকাশ নীল হয়েছে।
সেই আকাশে রঙধনুর রঙ লেগেছে!
তুলোর মত নরম মেঘ ভেসেছে–
আবার কালবৈশাখী ঝড়ে তছনছ হয়েছে
আমার সাজানো বাগান,
পরিস্ফুটিত কুঁড়ি, ফুটন্ত গোলাপ।
আমি তখনও লিখতে চেয়েছি একটি কবিতা!
আমার দৃষ্টি বদলেছে, আমি রাজপথে হেঁটেছি;
হেঁটেছি কর্দমাক্ত ঝুপড়ি বস্তির নোংরা গলিপথে।
দেখেছি সভ্য সমাজের পরতে পরতে পচা-গলা আস্তরণ!
বেশ্যাপল্লির রঙমাখা মেয়েগুলোর শরীরের অভ্যন্তরে রক্তবীজে খাওয়া থকথকে ঘা।
আরো দেখেছি শ্রমিকের ঘামে ভেজা
মাটিতে উঠেছে সুউচ্চ ইমারত,
শ্রমিকের রুটির বৃত্ত আরো ছোট হয়ে এসেছে।
কৃষকের উৎপাদিত রসদে মোঘলশাহী খাবারের
গন্ধে মো মো করেছে পাঁচতারা হোটেল।
অথচ বীজধানের ঋণ শোধ করতে
কৃষক ছুটে বেড়িয়েছে দিশেহারা হয়ে
বউয়ের শেষ মাকড়ি জোড়া বেচবে বলে!
আমার কবিতা লেখা হয়নি।
আমি উলঙ্গ শিশুর ভিক্ষা করা দেখেছি,
গর্ভবতী মায়ের মাথায় ইটের বোঝা দেখেছি,
ধর্ষিত শিশুর রক্তাক্ত লাশ দেখেছি,
শ্রমিকের ঘামের সাথে অশ্রু মেশানো
ককটেল পানীয় দেখেছি।
ভ্রাম্যমাণ পতিতার রাতভর খদ্দের খুঁজতে দেখেছি।
আমি যত দেখছি আমার কবিতার অবয়ব
ততই ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে–
ছন্দ হারিয়ে যাচ্ছে,
কোনভাবেই যেন সে কবিতা হয়ে উঠছে না!
তবু আমি আমার বুকের ভিতর লুকিয়ে থাকা
কবিতাটা লিখতে চাই–
যা আমি স্বপ্নের ঘোরে লিখে চলেছি জন্মাবধি।
যে কবিতায় নিঃসংকোচে, নির্দ্বিধায় খেলা করে শব্দেরা।
যে কবিতার প্রতি লাইনে আছে
জীবনের প্রতি ভালোবাসা,
প্রতি প্রাণে- প্রাণ মিলে তৈরী হয় ছন্দ।
একটাই পৃথিবী, একবারই জীবন–
লিখতে চাই সেই জীবনের মত কবিতা অথবা
কবিতার মত জীবনকাব্য।

কবি আঞ্জুমান আরা খান

সকল পোস্ট : আঞ্জুমান আরা খান