একটি সুইসাইড নোট/নাসির আহমেদ কাবুল

ধারাবাহিক উপন্যাস ।। পর্ব নয় ।।
ছাব্বিশ জুন অনিন্দিতার জন্মদিন। সে কথা মনে আছে পার্থর। বিকেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা শেষে বসুন্ধরা শপিং মলে যায় পার্থ। সেখান থেকে অনিন্দিতার জন্মদিনের জন্য বরাবরের মতো শাড়ি ও কিছু কসমেটিক, বিশেষ করে বিদেশী সেন্ট কেনে পার্থ। শাড়ি কেনা নিয়ে অনিন্দিতা বার-বার পার্থকে না করলেও পার্থ কখনও ওর কথা শোনেনি। পার্থ বলেছে, শাড়ি পরো আর না পরো, আমি তোকে সারা জীবন জন্মদিনে একটি করে শাড়ি গিফট দেবো।
অনিন্দিতার ‘কেনো’র উত্তরে পার্থ বলেছে, মেয়েদের শাড়িতেই বেশি ভালো লাগে তাই।
অনিন্দিতা বলেছে, ‘আমাকে দেখতে ভালো লাগায় তোমার কী লাভ?’
সে কথার কোনো উত্তর এড়িয়ে গেছে পার্থ। পার্থর কোনো কথা ভালো না লাগলে বা উত্তর দিতে না চাইলে প্রসঙ্গ এড়াতে অন্য কথা বলে।
আজও পার্থ অনিন্দিতার জন্য শাড়ি কিনতে গিয়ে পিছনের এসব কথা মনে পড়লেও পছন্দ করে শাড়ি কেনে সে। পিংক কালারের একটি কাতান। আঁচলে জরির কাজ করা। তারপর অনিন্দিতার পছন্দের ফোনসেট শাওমি নোট ৯ কিনে বাড়ি ফেরে পার্থ।
অনিন্দিতার জন্য গিফট কেনার সময় কয়েকজন বন্ধু পার্থর সঙ্গে ছিল। ওদের একজন বলে, অনিন্দিতা কিন্তু দেখতে খুব সুন্দর। বন্ধু রাব্বির কথা শুনে তীর্যকভাবে তাকিয়ে পার্থ বলে, ‘তাতে তোর কী?’
: কিছু না তো! সুন্দরকে সুন্দর বলতে নেই?
: না, বলবি না। ওকে সুন্দর বলার কোনো অধিকার নেই তোদের।
: তাহলে তোর আছে?
: থাকবে না কেন?
: তাহলে এক কাজ কর। ওকে বিয়ে করে ফেল।
: পার্থ অবাক হয়ে বলে, ‘কী বলছিস এসব! ও আমার বোন! বোনকে বিয়ে করা যায়?’
রাব্বি বলে, আপন তো নয়, মামাতো বোন। আচ্ছা তোর বোনকে বিয়ে দিবি না?
দেবো না কেন? কিন্তু তোদের মতো গবেট ওর বর হবে না। ওর বর হবে…
রাব্বি বাধা দিয়ে বলে, থাক দোস্ত। তুই তাহলে বাসায় যা। ওহ হ্যাঁ, বোনের বার্থডেতে দাওয়াত করবি না?
: সত্যি যাবি? আয় না তাহলে বিকেলে।
: না, আসতে পারব না, কাজ আছে জরুরি।
: তাহলে অন্য এক সময় আসিস।

বাড়ি ফিরতে-ফিরতে রাত সাড়ে দশটার মতো বেজে যায় পার্থর। নিজের রুমে গিয়ে অনিন্দিতার জন্য কেনা গিফটগুলো লুকিয়ে রাখে; সকালে ওকে সারপ্রাইজ দেবে বলে। তারপর তিনতলায় ফ্লাটে এসে কলিং বেল বাজায়। অনিন্দিতা এসে দরজা খুলে দিয়ে জিজ্ঞেস করে, রাত করে কেন ফেরো রোজ-রোজ?
: কেন?
: কেন আবার? তুই বাসায় না থাকলে…
: কী?
: ও কিছু না।
: আচ্ছা। ফুপু কোথায়?
: ড্রইং রুমে বসে আছেন। বই পড়ছেন মনে হয়।
দুজনে কথা বলতে-বলতে ড্রইং রুমে গিয়ে দেখে সোফায় হেলান দিয়ে ফুপু বই পড়ছেন। ওদের দুজনকে দেখে বলেন, পার্থ কাল অনিন্দিতার জন্মদিন। মনে আছে তোর?
পার্থ ফুপুর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে বলে, না মনে নেই তো?
অনিন্দিতা পার্থর কথা শুনে রেগে গিয়ে বলে, শুনলে তো মা ওর কথা! আমি জানি তো, আমার জন্মদিনের কথা মনে নেই ওর। আগেই তো বলেছিলাম। একমাত্র বোন, তার জন্মদিনের কথা মনে রাখে না। মা, ও আমার ভাই-ই নয়।
মা হাসতে-হাসতে বলে, পার্থর সব মনে আছে। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখ। আমি তো বুঝতে পারছি।
অনিন্দিতা অভিমান করে বলে, মা ওর মনে নেই। থাক। মনে রাখতে হবে না ওকে। যা করার আমিই করব। দোকান থেকে কেক আনা, মিষ্টি, ফুল সব আমি আনব।
পার্থ বলে ওসব তোমাকে আনতে একা-একা দোকানে যেতে হবে না। তোমাকে দেখলে তো পাড়ার ছেলেরা ড্যাব-ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে। কেক, মিষ্টি, ফুল সব আমি অর্ডার করে এসেছি। সময় মতো ওরা বাসায় পৌঁছে দেবে।
অনিন্দিতা পার্থর দুই কাঁদের ওপর হাত রেখে বলে, তুই আমাকে এতোটা ভালোবাসিস! এতোটা?
: উঁহু মোটেই না। তোকে ভালোবাসতে বয়েই গেছে আমার! তবে শোন, তোর বার্থডের অনুষ্ঠানে কিন্তু আমি থাকব না।
প্রতিবাদ করে অনিন্দিতা- ‘কেন থাকবি না?’
: তোর ওই মুটকি বান্ধবীটা কেমন করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে দেখেছিস তো? দেখলে শরীর জ্বলে যায় আমার।
ফুপু বলেন, বার-বার তাকায় বুঝি?
: হ্যাঁ ফুপু। বার-বার তাকায়।
: তুমিও তো ওর দিকে তাকাও।
: না ফুপু। আমি কেন তাকাব?
: তাহলে দেখলে কেমন করে ওই মোটকু মেয়েটা তোমার দিকে তাকায়?
অনিন্দিতা হাততালি দিয়ে বলে, ‘এইবার জব্দ হলে তো!’
ফুপু বলেন, তোরা ঝগড়া পরে করিস। এখন যা, ডাইনিংয়ে খাবার ঢাকা আছে। খেয়ে নে।

ওরা দুজন ডাইনিং রুমে যেতে যেতে অনিন্দিতা বলে, তুমি মুটকিকে বিয়ে করবা?
: কী?
: আমার বান্ধবী মৌটুসিকে বিয়ে করবে তুমি?
পার্থ কী যেন ভাবলো, তারপর বলল, মৌটুসিকে? ওই যে মেয়েটা বার-বার তাকায়? তোকে তো বলিনি ফুপু সামনে বলে।
: কী বলিসনি?
: ওর সঙ্গে তো আমার কথা হয়ে গেছে।
: মানে। আশ্চর্য হয় অনিন্দিতা। কী কথা হয়ে গেছে তোমার?
: ওকে বিয়ে করব। ওর সঙ্গে কথা হয়ে গেছে আমার। ফুপু সামনে বলে বলিনি।
অনিন্দিতা ক্ষেপে যায়। পার্থর জামার কলার চেপে ধরে দাঁতে-দাঁত পিষে বলে, ‘না করবি না! কিছুতেই মৌটুসিকে বিয়ে করবে না তুমি।’
: তাহলে বললি কেন?
: বলতাম না। যদি জানতাম মৌটুসির জন্য তোমার মন ছুকছুক করে। ওকে দাওয়াতও দিতাম না।
: সমস্যাটা কোথায়?
অনিন্দিতা গভীর চোখে তাকায় পার্থর দিকে। তারপর বলে, তোমাকে কাউকেই বিয়ে করতে দেবো না।
: কেন?
: কেন আবার। বিয়ে করলেই তো তুমি পর হয়ে যাবে। যে মেয়েটা তোমাকে বিয়ে করবে, সে তোমাকে…
: কী?
কিছু না। বলে দৌড়ে পালায় অনিন্দিতা।

চলবে