একটি সুইসাইড নোট/নাসির আহমেদ কাবুল

পঞ্চম পর্ব ।। পাঁচ ।।
মৌরি ঘর থেকে বের হয়ে গেলে পার্থ ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। বাসার সামনে রাস্তায় মৌরিদের সাদা রঙের গাড়িটা দাঁড়িয়ে আছে। নতুন ঝকঝকে টয়োটা এলিয়েন। গাড়ির প্রতি কোনো আগ্রহ নেই তার। আজ যেমন মৌরিদের গাড়ির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, আর কোনোদিন কখনই সে গাড়ির দিকে এমন করে তাকায়নি। প্রায় প্রতিদিনই তো মৌরি এই গাড়িতে আসে, আবার চলেও চায়। মৌরি চলে যাওয়ার সময় পার্থ প্রতিদিনই ভদ্রতার খাতিরে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু আজকের দাঁড়ানোটা নিছক ভদ্রতা নয়, কোথায় যেন একটা টান আছে, বুঝতে পারে পার্থ। নিজেকে প্রশ্ন করে, কেন তার মৌরির প্রতি টান থাকবে? অনিন্দিতার প্রতি তাহলে তার কীসের টান? নাকি সবই মিথ্যে। নাকি বোনের মতো? নাকি নারীর প্রতি পুরুষের যে সহজাত টান থাকে, তাই। এসব প্রশ্নের উত্তর নিজের কাছে দুর্বোধ্য মনে হলেও একটা সত্য পার্থ বুঝতে পারে, অনিন্দিতাকে সে শুধু ভালোবাসতেই পারে; পাওয়ার জন্য অনিন্দিতা নয়। আর মৌরি তার উল্টো। ওকে ভালোও বাসা যায়, পেতেও আশা করা যায়।
পার্থ নিজেকে প্রশ্ন করে, সে কেন গাড়িটিকে দেখছে অমন করে? মৌরিদের গাড়ি বলে? কেন আজ গাড়িটি বিশিষ্টতা পেলো তার কাছে, মৌরি এই গাড়িতে আসে বলে? মৌরির প্রতি তার এই অনুভূতির কী কারণ? আর পাঁচটা মেয়ের মতো মৌরি তার ছাত্রী। ওর সঙ্গে তো এমন কোনো সম্পর্ক হওয়ার কথা নয়, যাতে সে এমন টান অনুভব করতে পারে! পার্থ নিজেকে ঠিক বুঝতে পারে না। নিজের সম্পর্কে প্রায়ই সে তালগোল পাকিয়ে ফেলে আজকাল।
পার্থ ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে নিচে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু মৌরিকে দেখতে পাচ্ছে না সে। মনে-মনে ভাবে, এতক্ষণ তো লাগার কথা নয়। এতক্ষণে তো গাড়িতে গিয়ে বসার কথা। এলোমেলো ভাবনার মধ্যে হঠাৎ কলিং বেল বাজতে থাকে। পার্থ এ সময় অন্য কাউকে আশা করে না। কলিংবেল বাজতে থাকে একবার-দুবার-তিনবার। পার্থর সেদিকে খেয়াল নেই। এবার দরজার বাইরে থেকে মৌরির কণ্ঠস্বর শুনতে পায় পার্থ, ‘পার্থ দা, দরজা খোলো প্লিজ!’
পার্থ দ্রæত ড্রইংরুমে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। ঘরে ঢুকতে-ঢুকতে মৌরি বলে, ‘যেতে মন চাইলো না। আরও একটু সময় বসি? গল্প করি তোমার সঙ্গে? অসুবিধা নেই তো?’
পার্থ অন্তরের উচ্ছ¡াস চেপে রেখে বলে, ‘অসুবিধা থাকবে কেন? আচ্ছা বসো। ফিরে এলে কেন?’
: বললাম তো, যেতে মন চাইছে না! তাই ফিরে এলাম। কেন তোমার অসুবিধা হচ্ছে?
‘অসুবিধা কী?’ কিন্তু বলতে পারেনি সে। বলল, ‘কেন ফিরে এলে বলো?’
এমন সাদামাটা কথা হয়ত মৌরি আশা করেনি। অবাক হয়ে সে পার্থর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ফিরে এসেছি বলে তুমি খুশি হওনি না? আচ্ছা চলে যাচ্ছি তবে।’ মৌরি দরজার কাছে যেতেই পার্থ বাধা দিয়ে বলে, ‘না, যেও না।’
: কেন যাবো না? ফিরে এসেছি বলে তুমি খুশি হওনি তো!
: কে বলল খুশি হইনি!
: মনে হলো। সত্যি বলছ! তুমি খুশি হয়েছ পার্থ দা?
: সত্যি খুশি হয়েছি।
: কেন খুশি হলে? আমি থাকলে তুমি খুশি হবে কেন?
ঠিক জানি না তো কেন খুশি হলাম। সব খুশির কারণ কি বোঝানো যায়?
: যায় না?
: না।
: আচ্ছা না বলতে চাও, বলো না। তোমাকে একটা কথা বলি?
: কী?
তুমি আমার বন্ধু হবে? জানো পার্থ দা, আমার মনের কথা বলার কেউ নেই। কোনো বন্ধু নেই আমার।
পার্থ অবাক হয়। একদৃষ্টিতে মৌরির দিকে তাকিয়ে থাকে। মৌরি চোখ নামায় না। পার্থ চোখ নামিয়ে বলে, ‘কিন্তু…’
: কিন্তু কী?
: না-না, কিছু না। তোমার চেয়ে আমার বয়সটা তো বেশি…!
তুমি কি পার্থ দা! বন্ধু হতে হলে আবার সমান-সমান বয়স হতে হয় নাকি? বাবা-মায়ের সঙ্গে মেয়ের, ভাইয়ের সঙ্গে বোনেরও তো বন্ধুত্ব হয়। কিন্তু আমার সে ভাগ্য নেই। কার সঙ্গে শেয়ার করব আমার সুখ-দুঃখের কথা? তুমি বন্ধু হও প্লিজ।
পার্থ এই ক্ষেপাটে তরুণীকে আজকাল পাগলী ভাবতে শুরু করেছে। পার্থ কেন যেন ওর দিকে তাকিয়ে মিট-মিট করে হাসে।
: তুমি হাসছ? আমাকে মাথা খারাপ ভাবছ, তাই না?
আঁৎকে ওঠে পার্থ। সে ধরা পরে যাচ্ছে না তো! বলে, না-না, কেন তোমাকে মাথা খারাপ ভাবব? ঠিক আছে আমি তোমার বন্ধু হলাম।
মৌরি খুশি হয়। বলে, ‘আমার অনেক কথা তোমাকে বলার আছে পার্থ দা। তুমি শুনবে তো?’
: আচ্ছা শুনব।
: থ্যাংকু পার্থ দা। বিকেলে তো চা খেলে না। এখন সন্ধ্যা। নাকি চায়ের অভ্যাস নেই তোমার?
: পার্থ সহজ করে উত্তর দেয়, খাই তো!
: কখন চা খাও তুমি?
: তুমি চলে যাওয়ার পর।
: কেন? আমি থাকতে চা খেতে সমস্যা কী?
: সমস্যা কিছু নেই। নিজের হাতে চা বানিয়ে খেতে হয় আমাকে। চা বানাতে দশ মিনিট, খেতে দশ মিনিট লেগে যায়। তোমার এক ঘন্টা রেয়াজ থেকে বিশ মিনিট নষ্ট হয়ে যাবে। সেটা বড় কথা নয়। পুষিয়ে দেয়া যাবে। তবেÑ
: তবে কী?
: চায়ের সঙ্গে সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস আমার।
: তো?
: কারও সামনে সিগারেট খেতে চাই না আমি। বিশেষ করে মেয়েদের সামনে তো নয়ই। মেয়েরা সিগারেট পছন্দ করে না। বিরক্ত হয়।
মৌরি খিল-খিল করে হেসে বলে, ‘আমি বিরক্ত হবো না পার্থ দা। কোনো ছেলে সিগারেট খেলে তাকে হিরো হিরো মনে হয় আমার। তাছাড়া যাকে ভালো লাগে তার কোনো দোষ খুঁজে পাওয়া যায় না। আমি তোমার মধ্যে দোষের কিছু দেখি না। বাবা সিগারেট খায়, আমি সহ্য করতে পারি না। তবে আমি তোমার জন্যই সিগারেটের গন্ধ সহ্য করব। তুমি জানো না, আমি অন্য পাঁচটা মেয়ের মতো নই। আচ্ছা তোমার কিচেনটা কোনদিকে বলো তো। আমি তোমার জন্য চা বানিয়ে আনব। এখন থেকে রোজ এসে তোমাকে চা বানিয়ে দেবো।
: কী বলছ তুমি?
: বলাবলির কিছু নেই পার্থ দা। তুমি শুধু জেনে রাখো আমি অন্য মেয়েদের থেকে আলাদা। আমার বাবা-মাও তাই জানে। আমি কোনো কিছুতে রাখঢাক পছন্দ করি না। আমার যা ন্যায় মনে হয়, তাই করি। লোকলজ্জা আমার নেই।
: সমাজ আছে তো!
: তুমিও তো মায়ের মতো বললে! ওসব ছাড়ো তো! এসো রান্নাঘরে। কোথায় কী আছে, দেখিয়ে দাও আমাকে।
বারণ শোনার মেয়ে নয় মৌরি। ওকে দেখলেই তা বোঝা যায়। ওর চলাফেরা, পোশাক আর কেয়ারলেস ভাব দেখলে অন্য মেয়েদের থেকে যে সে আলাদা, সেটা বোঝা যায়।
মৌরি ঘন দুধ ও বেশি করে চা পাতা দিয়ে চা বানিয়ে পার্থর হাতে দিয়ে বলে, খেয়ে দেখো ভালো হলে প্রতিদিন তোমাকে চা বানিয়ে খাওয়াব।
: আর যদি ভালো না হয়?
: তুমি শিখিয়ে দেবে।
চা হাতে নিতে-নিতে পার্থ বলে, তুমি চা খাও না?
মৌরি অবাক হয়ে বলে, ‘খাই না মানে কি? এই তো আমার চা।’
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে পার্থ বলে, ‘গ্রেট দুষ্টু! তুমি এত সুন্দর চা বানাও কী করে? কে শিখিয়েছে তোমাকে?’
: কে আবার শেখাবে? মাকে দেখে নিজে-নিজে শিখেছি। গান ছাড়া কোনকিছু শেখাতে হয় না আমাকে। জানো পার্থ দা, গান শিখতে ভালো লাগে না আমার।
: কেন?
: কেন আবার? গান শুনলে বা গাইলেই যে আমার ভীষণ কান্না পায়। মা বলেছে তাই শিখছি। জানো, মায়ের কোনো কথা ফেলতে পারি না আমি। তুমি জানো না, আমার মা খুব দুখী। ওর তো আমি ছাড়া আর কেউ নেই। তাই মা-ই আমার সব। আর বাবার কোনো কথাই আমি শুনি না। মা একটু পুরোনো মানসিকতার। এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না। জিন্স, টি-সার্ট পরা যাবে না। ওগুলো নাকি অশ্লীল! মায়ের এসব ফানি কথাবার্তা আমার একটুও ভালো লাগে না। আচ্ছা পার্থ দা, অশ্লীলতা শুধু পোশাকে হবে কেন?
কথা বলতে-বলতে থেমে গিয়ে চায়ে চুমুক দিয়ে পার্থ বলে, চা কিন্তু সত্যিই ভালো হয়েছে।
‘কে বানিয়েছে দেখতে হবে না!’ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মৌরি হাসতে-হাসতে বলে।
পার্থ চায়ের প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে বলে, ‘কী যেন বলছিলে?’
: শুনবে?
: হুঁ, বলো।
: দূর বাদ দাও এসব কথা। তুমি একমত হবে না। সবাই মায়ের মতো।
: না-না বলো। আমি শুনব।
: আমি মনে করি, অশ্লীলতা পোশাকে যেটুকু, তার চেয়ে বেশি মনে।
: কেন?
: কেন আবার? আমার কয়েকটা বান্ধবী আছে। ওরা হিজাব পরবে, বোরকা পরবে। আর সুযোগ পেলেই কীসব আলাপ করে জানো? শুনলে তুমিও লজ্জা পাবে।
: কী!
: কী আর বলছি! ওরাই বেশি খারাপ চিন্তা করে।
: আচ্ছা থাক ওরা ওদের মতো।
: ওহ! তুমি সিগারেট খাবে না চায়ের সঙ্গে?
: আজ থাক।
: ও মা থাকবে কেন? আমার সামনে খাবে না তাই? না পার্থদা, সেটা হবে না। তোমাকে চায়ের সঙ্গে সিগারেট খেতেই হবে। কোথায় সিগারেটের প্যাকেট, তোমার পড়ার টেবিলে? আচ্ছা দাঁড়াও, আনছি আমি।
পার্থর পড়ার টেবিল থেকে সিগারেট ও লাইটার এনে এগিয়ে দিতে-দিতে মৌরি বলে, ‘পার্থ দা, তুমি এত দামি সিগারেট খাও?’
পার্থ হাসতে-হাসতে বলে, গরীব মানুষ কি দামি সিগারেট খেতে পারে? এটা অতটা দামি নয়। এর চেয়েও দামি সিগারেট আছে।
: তুমি বুঝি গরীব? কিন্তু কেন? বাবার মতো টাকা নেই কেন তোমার?
: সবার কি টাকা হয়? টাকা হওয়ার জন্য এক্সটা টেকনিক জানতে হয়। সবার তা জানা থাকে না।
হঠাৎ যেন মৌরির মুখে একরাশ ছাই মেখে দিলো কেউ। মলিন মুখে কিছুক্ষণ পার্থর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, ‘সত্যি বলেছ পার্থ দা, টাকা আয়ের টেকনিক জানতে হয়। বাবা সেসব জানে। তাই তো তার কাড়ি-কাড়ি টাকা। তোমার সে টেকনিক জানার দরকার নেই। তুমি যেমন আছ, তেমন থাকো। পার্থ দা, টাকায় সুখ নেই। আমি খুব ভালোভাবে তা বুঝতে পারছি।’
মৌরির মুখে এসব কথা শুনে পার্থ ভাবে, বয়সের তুলনায় মৌরি অনেক বেশি বুঝতে পারে। পার্থ বলে, ‘বন্ধু হলে তুমি যেন কী বলতে চেয়েছিলেন?’
: হুঁ পার্থ দা। যেসব কথা আর কাউকে শেয়ার করতে পারি না, সেসব কথা শুধু তোমাকে বলব। এসব শুনে তোমার আমাদের ফ্যামিলি সম্পর্কে খারাপ ধারণা আসতে পারে। আসুক। যা সত্যি তা বলতে দ্বিধা নেই আমার। তুমি যেন কাউকে এসব বলতে যেও না, প্লিজ।
: পাগল হলে তুমি! কেন অন্যকে বলতে যাবো তোমার কথা! তুমি তো আমাকে বিশ্বাস করে বলছ।
মৌরি পার্থর দিকে তাকিয়ে বলে, ‘তোমাকে আমি বিশ্বাস করি বলেই তো বলব সব। তাহলে শোনো, আমি যাকে বাবা বলিÑসৈয়দ রাশেদুল হাসান, তিনি আমার বাবা নন।’
‘তোমার মায়ের স্বামী তিনি?’ পার্থ অবাক হয়ে বলে।
‘মায়ের স্বামী হলেই যে সন্তানের বাবা হবে, এমন তো নয়। তিনি আমার বাবা। তবে আপন বাবা নন। তিনি স্টেপ ফাদার। আমার মায়ের দ্বিতীয় বিয়ে এটি। জীবনে মা বোধ হয় এই একটি ভুলই করেছেন। আমার বাবাকে ছেড়ে এই ব্রæটাল লোকটিকে বেছে নিয়ে এখন পস্তাচ্ছেন। লোকটিকে আমি খুব অপছন্দ করি, এড়িয়ে চলি। ওকে আমার বাবা বলতে ঘেন্না হয় পার্থ দা!’
পার্থ বলে, ‘কী বলছ তুমি?’
মৌরি মন্ত্রমুগ্ধের মতো বলে চলে, ‘প্রতি রাতে বাবা-মা ঝগড়া করে। শুধু কি ঝগড়া, রুম আটকিয়ে মাকে শারীরিক নির্যাতন করে বাবা। পাশের রুম থেকে আমি টের পাই। মায়ের কান্নার আওয়াজ শুনতে পাই।’
: মাকে কখনও জিজ্ঞেস করোনি, কেন তার উপর নির্যাতন করা হয়?
: একদিন করেছিলাম।
: কী বললেন তিনি?
: বললেন, এসব শোনার বয়স হয়নি আমার। তবে মায়ের কথা মানতে পারছি না আমি। জানতে হবে কেন মায়ের উপর এই নির্যাতন।
: তোমার বাবা কি ড্রিংক করেন?
: হুঁ। প্রতি রাতেই ড্রিংক করেন বাড়িতে বসে। ড্রিংক করা কারণ নয়, অন্য কারণ আছে মনে হচ্ছে।
: কী মনে করো তুমি?
: সঠিক জানি না। তবে মায়ের নামে প্রচুর সম্পত্তি আছে। ওগুলো মাকে লিখে দিতে বলেছিল একদিন। এ নিয়েই প্রায়ই ঝগড়া হয় দুজনের মধ্যে।
মৌরি কথা বলতে-বলতে প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করে পার্থর হাতে দিয়ে লাইটার জ¦ালিয়ে পার্থর মুখের কাছে ধরলে পার্থ ওর হাত থেকে লাইটার নিয়ে সিগারেট ধরায়। মৌরিও একটি সিগারেট বের করে নিজের মুখে পুড়ে বলে, ‘দাও তো লাইটারটা!’
পার্থ অবাক হয়ে বলে, ‘তুমি সিগারেট খাও দুষ্টু?’
: কে বলল খাই? তবে আজ খাবো, বন্ধুর সঙ্গে। রোজ একটা করে খাবো। বড় লোকদের সব গুণ থাকতে হবে আমার। আমরা তো বড় লোক, অনেক বড় লোক। তুমি জানো না পার্থ দা, কত টাকা আমাদের। পার্থ দা দেখো, আমি একদিন মদও খাবো!
: কী বলছো তুমি!
: তুমি অবাক হচ্ছ পার্থ দা? এগুলো তো বড়লোকদের ফ্যাশন। তুমি জানো না? আমার মা অবশ্য পছন্দ করেন না, তবুও তিনি মদ খেতে বাধ্য হয়েছেন। বাবা তো এখনই আমাকে পার্টিতে যাওয়ার অনুমতি দেয়। শুধু পার্টি কেন, কোনোকিছুতেই আপত্তি নেই তার। বাবার এক বন্ধু বাবার সামনে আমার হাত ধরেছিল। বাবা সেটা দেখেছে। কিছু বলেনি। বরং তার সঙ্গে পার্টিতে যেতে বলেছিল একদিন। আমি সেই থেকে বাবাকে একদম সহ্য করতে পারি না।
: না, তুমি এসব কিছু করবে না দুষ্টু। আমি তোমাকে এসব করতে দেবো না।
কথাগুলো বলতে এতটা জোর কোথায় পেলো পার্থ, নিজেও তা জানে না। মৌরি সিগারেট ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে অবাক চোখে পার্থর দিকে তাকিয়ে বলে, ‘সত্যি তুমি পারবে পার্থ দা আমাকে এসব থেকে ঠেকাতে? তুমি জোর করতে পারবে তুমি?’
: পারব।
: কেন? কোন অধিকারে?
: জানি না কোন অধিকারে। তবে তোমাকে এসব কিছুই করতে দেবো না আমি। আর কোনোদিন তুমি সিগারেট স্পর্শ করবে না। কথা দাও।
মৌরি মিষ্টি করে হাসতে-হাসতে বলে, ‘কথা দিলাম পার্থ দা, যতদিন তোমার শাসন থাকবে, ততদিন আমি এসব আর কখনও স্পর্শ করব না।’
কথা বলতে-বলতে রাত হয়ে যায়। আস্তে-আস্তে গাড়িতে গিয়ে বসে মৌরি। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ে পার্থ, প্রতিদিনের মতো ভদ্রতার খাতিরে নয়, আজ মনে হয় অন্য কিছু। যেন প্রাণ আছে এই হাত নাড়ার মধ্যে।

চলবে