কবি জাহিদুল যাদুর তিনটি কবিতা

কবিদের আত্মাহুতি

কোন একটি বিষয়বস্তুর কতোটা গভীরে ঢুকে শব্দ ছিনিয়ে মালা গেঁথে কবিতার জন্ম দেন একজন কবি তা অকবিদের বোধগম্য কখনোই হবেনা।
ঘটনার পরম্পরা, শব্দের চারিত্রিক দোলা, বিষয়বস্তুর গভীর থেকে গভীর পর্যালোচনা কবিকে কতোটুকু উত্তেজিত করে ব্যবসায়িক চিন্তায় তার মূল্যহীন মেধাবিকৃতিই উদ্ধৃত হয়, হয় নাক শিটকানো হাওয়া বাণী, হয় কেবলি গম্ফুর নিচে চুরাহাসির ঢেউ ফেনার সফেদ গেজা।
কবি নামক বিশেষ শ্রেণী শুধুই গচিয়ে দেওয়া আধগেলা প্রতিভা সম্ভার; মানুষের মুখে কথা ফোঁটার পর থেকেই কবিরা যুগে যুগে আসেন সত্য সুন্দরকে বর্ণনা করেন নিঃস্বার্থ জীবন বন্দনা করেন তবুও অবহেলিত এবং দমিত থাকেন কর্কশ তোতলা নপুংসকদের সমাজে। কবি পরিচয় বহনে সচেষ্ট হতে নৃশংস মৌলবাদ পুষ্ট অকবিদের অবিশ্রান্ত কাগজ-কলমের ঘর্ষণ বিরক্তির পাহাড় গড়ে প্রকৃত কবিদের ঢেকে দ্যায় অদ্যাবধি,
তবু নিরূপায় কবি ঘাঁড় গুজে শব্দ সাজায়…..
মঙ্গল কামনায় কলমের কান্না খাতার সাদা ক্যানভাস শোকার্ত করে, রচিত হয় আপত দৃষ্টিতে মূলহীন শব্দমিছিল। কবি আসেন মানুষের পৃথিবীতে মানুষের দিশা হয়ে তাদের ভয়ে অকবিদের বৈঠক হয়, কর্মসূচিও প্রকাশ পায়।
কবির প্রত্যঙ্গ -উপাঙ্গ তাদের সমালোচনায় বিদ্ধ হয়
নির্বিকার কবি রূদ্ধ হন শুধু শব্দমিছিল গর্জে ওঠে…

কবি তবুও কবিত্বকে বিসর্জন দেন না
কবিরা মৃত্যুতেই অমর হন।

ঘোরৎ ঘোরৎ

বুকের মধ্যে ক্ষয়কাশ নিয়ে ঘোরৎ ঘোরৎ করতে করতে রহিম সিগারেট ফুঁকতে থাকে আর রোমন্থিত হতে থাকে ফেলে আসা অতীত।
কতশত সুখস্মৃতি তাকে নাড়া দেয় আর মোচড় মারে দুঃস্মৃতির জমাট জমাট পুটলি।
সেই যে রাতে মা ঘরে ফিরে বলতেন “বুড় উঠে দেখ্ কত খাওয়ারতা এনেছি”………
রহিম দ্বিধান্বিত এই স্মৃতি কেনো একই সাথে বুক ভরিয়ে দিচ্ছে হাসিকান্নায়!
ঘোরৎ করে কোৎ মারে
এক খাবলা কফ ফেলে রহিম, শালা…..
খাবলা খাবলা রক্তের দলা!
সিগারেটে মারে টান…হুসসস.. ধুৎ দিনটাই অপয়া।

গোল্লাছুট, হাডুডু খেলা এখনকার ছেলেপেলে খেলেই না, বান্দরগুলা ভিডিও গেমের মধ্যে ঘাড় গুঁজে মাথামোটা করছে, হা হা হা……….
একবাচ্চা সেদিন বললো ‘গেম না খেলে বাচ্চারা বাঁচতে পারে না আঙ্কেল’ আচ্ছা গেম মানেই তো খেলা, খেলার কি খেলে?

এক টাকার চটপটি খেয়ে টিফিন পার করার কথা মনে পড়ে, মনে পড়ে স্যারেরা কতো আদর করতো……
কোনো কোনো স্যার তাকে দেখলেই হাসতো তার চেহারাটায় নাকি অমন।
এতো রাগ হতো…এখন আর রাগ হয়না
স্মৃতিটুকুই তো সম্বল!!
শেষ কবে গরুর মাংশ দাঁতে পিষেছে মনেই করতে পারে না। মা খুব ভালোবাসতো গরুর মাংশ, বাবাও। মনে হয় বংশীয় লোভ…..দাঁতইতো নেয় চিবাবে কি করে রহিম।

ছেলে যখন জন্মালো কি আনন্দ! থেকে থেকেই দাঁত বেরিয়ে পড়ছিলো!!

ছেলেটা তাকে ছেড়ে গেছে…এরকম হবেই তা সে জানতো; সেওতো তার বাবাকে মাকে ছেড়ে এসেছিলো। প্রস্তুতি ছিলো তবে ঘটনা যখন ঘটলো বুক ফেটে কান্না আসছিল, আচ্ছা বাবারও বোধ হয় এমনি হয়েছিলো!!
কি সুন্দর বুকের মধ্যে লেপ্টে থাকতো ছেলেটা একদম ব্যঙের ছাও….হাসতে হাসতে কেঁশে অস্থির রহিম

মা বাবা নেই, বউ নেই আছে শুধু রহিম, বুড় রহিম শেখ! মাঝে মাঝে আদুরে ‘বুড়’ ডাক ব্যাঙ্গাত্মক শোনে দুষ্টু ছেলে ছোকড়ার মুখে।
জীবন কত সংক্ষিপ্ত অথচ ঘটনাবহুল…
হা হা হা.. ঘোরৎ ঘোরৎ…..

গোধূলি

গোধূলির রক্তিম আভা সরিয়ে নিলেই রাত্রির গাঢ় অন্ধকার!
স্বচ্ছ চারিত্রিক বায়োগ্রাফী এই খানে পরিস্ফুটিত হয় জীবনের অনিবার্যতায় ।
সময়ের আবর্তনে চক্রাকারে ক্ষয়ে নষ্ট হয় ক্যারিকেচার

যাকে শেখানো হয়েছিল মানুষ সর্বোত্তম
সম্মান বিশ্বাস আর সহযোগিতা করতে
সমসাময়িক সকলেরে
সে এখন শিক্ষার যাঁতাকলে পিষ্ট
নির্ধারিত হয়েছে একাকীত্ব ।

যাকে বলা হয়েছিলো জীবনকে কাছ থেকে দেখো বিশ্লেষণ কর কি,কেনো,কোথায়,কিভাবে?
সে এখন উন্মাদ,ভবঘুরে….

যাকে দেখানো হয়েছিলো ঠিক কতটুকু হৃদয় বিদারক ঘটনাতে একফোঁটা চোখের পানি
দর্শকের ছিনায় দীর্ঘশ্বাসের মোচড় খেলায়
অদ্ভূত পৈশাচিক পাতা ফাঁদে
তাঁর চোখ অঝোরে কাঁদে, কোন দর্শকই নাই।

সারারাত্রির ছিন্নভিন্ন ছায়া-আবছায়া,
অপলক টকটকে লাল চোখ অবশেষে
শান্ত সূর্যে মিশে স্বস্তির দিবালোকে আছড়ে ফেলে….

ফের কর্মযজ্ঞ, ফের লড়াকু পুরুষ!
সংগ্রাম সাফল্য বাঁচবার আনন্দ
ঠিক যেনো ঐ গোধূলি লগ্ন!!

সাহিত্য-ডেস্ক/আজ-আগামী/২০২১/০৭/২৯/নী/জ@কপিরাইট_সংরক্ষিত

কবি নীলকন্ঠ জয়

সকল পোস্ট : নীলকন্ঠ জয়

মন্তব্য করুন