ঘুরে আসুন লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

অলোক আচার্য — যাদের ঘুরে বেড়ানো নেশার মতো বিশেষ করে কোনো প্রাচীন জমিদার বাড়ি, যদি কাউকে সুবিশাল শান্ত পুকুরের জল কবিতার মতো টেনে নেয়, হারিয়ে যায় সেই সময়ে তাহলে আপনি নিঃসন্দেহে ঘুরে আসতে পারেন বরিশালের লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি থেকে। বরিশাল শহরের নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে আপনাকে অটো রিক্সা নিয়ে যেতে হবে নতুন বাজার। নতুন বাজার নেমে সেখান থেকে উঠতে হবে লাকুটিয়ার মাহেন্দ্র যানে। মাহেন্দ্রতে চেপে মিনিট বিশ-পঁচিশ গিয়ে আপনাকে নামতে হবে বাবুর বাজার নামক স’ানে। আবার বরিশাল থেকে রিজার্ভ মাহেন্দ্র বা অটোতেও যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে ভাড়া একটু বেশি লাগবে। বাবুর বাজার যেখানে আপনি নামবেন সেখান থেকেই স্পষ্ট জমিদার বাড়ি দেখা যায়। মিনিট তিনেক হাঁটলেই আপনি পৌছে যাবেন জমিদার বাড়ির মূল ভবনে। ভবন বলতে সময়ের আবর্তে জীর্ণ দ্বিতল এক ভবন মাত্র। যার গায়ে ইতিহাসের অবহেলা স্পষ্ট। মনটা খারাপ হয়ে যায়। যেখানে একসময় আলো ঝলমল করতো, পাইক পেয়াদার হাক-ডাক ছিল সেখানে এখন নিরবতা। প্রায় ভগ্নাবশেষটুকু অবশিষ্ট আছে। মূল ভবন পাওয়ার আগেই কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন মন্দির আপনার দৃষ্টি কেড়ে নিবে। একটি মঠ দেখতে আপনাকে সোজা অনেক উঁচুতে তাকাতে হবে। এই মন্দিরটির অবস’া এখনো বেশ ভালো আছে। বাকিগুলো কোনোভাবে টিকে আছে। ইট বিছানো পথের ডানপাশে এগুলো অবসি’ত। গাছপালায় ভরা নির্জন এক মায়াবী পরিবেশ। যেখানে না চাইলেও নষ্টালজিয়ায় ডুবে যেতে হয়। হারিয়ে যেতে হয় সেই জমিদারের সময়ে। একসময় যে মন্দির ঘিরে উৎসব হতো এখন সেখানে সুনসান নিরবতা। এগুলোর বেশিরভাগই আটচালা দেউলরীতিতে তৈরি হয়েছে। রয়েছে রক্ষণাবেক্ষণের অভাব। আরও অনেক জমিদার বাড়ির মতোই এর অবস’াও জরাজীর্ণ। জানা যায়, এই বাড়িটিকে ঘিরে রয়েছে প্রায় চারশ বছরের ইতিহাস। তথ্যে জানা যায়, এই ভবনটি তৈরি করেছিলেন রুপচন্দ্র রায়ের পৌত্র রাজচন্দ্র রায়। আনুমানিক ১৬০০ বা ১৭০০ সালে ভবনটি নির্মিত হয়েছে। জমিদার বাড়ি প্রবেশের পথের বা দিকে শান বাধানো ঘাট। এর শান্ত স্নিগ্ধ জল আপনাকে পথের ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করবে। বাড়িটি এখন বিএডিসির তত্ত্বাবধানে আছে। পেছনে পাকা উঠান রয়েছে। দর্শনার্থীরা ওই জরাজীর্ণ ভবন ঘুরে দেখছে, সেলফি তুলছে। খোলা পাশে তাকালে চোখে পরবে ফসলি জমি দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ। সেখানে তাকালে চোখ জুড়িয়ে যেতে বাধ্য।

কবি অলোক আচার্য

সকল পোস্ট : অলোক আচার্য