জীবনানন্দ দাশ; আত্মপ্রচার বিমুখ একজন যুগ শ্রেষ্ঠ//অলোক আচার্য

আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম রুপকার, এক মহাবিস্ময়ের নাম জীবনানন্দ দাশ। কবিগুরু রবীদ্রনাথ ঠাকুর তার কবিতাকে বলেছিলেন চিত্ররুপময়। বুদ্ধদেববসু তাকে বলেছেন নির্জনতম কবি। এছাড়াও রুপসী বাংলার কবি, তিমির হননের কবি উপনামগুলা তার নামের সাথে যুগ হয়ে গেছে। তিনি রবীদ্র পরবর্তী যুগে সবচেয়ে আধুনিক কবিতায় অন্যতম। যার কবিতায় শুধুই মুগ্ধতা। জীবনানদ দাশের হাত ধরে বাংলা কবিতা সমৃদ্ধ হয়েছে, কবিতা খুঁযে পেয়েছে এক নতুন উদ্যামতা। কবিতার ধারায় পরিবর্তন আসা। বহু বছর পর তা হতে পারে শতবর্ষ ব্যাপী বা তারও অধিককাল ধরে একটি ধারা চল আসে। সেখান থাকে কবিতার গতি বদলে নতুন দিক বাঁক নেয় কোনো একজন বা একের অধিক কবির হাত ধরেই। জন্ম হয় নতুন ধারা। আধুনিক কবিতা যার হাত ধরে বাঁক নিয়েছে তিনি জিবনান্দ দাশ। কবিতায় এমন একটি পরিবর্তন এনেছেন যেখান শুধুই নিজস্বতা।জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ সালর ১৮ ফব্রুয়ারি বরিশালে জন্মগ্রহণ করন। এখানেই কবির বিখ্যাত কবিতার ধাঁনসিঁড়ি অবস্থিত। কবির জন্মদাত্রীও স্বনামধন্য কবি কুসুমকুমারী দাশ। মা’র কবিতা লেখার ধারাই স্থানকেও প্রভাবিত করেছিল। কবি ছিলেন মা-বাবার বড় স্থান। তার ডাকনাম ছিল মিলু। শিক্ষাজীবনের শেষ তিনি ১৯১৯ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স সহ বিএ ডিগ্রি এবং ১৯২১ সাল কলকাতা বিশবিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে দ্বিতীয় শ্রণিতে এম,এ ডিগ্রি লাভ করেন। এ সময় থেকেই কবির কবিতা বিভিন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে এবং তা প্রশংসিত হয়। কলকাতা,ঢাকা এবং বিভিন সাহিত্য পাতায় নিয়মিত তার কবিতা প্রকাশিত হতে থাকে। যা সেসময় সাহিত্যিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়। তার সহধর্মিণীর নাম লাবণ্য গুপ্ত। পড়তেন ঢাকার ইডেন কলেজ। এরপর থেকে দীর্ঘদিন কবি কর্মহীন ছিলেন। যা তাকে হতাশাগ্রস্থ করে তোলে। অভাব ছিল কবির নিত্যসঙ্গী। এসব উপেক্ষা করেই একের পর এক কালজয়ী কবিতা লিখে গেছেন। ১৯৩১ সালে কবির প্রথম স্থান মঞ্জুশ্রীর জন্ম হয়।
রবীন্দ্র পরবর্তী যুগে যার কবিতা সবচেয়ে বেশি সমাদৃত, অনুদ্রিত তিনি কবি জীবনানন্দ দাশ। তার কবিতায় উঠে এসেছে নারী, প্রেম, রোমান্টিকতা,ভালোবাসা, দেশাত্তবোধ ইত্যাদি। রবীন্দ্র প্রভাব বলয় থেকে মুক্ত করেছে তার কবিতা। তার কবিতার ধারায় আজ আধুনিক কবিদের কবিতা রচিত হচ্ছে। কবিতার পাশাপাশি তিনি লিখেছেন উপন্যাস, প্রবন্ধ ও গল্প। তবে বেক্তিগত জীবনে ছিলেন সমসাময়িক আধুনিক কবিদের মধ্য সবচেয়ে ব‍্যার্থ। তার সৃষ্টির সমাদর তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় দেখে জেতে পারেননি। বিষণ্ণ , স্বপ্নময়, আশ্চর্য শোভাময় কবিতার মধ্য ক্লান্তি, হতাশা, বিষাদ, সোনার টুকরোর মতন কবিতায় ফুটে উঠেছে। জীবনানন্দ দাশ ছিলেন নিভৃতচারী কবি। আত্মপ্রচারে বিমুখতার কারণে তার সৃষ্টি জীবদ্দশায় বিকশিত হয়নি। তার কবিতা নিয়ে আজ গবেষণা হয়। পত্রিকায় আলোচনা লেখা হয়। কয়েকটি ভাষায় তার কবিতা অনুদিত হয়েছে। কবির অকাল মৃত্যুর পর বুহু ছোটোগল্প, প্রবন্ধ এবং কবিতা পাওয়া গেছে। সেসব প্রকাশিত হয়েছে। ১৮৫৭ সালে প্রকাশিত হয়েছে রূপসী বাংলা এবং ১৯৬১ সালে বেলা-অবেলা-কালবেলা ইত্যাদি। জীবিত অবস্থায় কবি যে স্বীকৃতি পাননি আজ পাচ্ছেন তার ঢের বেশি। শুধু কবি নেই আমাদের মাছে। তার কবিতা আধুনিক কবিদের পথ দেখিয়ে চলেছে নতুন রত্নভান্দারে।

কবি অলোক আচার্য

সকল পোস্ট : অলোক আচার্য