নিষেধাজ্ঞা শেষে রোববার রাত থেকে পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ ধরা শুরু

২২ দিন মা’ইলিশ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা শেষে রোববার রাত ১২ টার পর থেকে পদ্মা-মেঘনা নদীতে ইলিশ ধরতে নামছে জেলেরা। ইতোমধ্যে জেলার ৪ উপজেলার ৫১ হাজার নিবন্ধিত জেলে জাল ও নৌকা নিয়ে নদীতে মাছ ধরছে।
গতকাল রোববার চাঁদপুর সদর উপজেলার রগুনাথপুর, চান্দ্রা, হরিনা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে ইলিশ আহরণের জন্য জাল প্রস্তুত করতে ব্যস্ত রয়েছেন জেলেরা। আবার অনেকে তাদের নৌকাগুলো এ কয়দিনে ঠিকঠাক করে রেখেছেন।
ইলিশ প্রজনন রক্ষায় চলতি মাসের ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত পদ্মা-মেঘনা নদীতে ইলিশসহ সকল ধরনের মাছ আহরণ, ক্রয়-বিক্রয়, মওজুদ ও পরিবহন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করে সরকার। মা ইলিশ নিরাপদে ডিম ছাড়ার জন্য চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তরের ষাটনল থেকে লক্ষীপুর জেলার চর আলেকজেন্ডার পর্যন্ত ১শ’ কিলোমিটার এলাকাকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করে সরকার।
সেই আলোকে এখানে এ ২২ দিন সকল প্রকার মাছ আহরন নিষিদ্ধ করা হয়। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত চাঁদপুর জেলা টাস্কফোর্স অভয়াশ্রম চলাকালে এসব নদীতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে নদীতে ২৪ ঘন্টা কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশের টিমের অভিযান চালিয়েছে। যারা সরকারি নির্দেশ অমান্য করে নদীতে নেমেছে তারা বিভিন্ন ধরনের শাস্তির সম্মুখীন হয়েছেন।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনিস্টিটিউট চাঁদপুর নদী কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও গবেষক ড. মাসুদ হোসেন খাঁন বাসসকে জানান, ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে এ অভিযানের ফলে ৬ লাখ ৬৮ হাজার ২৯১ কেজি ডিম উৎপাদন হয়। ফলে ৩৯ হাজার ২৬৮ কেজি জাটকা যুক্ত হয়, সর্বোপরি জেলেরা ৩ লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ আহরণ করে। তিনি বলেন, এ বছর (১৭-১৮ অর্থ বছরে) ইলিশের উৎপাদন ৫ লাখ মেট্রিক টন ছাড়াবে বলে আশা করি । শুধু ইলিশই নয়, নদীর অন্যান্য যেসব মাছ রয়েছে সেসব মাছ নদীর মোহনায় ডিম ছাড়েছে এতে ইলিশের পাশা-পাশি নদীর অন্যান্য প্রজাতির মাছও বৃদ্ধি পাবে।
ড. মাসুদ হোসেন আরো জানান, ২০১৭ সালে ১ থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত এ সব নদীতে ২২ দিন মাছ ধরা বন্ধ ছিল। এ বছর ৬ অক্টোবর রাত ১২টা থেকে করা হয়েছে। তিনি বলেন, এর কারণ হলো এ ২২ দিনের মধ্যে একটি অমবশ্যা ও একটি পূর্ণিমা পড়েছে। সাধারণত যেকোন প্রজাতির মাছ অমবশ্যা ও পূর্ণিমায় ডিম ছাড়ার জন্য সাগর থেকে মিষ্টি পানিতে নদীর মোহনায় চলে আসে। তাই সময়টা ১ অক্টেবরের পরিবর্তে ৬ অক্টোবর রাত ১২ টা থেকে সকল মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো। এ সময়টা চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (ইলিশ গবেষক) ড. আনিছুর রহমানের নেতৃত্বে একটি টিম নোয়াখালির হাতিয়া, ভোলা, চাঁদপুর নদীর মোহনায় ইলিশ মাছের ডিম ছাড়ার প্রকৃতির উপর গবেষণা করেছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী জানান, গত কয়েক বছর জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করায় ইলিশের উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের কয়েকটি অভয়াশ্রমের মধ্যে চাঁদপুরের ১শ’ কিলোমিটার এলাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরো জানান, জাতীয় মৎস্য সম্পদ ইলিশ রক্ষা এবং নিরাপদে মা ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য জেলা ট্রাস্কফোর্স ব্যাপক অভিজান পরিচালনা করেছে এবং কিছু অসাধু জেলেকে শাস্তির আওতায় এনেছে। আর এ ২২ দিন জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, নৌ-পুলিশ, কোস্টাগার্ড, জেলা মৎস্য বিভাগ, উপজেলা প্রশাসন ২৪ ঘন্টা রুটিন অনুযায়ী নদীতে দায়িত্ব পালন করেছেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানাযায়, গত ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর ২০১৮ পর্যন্ত এ ২২ দিনে চাঁদপুরে মা ইলিশ কার্যক্রমে জেলা টাস্কফোর্স নদীতে ১৬৩ টি অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে ১৪৩ টি মামলা হয়েছে এর মধ্যে সাজা দেয়া হয় ১৩৩ জন জেলেকে। তাদের মধ্যে ১১১ জন জেলেকে ১ বছর করে, ১২ জেলেকে ১ মাস ও ৩ জনকে ১৫ দিন করে কারাদন্ড দেয়া হয়। সর্ব মোট মামলা হয়েছে ১৫০টি। ৭.৯৪২ মেঃটন মা ইলিশ মাছ জব্দ করা হয়েছে এবং ৪১ টি জেলে নৌকাসহ ১৯.৫৪৬ লক্ষ মিটার কারেন্ট ও চান্দিজাল জাল জব্দ করা হয়েছে। জালগুলো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।

মন্তব্য করুন