বাঁক বদলের রুপকারের প্রস্থান

আগুনপাখি এবং আরও কালজয়ী গল্প, উপন্যাসের চরিত্র জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক ধ্রুবতারা। বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্রের প্রস্থানে তৈরি হল এক বিশাল শূন্যতা। বাংলা ছোটোগল্পের রাজপুত্র বলে তার খ্যাতি রয়েছে। তিনি বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কথাসাহিত্যিক হিসেবে পরিগণিত। ষাটের দশকে আবির্ভূত এই কথাসাহিত্যিক তার সুঠাম গদ্য এবং মর্মস্পর্শী বর্ণনাভঙ্গির জন্য প্রসিদ্ধ।ষাটের দশকের বাক বদলের অন্যতম রুপকার হাসান আজিজুল হক ৮২ বছর বয়সে মারা যান। তার চলে যাওয়ায় সাহিত্য জগতে তৈরি হয়েছে অসীম শূন্যতা। তার গল্পের চরিত্র, গতিময়তা মুগ্ধ করেছে পাঠকদের। হাসান আজিজুল হোক জন্মগ্রহণ করেন ২ ফেব্রুয়ারী ১৯৩৯ সালে।তিনি ১৯৫৪ সালে যবগ্রাম মহারানী কাশীশ্বরী উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৫৬ সালে খুলনা শহরে অদূরে দৌলতপুরের ব্রজলাল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৫৮ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজে থেকে দর্শন এ সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬০ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি পিএইচডি অধ্যয়নের জন্য অস্ট্রেলিয়ার গিয়েছিলেন। কিন্তু অধ্যয়ন শেষ না করেই দেশে প্রত্যাবর্তন করেন।তিনি ছিলেন একজন শিক্ষক ১৯৬০ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন কলেজে শিক্ষকতা করেন।শিক্ষকতা করতে গিয়েই তিনি লেখালেখিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ১৯৭৩ এ তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন।তিনি ছিলেন একজন লেখক এবং শিক্ষক। রাজশাহী কলেজে পড়ার সময় মিসবাহুল আজিমের সম্পাদনায় প্রকাশিত ভাজপত্র ‘চারপাতায়’ তার প্রথম লেখা ছাপা হয়।স্কুল জিবনেও তিনি লেখালেখি করেছেন। তবে সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত সমকাল পত্রিকায় ১৯৬০ সালে তার ‘শকুন’ গল্প প্রকাশিত হলে সাহিত্যমহলে দৃষ্টি আকর্ষণ হয়।এর আগেও তার গল্প প্রকাশ হয়েছিল।তার সুঠাম গদ্য এবং মর্মস্পর্শী বর্ণনার জন্য তিনি ছিলেন প্রসিদ্ধ।তার স্বকীয়তা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছিল। গল্প, গল্পের চরিত্র, বর্ণনায় একটি আলাদা ধাঁচ ছিল। তিনি বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য গল্প রচনা করেছেন।
তার শকুন, তৃষ্ণা, বিমর্ষ রাত্রি, ফেরা, মন তার শঙ্খিনী,জীবন ঘষে আগুন, ঘরগেরস্তি সহ আরও জনপ্রিয় গল্প লিখেছেন।তার বিখ্যাত উপন্যাস আগুনপাখি রচিত হয় ২০০৬ সালে।সাহিত্য সাধনার দীর্ঘ সময় পর তার উপন্যাস আসে। তার গল্পগ্রন্থের মধ্য রয়েছে- আত্মজা ও একটি করবী গাছ, নির্বাচিত গল্প, রোদে যাবো, মা মেয়ের সংসার, জীবন ঘষে আগুন, সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য, রাঢ়বঙ্গের গল্প ইত্যাদি। তার প্রবন্ধের মধ্যে রয়েছে কথাসাহিত্যের কথকতা, সক্রেটিস, অপ্রকাশের ভার,কথা লেখা কথা, ছড়ানো ছিটানো, লোকযাত্রা আধুনিক সাহিত্য, কে বাঁচে কে বাঁচায় এবং তার লেখা উপন্যাস আগুনপাখি,সাবিত্রী উপাখ্যান, শিউলি ও শামুক। এছাড়াও লিখেছেন শিশুসাহিত্য, স্মৃতিকথা বা আত্মজৈবনিক গ্রন্থ ফিরে যাই ফিরে আসি, উঁকি দিয়ে দিগন্ত, লন্ডনের ডায়েরি, টান। এসব ছাড়াও তার সম্পাদিত গ্রন্থও রয়েছে বেশ কয়েকটি।হাসান আজিজুল হক ১৯৬৭ সালে আদমজী সাহিত্য পুরুস্কার, ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরুস্কার লাভ করেন। এরপর লেখক শিবির পুরুস্কার,অলক্ত সাহিত্য পুরুস্কার,আলাওল সাহিত্য পুরুস্কার,অগ্রণী ব্যাংক সাহিত্য পুরুস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরুস্কার পান। ১৯৯৯ সালে তাকে একুশে পুরুস্কারে ভূষিত করে সরকার। এরপর ২০১৯ সালে তিনি পান সর্বচো বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরুস্কার।ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আনন্দ পুরুস্কারও তিনি অর্জন করেছেন।

অ.আ প্রকাশকাল- 7:05pm

কবি অলোক আচার্য

সকল পোস্ট : অলোক আচার্য