বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বাংলাওয়াশ/মারুফ বিল্লাহ

ইতিহাস হারকে যেমন স্রেফ হার হিসাবে লিখে রাখে, জয়কেও ঠিক তেমন জয় হিসাবেই লিখে রাখে। আপনি কীভাবে হেরেছেন, কতটা লজ্জাজনক ছিল হার, সেটা হারের পাশে লিখা থাকে না, তেমনই জয়টা কতসুন্দর ছিল, সেটাও লিখা থাকে না। এসব লিখা থাকে মানুষের চোখের পাতায়, স্মৃতির দেয়ালে, একরাশ হতাশা অথবা মুগ্ধতায়।

ইতিহাস বলে ২০০৯ সালে সাকিব আল হাসানের ৯২ রানের একটা ইনিংসে আমরা শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছিলাম, স্রেফ এতটুকুই। আমরা যারা শিশু বয়সে সেই ম্যাচ টিভির সামনে দেখেছিলাম, আমরা জানি, সেই ম্যাচ কী ছিল।ইতিহাস বলে, ২০১২ সালে পাকিস্তানের কাছে হেরে এশিয়া কাপে রানার্সআপ হয়েছিল বাংলাদেশ। আমরা আরও বেশী কিছু জানি, আমরা একরাশ কষ্টের স্মৃতি বয়ে বেড়ায় আজও, দশ বছর পরেও, একটু চিন্তা করলেই আফসোস হয়, ইস! সেদিন যদি মাহমুদউল্লাহ শেষ ওভারে আরেকটু দায়িত্ব নিয়ে খেলত, নাজিমুদ্দিন, নাসির একটা বল ডট যদি কম খেলত, বা শেষ ওভারে নাজমুল যদি নো বল না করত!ভূমিকা সম্ভবত অনেক বড় হয়ে গেল, প্রসঙ্গে আসি,আমরা এর আগে অনেক বড় বড় সিরিজ জিতেছি, বড় বড় ম্যাচ জিতেছি, সেটার তুলনায় এই সিরিজকে ইতিহাস হয়ত আলাদা করতে পারবে না, কিন্তু একজন ফ্যান হিসাবে অবশ্যই এই সিরিজ আলাদা, এই সিরিজের স্বাদ আলাদা, স্মৃতি আলাদা। বর্তমান বাংলাদেশ ক্রিকেট সমর্থকদের মধ্যে যে অসুস্থ গ্রুপিংটা বিদ্যমান, এটা কখনোই রুচিশীল সমর্থকদের আচরণ হতে পারে না। নির্দিষ্ট কিছু ক্রিকেটার অক্রিকেটীয় পারফরম্যান্সকে ডিফেন্স করতে তারা যা-তা শুরু করতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করেন না। একজন ক্রিকেটার ২০১৮ সালে ভালো খেলেছিলো বলে, তাকে এখনও পূজা করতে হবে, এই ধারণা কোন সুস্থ মানুষ করতে পারে? গণিতের হিসাবে ২০১৮ সাল বিগত হয়েছে ৫ বছর। এই অসুস্থ সমর্থকদের জন্যই বাংলাদেশ দলে বেশ কিছু ক্রিকেটার বহন করা লাগত, অনেকেই বলতে পারেন, ফ্যানদের জন্য কেন বহন করতে হবে? হয়।

এই দেশের ক্রিকেটে ফ্যানদের ডিশিসনে অনেক কিছু হয়। যাহোক, সেই ধারা ভেঙে ফেলার সিরিজ ছিল এটি। এই সিরিজের ফলটা জাস্ট উলটো হলেই আসল ফেসটা দেখতে পেতেন। তরুণদের এই দল নিয়ে দুজন ক্রিকেটারের স্ত্রী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি মক করেছিলো খুব বেশীদিন আগে না। তরুণদের কাছে এই সিরিজ ছিল নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণের আর যারা মক করেছিল, তাদের বরাবর যোগ্য জবাব ছুড়ে দেয়ার। সাকিব আল হাসান আজকে প্রেস কনফারেন্সে বলেছে, এই টিমের সবাই পারফর্মার। এই ছোট্ট কথাটা ক’জন অধিনায়ক বলার সাহস রাখেন? সাকিব রেখেছেন, কারণ এই টিম করে দেখিয়েছে। শান্ত, লিটন, মিরাজ, মুস্তাফিজ, তাস্কিন, হাসান, রণি, তৌহিদ, নাসুমরা পারফর্মার। কেউ কাউন্টার দিতে পারবেন? এই টিমে ভাইস ক্যাপ্টেনকে ৩ ম্যাচে বেঞ্চড করা হয়েছে। প্রতিটা ম্যাচ জেতার পরও উইনিং কম্বিনেশন নামক অতীত টার্মকে জাস্ট ছুড়ে ফেলা হয়েছে। বাংলাদেশ দল থেকে দাবী করা হয়েছে, আমরা এশিয়ার অন্যতম সেরা ফিল্ডিং টিম (এই মুহুর্তে)। এগুলা ইতিহাসে লেখা থাকবে না, থাকে না, এগুলা ইতিহাস তৈরি করে শুধু।বোর্ড সভাপতি থেকে শুরু করে নির্বাচক প্যানেল, কোচিং স্টাফ এবং স্কোয়াড, প্রত্যেকে এই জয়ে সমানভাবে অধিনায়ককে সহযোগিতা করেছে বলে আমার বিশ্বাস। সকলের প্রতি একজন সাধারণ সমর্থক হিসাবে কৃতজ্ঞতা। চাওয়া দুইটা। এক, এই ধারা চলমান থাক। দুই, অন্যান্য ফরম্যাটেও এই ধারা চালু হক। প্রত্যেক অধিনায়ক যেন কনফিডেন্স নিয়ে বলতে পারে, আমার টিমের সবাই পারফর্মার, তবেই এগিয়ে যাবে দেশের ক্রিকেট, স্বপ্নের ক্রিকেট।