ব্লেসলেট ।। সুরাইয়া নার্গিস

গল্প । ঈদ সংখ্যা

– স্যার একটা প্রশ্ন করবো? কথাটা বলেই একজন লোক পিছনে এসে দাঁড়াল। আতিব পিছনে ফিরে তাকাল জি শিওর বলুন, কী বলতে চান।

– স্যার আমি এই দোকনের কর্মচারী, প্রায় ১০ বছর এখানে আছি। প্রায় প্রতিদিন এখানে ৩০/৫০ হাজার টাকার কসমেটিক্স,বিভিন্ন পণ্য বেচাকেনা হয়। তবে এই ফেব্রুয়ারি মাসটা আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে বলে হয়ত ১-১৪ তারিখ পর্যন্ত সারা বছরের তুলনায় বেচাকেনা বেশি হয়। বলতে গেলে ১ লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে যায়।

-ভেরী গুড, খুশি হলাম। কিন্তু আপনি তো একটা প্রশ্ন করার অনুমতি নিয়েছিলেন। আমাকে আপনার দোকান সম্পর্কে ধারণা দেওয়া নয় বলেই মুচকি হাসল আতিব। ‘সো সরি স্যার প্রশ্নটা করার আগে আমরা কিছুটা আলাপতারিতা করতেই পারি’ বলেই কর্মচারী লোকটা হাসলো। অবশ্যই আপনি বলুন বলেই আতিব আরেকটা ব্লেসলেট হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছিল আর ফোন গ্যালারীর সুন্দর দুটো হাতের সাথে মিলাচ্ছিলো। তারপর ‘জ্বী স্যার!বলছি, মাস শেষে এই শো-রুমে প্রায় ১ কোটি থেকে ৮০ লক্ষ টাকার আসবাবপত্র কসমেটিক্স, পোশাক, ইলেকট্রনিক্স জিনিস আছে, সবাই আসে পছন্দ করে কিনে নিয়ে যায়। আপনি একমাত্র ব্যক্তি যে কিনা পাঁচ ঘন্টা ধরে খুঁজেও কোনকিছু পছন্দ করতে পারছেন না, নাকি কিন্তু আগ্রহী নন। সেটা আমরা এখনো অনুমান করতে পারছি না। স্যার যদি আপনার সমস্যাটা বলতেন তাহলে আমরা সাহায্য করতে পারতাম বা অর্ডার দিলে তৈরি করে আনিয়ে দিতাম।’

-ইস্,সো সুইট এটাই তোকে মানাবে ভালো বলেই আতিব কাঁচ খুলে ব্লেসলেটটা হাতে নিল, ধন্যবাদ পাঁচ ঘন্টায় পছন্দ করতে পারলাম। কর্মচারীসহ আশেপাশে প্রায় সকাল ক্রেতা আতিবের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকাল, এই মুহূর্তে মনে হচ্ছিল সে অন্যগ্রহের প্রাণী। সরি বলে আতিব টাকা দেওয়ার জন্য ক্যাশ কাউন্টারের দিকে এগিয়ে আসল পিচন পিচন ওই দুজন কর্মচারী স্যার অনুমতি পেলে আরেকটা প্রশ্ন করতে চাই।

-প্লীজ বলুন, স্যার আপনি পাঁচ ঘন্টা সময় নিয়ে একটা ব্লেসলেট কিনলেন এই জন্য আমরা আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানাছি। এত যত্নকরে যে গিফটটা কিনলেন অবশ্যই তা আপনার স্পেশাল মানুষটার জন্য, কথাটা ব্যক্তিগত তবুও জানার কৌতুহল। সেই সৌভাগ্যবতী ব্যাক্তিটা কে? যার জন্য এটা কিনলেন।আতিব হা হা হা হা হেসে দিয়ে কাউন্টারে ১৯৯০ টাকা জমা দিল।

সেই সৌভাগ্যবতী ব্যক্তিটা আমার বেস্টফ্রেন্ড যাকে আমি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি বলেই আতিব বের হয়ে আসল। বিকাল ৪.০০ টা বাজে রাত ১২ টা বাজতে এখনো অনেক বাকী অর্পিতা সকাল থেকে ফোন মেসেজ করেই যাচ্ছে আতিব রিসিভ বা কলব্যাক, মেসেজ রিপ্লাইও করছে না, এবার অর্পিতা আতিবের বাসার ল্যান্ড লাইনে ফোন দিল মাও কিছু জানাল না। অর্পিতা রাতে না খেয়েই শুয়ে পড়ল রাগ, অভিমানে দু-চোখের পাতা এক করতে পারল না। কাল আমার জন্মদিন আতিব সেটা ভুলে গেছে ভাবতে ভাবতে কয়েক ফোঁটা চোখের জল গড়িয়ে পড়ল।

রাত ১১টায় আতিব বাসা থেকে গাড়ি নিয়ে সোজা অর্পিতার বাসার সামনে গিয়ে দাঁড়াল, অর্পিতার নাম্বারটা ডায়ালে রাখল পাগলিটা হয়ত সারাদিন খুব কষ্টে কেটেছে। আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারে নাই। রিং হয়েই যাচ্ছি অর্পিতা ফোন ধরে না, রাত ১১.৪৯ মিনিট আর মাত্র ১১ মিনিট বাকি! আতিব মেসেজ দিল পাগলি বেলকনিতে আয়।অর্পিতা ছল ছল চোখে বিছানা ছেড়ে উঠে আসে। আতিব উপরে চেয়ে আছে পরিষ্কার আকাশ কিছু তারার আনাগোনা, চাঁদটা বড় একা অর্পিতা আসলেই চাঁদটা হেসে ওঠবে কিন্তু তার দেখা নেই। আতিব হাতের গোলাপের তোড়াটার দিকে নিষ্পলক চেয়ে থাকে এই ফেব্রুয়ারিটাও গেল অর্পিতাকে ভালোবাসার কথা বলা হলো না।

অর্পিতা জানলার কাঁচ সরিয়ে নিচে তাকায় সব অন্ধকার ভাবলো শুয়ে পড়বে, তবু একবার বেলকনিটা ঘুরে আসা যাক। অর্পিতা বারান্দায় এসে নিচে চোখ ফেরাল পাগলটা গোলাপের তোড়া হাতে হাঁটুঘেরে বসে আছে অর্পিতা নিচে নেমে আসে।

I love you. Many many happy returns of the birthday my sweet heart. অর্পিতা হেসে দিল Tnq u so much. সারাদিন..বলতেই আতিব মুখ চেপে ধরলো না, আজ তোমার জন্মদিন সারপ্রাইজ দিব তাই সারাদিন কষ্ট দিলাম বলেই অর্পিতার কপালে চুমু এঁকে দিল, অর্পিতা আবেগ আপ্লুত হয়ে আতিবকে জড়িয়ে ধরল। আতিব ভালোবেসে অর্পিতাকে জড়িয়ে নিল। কয়েক মিনিটে অর্পিতা অনুভব করলো সে আর নিজের মাঝে নেই, সবকিছু নতুন লাগছে আতিবের স্পর্শ, ভালোলাগার অনুভূতিগুলো রঙিন মনে হচ্ছে।আমরা তো বন্ধু তাহলে আতিবের ছোঁয়ায় আমার ফিলিংগুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে কেন? তবে কি আমি আতিবকে ভালোবেসে ফেলছি? কখনো না আমরা তো প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, বন্ধু থাকব এর বাইরে আমরা কোন সম্পর্কে জড়াব না। অর্পিতা নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়, আতিব লজ্জাবোধ করে সাময়িক দূরত্বে অবস্থান নেয় শুভ জন্মদিন দোস্ত বলেই আতিব ব্লেসলেটটা অর্পিতার দিকে এগিয়ে দেয়। ওয়াও দারুণ বলেই অর্পিতা তার হাতটা এগিয়ে দেয় আতিবের দিকে। আমি চাইনি তোর আগে কেউ আমাকে জন্মদিনের উইস করুক, তাই কথা না বলাতে কষ্ট হচ্ছিল। হুম আমিও তাই! আমার আগে যাতে কেউ তোকে উইস করতে না পারে তাই রাতেই শুভেচ্ছা জানাতে চলে আসলাম। আতিব অর্পিতার হাতে ব্লেসলেট চুড়ি পরিয়ে দেয়, ধন্যবাদ বন্ধু বলেই ভিতরে যাবার তাড়া দেখাল অর্পিতা।আতিব আরো কিছু বলতে চেয়েও থেমে গেল, ওকে যাও বাই, কাল জন্মদিনের পার্টিতে দেখা হবে, বাই।অর্পিতাও মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে চলে গেল। আতিব বাসায় ফিরে এলো।

কেটে গেল বেশ কিছুদিন আতিবের মনে, কল্পনায় সবখানে অর্পিতার বসবাস। একদিন অর্পিতাকে বললো সে তার পছন্দের মানুষকে ব্লেসলেট গিফট করছে। এক দুই কথায় অর্পিতা রাগ করলো আতিবকে কড়া করে শাসন করলো, আমরা জাস্ট বন্ধু প্রেমিক/প্রেমিকা নই। আতিব মনে মনে কষ্ট পেল। এক বন্ধুর কাছে জানল আতিব তাকে ভালোবাসে তাই সে রাগ করে আতিবকে ব্লেসলেটটা ফিরিয়ে দিল। অর্পিতা বাবা মায়ের পছন্দে বিয়ে করবে তাই আতিবের সাথে ইচ্ছে করেই দূরত্ব তৈরি করল।ফোনে যোগাযোগ বন্ধ, মেসেজে কথা হয়না, দেখা করে না। এক বান্ধবীর মাধ্যমে অর্পিতা ব্লেসলেটটা আতিবকে পাঠিয়ে দেয়।ব্লেসলেট হাতে পেয়ে আতিব খুব কান্না করে এটা আমার কাছে থাকলে আমার কষ্ট হবে আতিব ব্লেসলেটটা নিয়ে সোজা তিন তলার সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়। একটা হাতুরি দিয়ে পিঠাতে পিঠাতে ব্লেসলেটটা প্রথমে তেতলে তারপর ভেঙ্গে ফেলে আর চোখের পানিতে শার্টের কলার ভিজে যায়।
সুরাইয়া নার্গিস
সুরাইয়া sent Today at 18:19
অর্পিতা মামণি তোমার ফোন বাজেছে বলেই মা ফোনাটা অর্পিতার হাতে দেয়। আতিব ফোন করেছে, নাও কথা বলো।অর্পিতা আতিবের হ্যালো শোনেই চমকে ওঠে, আতিব দোস্ত তুই কাঁদছিস? তোর কি হয়েছে আমাকে বল, প্লীজ! গলাটা ভেজা মনে হচ্ছে। আতিব চোখের জল মুছে বললো তোকে অনেকদিন দেখিনা একবার ভিডিও কল দিবি? প্লীজ, তোকে দেখব।মৃদুস্বরে রাস্তায় গাড়ীর আওয়াজ শোনা যাচ্ছে, চারপাশে সুনসান নীরবতা, আতিব তুই কোথায়? চিন্তিত কন্ঠে প্রশ্ন করে অর্পিতা। দোস্ত তুই ভিডিও কল দে দেখতে পারবি আমি কোথায় আছি, কী করতে চলেছি।

অর্পিতা মা, বাবাকে আড়াল করে রুমে গেল, নেট অন করে আতিবকে একটিভ দেখে ইমুতে ভিডিও কল দেয়। রিসিভ করতেই অর্পিতা যা দেখল এটা দেখার জন্য সে মোটেই প্রস্তুত ছিলো না। অর্পিতা ছটফট করতে লাগলো দোস্ত তুই ছাদ থেকে নেমে আয়, প্লীজ। এত কিনারে দাঁড়িয়েছিস আমার ভয় করছে। ভয় করছে নাকি করুণা করছিস বলেই আতিব হা হা হা করে হেসে দেয়। যেন ভিতরটা ফেটে কান্না আসছে কিন্তু প্রকাশ করতে পারছে না। হালকা বাতাস লাগলেও ছাদ থেকে নিচে পড়ে মরে যাবি। আমি বলছি তুই ছাদ থেকে নেমে আয় প্লীজ। করুণা নয় দোস্ত সত্যি সত্যি আমার ভয় করছে, প্লীজ সরে আয় তুই কি পাগল হয়েছিস! নিচে নেমে আয় প্লীজ, তুই আর পাগলামী করিস না। তুই এমন করছিস কেন, কি হয়েছে আমাকে দেখবি বলছিস দেখ বলেই অর্পিতা মোবাইল ক্যামেরা নিজের দিকে ধরে রাখে।

হা হা হা অর্পিতা তুই যেমন কষ্ট পাচ্ছিস ঠিক ততটাই কষ্ট আমারও হচ্ছিল। খুব কষ্টরে পাগলি যা তুই বুঝবি না। আমি তোকে বড্ড ভালোবাসি তুই কেন বুঝিস না, কেন আমার ভালোবাসাকে তুচ্ছ মনে করিস। ভালোবেসে তোর জন্মদিনে একটা ব্লেসলেট গ্রিফ্ট করলাম রাগ করে সেটাও ফেরত দিলে, আমি পড়ে যাব ভেবে তোর যতটা কষ্ট হচ্ছে ঠিক ততটা কষ্ট আমার হয়েছে। তুই ব্লেসলেটটা ফিরিয়ে দেওয়াতে। অর্পিতা আর কাঁদতে পারছিলোনা তবু চিৎকার করে বললো সব দোষ তোর, তুই সব ভুলে গেছিস? মনে আছে আমাকে প্রমিস করিয়ে বলছিলে আমরা শুধু বন্ধু থাকবো কখনো প্রেমিক/প্রেমিকা হব না। অর্পিতার কথা শোনে আতিব কিছুক্ষণের জন্য কল্পনার জগৎ ফিরে যায় সত্যি তো আমি অর্পিতাকে ভালোবাসতে নিষেধ করেছিলাম। অর্পিতা আবার চিৎকার করে উঠে এবার বল এখানে আমার ভুলটা কোথায়? তুই সুইসাইড করিস না প্লীজ আমি ব্লেসলেট নিতে তোর বাসায় আসবো।

আতিব ছাদের রেলিং ছেড়ে নিচে নেমে আসে, অর্পিতা দোস্ত আমি জানতাম না একজন ভালো বন্ধুই জীবনে একজন ভালো স্ত্রী হতে পারে। আমি তোকে ভালোবাসি, সারাজীবনের জন্য পাশে চাই। অর্পিতার চিৎকার শোনে বাবা, মা দু’জনই রুমে চলে আসে। আতিব-অর্পিতার সব কথা শোনে। মাকে দেখেই অর্পিতা কেঁদে বলে মা আতিব আমাকে ভালোবাসে, বিয়ে করতে চায় কিন্তু আমি তো তোমাদের পছন্দ ছাড়া বিয়ে করবো না, বলেই মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে। আতিব ভিডিও কলে সব দেখছিলো অর্পিতার বাবা মোবাইল হাতে নেয়, আতিব বাবা তুমি নিচে নেমে আস। পাগলামী অনেক হয়েছে কিন্তু আঙ্কেল আমি অর্পিতাকে বলতেই আশরাফ সাহেব অর্পিতার বাবা বলেন আতিব তুমি হয়ত জানো না তোমাদের বন্ধুত্ব দেখে আমরা মুগ্ধ। তোমার মম অর্পিতার জন্মদিনে তোমার বিয়ের জন্য আমার মেয়ে অর্পিতাকে পছন্দ করেছেন। এ মাসেই বিয়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিব ইনশাল্লাহ। আতিব যেন বিশ্বাস করতেই পারছিলো না, রাখছি আঙ্কেল বলেই ছাদ থেকে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে মায়ের রুমে গেল। মম মম কোথায় তুমি বলে চিৎকার করে মাকে জড়িয়ে ধরে আতিব। মায়ের কাছে সবটা শোনে আতিব খুব খুশি হয় তুমি পৃথিবীর সেরা মম বলেই মায়ের কোলে মাথা রেখে আদর খায় আতিব, মা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

তারপর..
ভাবী আতিব চায় অর্পিতাকে নিয়ে ওর বিয়ের শপিং করতে সমস্যা নেই আমিও সাথে থাকবো ওরা দুজনে মিলে পছন্দ করবে। এসব কি বলছেন ভাবী? অর্পিতা অবশ্যই যাবে মেয়ে তো আপনারই। দু’দিন পরে আপনার ঘরে শোভা পাবে বলেই আঁচলে মুখ ঢাকল। না না ভাবী মেয়েটা আমাদের দুজনেরই সমান, আপনি গর্ভে ধারণ করেছেন, লালন পালন করেছেন, আর আমি সন্তানের মাধ্যমে আমার মেয়ে হয়ে এ বাড়িতে আসবে।

আতিব, অর্পিতা আজ শপিংএ গিয়েছে যেখানে আতিব অর্পিতার জন্মদিনের ব্লেসলেট কিনেছিলো সেই শপিংমলে যেতেই লোকটা দৌড়ে এল স্যার প্লীজ আসুন স্বাগতম আপনাকে। আমি একা আসি নাই ওনি আপনাদের হবু ভাবী ওই যে পাঁচ ঘন্টায় যার জন্য একটা ব্লেসলেট পছন্দ করেছিলাম। জ্বী স্যার মনে পড়ছে কিন্তু আপনি তো বলেছিলেন সে আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড! হ্যাঁ সেই বেস্ট ফ্রেন্ডই আজ আমার বউ হতে চলেছে তবে সেটা আমার মায়ের এর পছন্দে বলেই আতিব মাকে জড়িয়ে ধরল।পাগল ছেলে আমার, বউমা এখানে দেখছি সবই আছে যাও আতিবকে নিয়ে ঘুরে দেখে পছন্দ করে নাও আমি একটু বিশ্রাম করি। অর্পিতা মুচকি হেসে আতিব এর হাত ধরে শো-রুম ঘুরে দেখতে লাগল আর ওই লোকটা হাঁটতে হাঁটতে আতিবের ব্লেসলেট কেনার গল্পটা বললো।অর্পিতা মুগ্ধ হলো একটা মানুষ কাউকে পাগলের মতো এতটা ভালোবাসতে পারে আতিবকে না দেখলে জানাই হতো না।একে একে ওরা বিয়ের শপিং শেষ করে আতিব কাউন্টারে টাকা জমা দিয়ে ফেরার সময় ওই প্রশ্ন করা কর্মচারীটা আতিবকে একটা প্যাকেট দিল।স্যার এটা আপনার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সামান্য উপহার। আতিব মুচকি হেসে ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় নিল। ওরা শহরের নামকরা বড় রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেয়ে রাত ৯.০০টা অর্পিতাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসল। আজ আতিব, অর্পিতার গায়ে হলুদ হয়ে গেল আগামীকাল বিয়ে, রাতটা যেন আতিবের কাটছেনা, কখন বর সেজে অর্পিতার বাসায় যাবে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেল। চারদিকে রঙিন আলো বুঝিয়ে দিচ্ছে এই শহরে কারো বিয়ে হচ্ছে, নিচের তলায় হৈ হুল্লুড় চলছে। বাসায় সব আত্মীয় স্বজন এসেছে, আতিবের বিয়ে উপলক্ষে।

সবকিছু যেন খুব তাড়াতাড়ি হয়ে গেল তাইনা অর্পিতা আমার বিশ্বাস হচ্ছে না মম তোমাকে আমার জন্য পছন্দ করবে আর তোমার পরিবার সব মেনে নিল এ যেন স্বপ্ন। কি রে দোস্ত কথা বলছিস না কেন প্রশ্ন করলো আতিব! হুম বলেই অর্পিতা থেমে গেল। বুঝতে পেরেছি সে তো আজ নতুন বউ তাই কথা কম বলতে হবে ভেবেই হাসল আতিব। অর্পিতা বিছানা থেকে নেমে আতিবকে সালাম করে আবার লম্বা ঘোমটা টেনে বসে পড়ল। আতিব আস্তে করে বিছানায় উঠে বসল আলতো করে অর্পিতার ঘোমটা সরাল। আমার সোনা বউ আজ আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ।
সুরাইয়া নার্গিস
সুরাইয়া sent Today at 18:22
যাকে ভালোবেসেছিলাম আজ আমি তাকেই পেলাম বলেই আতিব অর্পিতার ঘোমটা খুলে কপালে একটা চুমু দিল। আর অর্পিতার হাতে সেই ব্লেসলেটটা পরিয়ে দিল যেটা একদিন আতিব নিজ হাতে ভেঙ্গে ফেলেছিলো অভিমান আর কষ্টে। অর্পিতা নিজের হাতে সেই ব্লেসলেটটা দেখে অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো এটা তুমি কোথায় পেলে? আতিব মুসকি হেসে জবাব দেয় ওই দোকানে আবার অর্ডার করেছিলাম আমাদের বিয়েতে ওরা সেইম ব্লেসলেটটা গিফট করলো। বুঝেছি আমরা শপিং শেষে ফিরার সময় কর্মচারী লোকটা এটাই প্যাকেট করে দিয়েছিলো বললো অর্পিতা? হ্যাঁ বলেই আতিব মাথা নাড়াল। অর্পিতা আতিবের দিকে তাকিয়ে বললো আমি আজ পূর্ণ যাকে চেয়েছিলাম আজ তাকেই জীবন সঙ্গী হিসেবে পেলাম। আতিব চমকে উঠে অর্পিতা তুইও আমাকে ভালোবাসতে তাহলে বলনি না কেন?রাজামশাই ভালো না বাসলে কি আব্বু, আম্মুকে বিয়েতে রাজী করাতাম? বলেই হি হি হি হি করে হাসল অর্পিতা। আতিব তৃপ্তির হাসি দেয়। মানুষ যা চায় বিধাতা শুধু তার দিক নির্দেশন করেন, বলেই অর্পিতার দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে আতিব। অর্পিতা আতিবের চোখে ভালোবাসা খুঁজে পায়, যে ভালোবাসা অনন্ত কাল বেঁচে থাকার জন্য সুখের স্বপ্ন দেখায় এ দেখার যেন শেষ নেই আছে শুধু সুখ আর সুখ।