যে স্মৃতি ভোলা যায় না [১]

মোহাম্মদ মঈনুদ্দিন মিয়া ।।

আমার জন্ম ঢাকা জেলার অন্তর্গত ধামরাই থানার সুয়াপুর ইউনিয়নের কুরুঙ্গী গ্রামে।ঢাকা থেকে কুরুঙ্গী গ্রাম গাড়িতে করে এখন এক ঘন্টা বা একটু বেশী সময় লাগে।

ষাট দশকে যখন আমার বুদ্ধি হয় হয় -তখনকার বয়সের কত কথাই না এখন স্মৃতিপটে ভেসে বেড়ায়।ঢাকা থেকে বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা এখন এক বা দেড় ঘন্টা লাগলেও সে সময়ের অভিজ্ঞতায় এটা ছিল ৫/৬ ঘন্টার ফের, কখনো তারও বেশী।অনেকেই বলেন বাতির নিচে অন্ধকার। আসলে অন্ধকারই ছিলো। বিগত সময়ের বিবর্তনে তা এখন ঘুচতে শুরু করেছে।
সামগ্রিক চিত্রে বাংলাদেশের যে অবস্হা- তা দেখে বর্তমান প্রজন্ম ভাবতেও পারবে না -এখন আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি – কি ভাবে আছি। আমার সাথে তখনকার অনেকের জীবন- প্রবাহ,জীবন -আচরণ, জীবন -বোধ -অভিজ্ঞতা হয়তো মিলবে- স্মৃতিময় জগত একাকার হবে।অনেকের সাথে হয়তো জীবন -অভিজ্ঞতার ভিন্নতাও থাকবে।সুতরাং বিষয়টি সহজ ও সরলীকরণ মনে দেখবেন।

আমাদের গ্রামের সন্নিহিত এলাকার রাস্তা গুলো যেমন- সিঙ্গাইর,সুয়াপর,নান্নার,খড়ারচর,রোয়াইল,সাভার , ধামরাই, কালামপুর সব রাস্তাই ছিলো মেঠো পথের,কোথাও সরু, কোথাও একটু চওড়া আবার কোথাও এক পায়ের। দূরত্ব স্হান ভেদে ৮/১০কিলোঃ পর্যম্ত। সকল স্থানেই সর্বাবস্হায় সকলেই হেটে যেতাম। কদাচিৎ কেউ কেউ সাইকেলে। আবার বর্ষাকালে নৌকায় যেতাম।

ধূঁ ধুঁ মাঠ।কাক ডাকা ভোরেরও আগে রাখালেরা গরু,লাঙ্গল-জোয়াল-মই নিয়ে আলো মতি গান গেয়ে গেয়ে মাঠে যেতো।সকালের স্নিগ্ধ ভোরে হাল বাওয়া চাষীদের পেছনে পেছনে অসংখ্য দোয়েল, শালিখ, চড়ুই, কাঁক পাখি খাবার অন্বেষণে উড়াউড়ি করতো।

পাক-পাখালীর অবাধ বিচরণ কী-যে ভালো লাগতো -বোঝানো যাবে না।নাস্তার সময় হলে সকালে পান্তা ভাত,কাঁচামরিচ,পিঁয়াজ,আলুভর্তা দিয়ে কতদিন মাঠে যেয়ে রাখালদের সাথে গোল হয়ে একসাথে বসে খোলা আকাশের নিচে নাস্তা করেছি-সেই স্বাদ,ফেলে আসা সেই জীবন, সেইদিন আর কি কখনো ফিরে পাবো!

মনের ভেতর জীবনের শৈশবের সেই স্মৃতি গুলো, পরিচিত মুখ,রাস্তাঘাট, খেলার সাথী, বাঁক খাওয়া নদী,গাছপালা,ঘুঘু পাখি, পাখির কলরব সবই বাস্তবে আর স্বপ্নে দোল খায় নিজের অজান্তেই নিজের ভেতর।
এ যেন —-
নিখিলের সুখ, নিখিলের দুখ,
নিখিল প্রাণের প্রীতি,
একটি প্রেমের মাঝারে মিশেছে
সকল প্রেমের স্মৃতি —
সকল কালের সকল কবিরগীতি।


(চলবে)

মন্তব্য করুন