সুস্থ এবং কার্যক্ষম মস্তিষ্ক পেতে চান?

আজ আগামী ডেস্ক

আপনার মস্তিষ্ককে যত বেশি কাজে লাগাবেন, আপনার মস্তিষ্ক তত বেশি কাজ করবে। এই যেমন ধরুন, সবজি কাটার ছুরিটি দিয়ে যত বেশি কাটাকাটি করবেন ছুরিটি তত বেশি ধার হবে। যদি অলস ফেলে রাখেন, তবে ধীরেধীরে জং ধরবে, নষ্ট হিবে।

মানুষের মস্তিষ্ক একটি বিস্ময়কর ক্ষমতা, এই ক্ষমতা স্নায়ু নমনিয়তা হিসাবে পরিচিত হয়। অধিকার উদ্দীপনার সঙ্গে আপনার মস্তিষ্ক নতুন স্নায়বিক পথ গঠন করে ও উপস্থিত সংযোগ পরিবর্তন করে। এবং নতুন কোন শেখার বিষয় স্মৃতি আসে যখন নিজেই পুর্ণনির্মাণ মস্তিষ্ক এর অবিশ্বাস্য ক্ষমতা অধিকারী হবেন। আপনি আপনার জ্ঞানীয় ক্ষমতার বৃদ্ধিতে নতুন তথ্য জানতে পারেন, যা স্নায়ু নমনিয়তা শক্তি বৃদ্ধি করবে।

মস্তিষ্ককে সজাগ রাখা:

মস্তিষ্কে নতুন অভিজ্ঞতা দিলে, যেমন- কোনো নতুন কিছু স্পর্শ, দেখা বা শুনলে এর ফলে এসব মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ গুলির সাথে যুক্ত হয়ে এদের মধ্যকার সংযোগ বৃদ্ধি ঘটায় এবং নাটকীয় ভাবে স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

উল্টো হাতে ব্রাশ করা:

আপনি ডান হাতে ব্রাশ করলে এখন থেকে বাম হাতে ব্রাশ করবেন বা বাম হাতে করলে এখন থেকে ডান হাতে ব্রাশ করার অভ্যাস করুন। এতে করে আমাদের মস্তিষ্কের উপর করটেক্সের বিভিন্ন অংশের দ্রুত এবং উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ ঘটে।

চোখ বন্ধ করে গোসল করা:

আমাদের হাত আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংগবিন্যাস পর্যবেক্ষন করতে পারে যা আমাদের চোখ দেখতে পারে না। তাই মস্তিষ্কে নতুন অভিজ্ঞতা প্রদানের জন্য চোখ বন্ধ করে গোসল করুন। এতে মস্তিষ্ক অনুভূতি সিগন্যাল সহজে উপলব্ধি করা শিখবে।

সকল কার্যক্রমে পরিবর্তন আনা:

আমরা প্রতিদিন যে কাজগুলি বেশি করি, মস্তিষ্ক সেই কাজ গুলির নির্দেশনা বেশি পায় বা বেশি অনুশীলন করে। তাই মস্তিষ্ককে নতুন কাজ দিতে হবে। নতুন কিছু পেলেই মস্তিষ্ক আগের তুলনায় বেশি সক্রিয় হয়ে উঠে।

পরিচিত জিনিস গুলি উল্টে রাখুন:

আমরা কোনো জিনিস যখন ঠিকভাবে দেখি তখন আমাদের মস্তিষ্ক সেই ক্ষেত্রে কম সাড়া দেয়। কিন্তু যখনই সেগুলি উল্টো ভাবে দেখি তখন মস্তিষ্ক সেগুলির আকার, বর্ণ বিশ্লেষণ করতে থাকে। তাই আপনার চোখের সামনের জিনিস গুলি উল্টো করে রাখুন। যেমন- দেয়ালের পারিবারিক ছবি, টেবিলে রাখা ঘড়ি।

পাজল বা ওয়ার্ড:

গবেষণায় দেখা যায় যাদের নিয়মিত পাজল সমাধান, স্ক্রাবল, সুডোকো মেলানোর অভ্যাস রয়েছে তাদের মস্তিষ্ক অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত। যখন খেলা হয় তখন মস্তিস্কের স্মৃতি এলাকাগুলো সহ পুরো মস্তিস্কের সমস্ত স্নায়ুগুলো সক্রিয় হয় যা কিনা স্মৃতি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এছাড়াও তাদের স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা জনিত সমস্যাও হয় না। তাই সময় পেলেই এইধরনের খেলা খেলে নিন। এইসব গেম প্রায়ই বুদ্ধিজীবী কার্যকলাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে মস্তিষ্কের লক্ষ্যপূর্ণ এলাকায় উদ্দীপিত করতে পারেন।

বই পড়ুন এবং নতুন কিছু লিখুন:

আপনি যত বেশি পড়বেন, মস্তিষ্কের শব্দ ভাণ্ডার তত বেশি উন্নত হবে, মস্তিষ্ক তত বেশি সমৃদ্ধ এবং অনুভূতি প্রকাশ এবং গ্রহণ করতে পারবে। তাই আসুন নতুন নতুন বই পড়ি এবং যা ইচ্ছে হয় লিখি।

ধ্যান:

মস্তিষ্ক ভালো রাখার ক্ষেত্রে ‘মেডিটেইশন’ বা ধ্যান করার চাইতে উপকারী অনুশীলন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এতে মন শান্ত থাকে, মনোযোগ বাড়ে। মানসিক চাপ সামলানোর অত্যন্ত শক্তিশালী মাধ্যম এই ধ্যান।

দৌড়ানো:

মস্তিষ্কের ‘হিপোক্যাম্পাস’ অংশে নতুন কোষ সৃষ্টিতে উপকারী ভূমিকা রাখে দৌড়ানো। নতুন কৌশল শেখা ও স্মৃতিশক্তির জন্য মস্তিষ্কের এই অংশই দায়ি। মস্তিষ্কের ‘হিপোক্যাম্পাস’ উন্নত হলে মানসিক চাপ সামলানোর ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যাবলী সম্পাদন ও যেকোনো কিছু মুখস্ত করার ক্ষমতাও বাড়ে এই শরীরচর্চার মাধ্যমে।

অ্যারোবিকস:

মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্যের জন্য আরেকটি উপকারী ব্যায়াম হলো ‘অ্যারোবিকস’। সপ্তাহের ১৫০ ঘণ্টা মৃদুমন্দ ‘অ্যারোবিকস’ শরীরচর্চার অনুশীলন মস্তিষ্কে যোগাবে বিভিন্ন উপকারিতা। যেমন, ‘স্পেশিয়াল মেমরি পারফরমেন্স’ বাড়াতে এবং মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগ যেমন- স্মৃতিভংশ, হতাশাগ্রস্ততা, মানসিক অস্বস্তি ইত্যাদি ঝুঁকি কমাতেও ‘অ্যারোবিকস’ কার্যকর।

সাইকেল চালানো:

মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে সাইকেল চালানোর মাধ্যমে, যা মস্তিষ্কে নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে এবং তার কার্যক্ষমতা বাড়ায়। যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের জন্য সাইকেল চালানো বিশেষ উপকারী। কারণ এতে মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বাড়লে মানসিকভাবে রোগী শক্তিশালী হবে, মন-মেজাজ ভালো থাকবে। পাশাপাশি এই শরীরচর্চার মাধ্যমে মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী হরমোন ‘কর্টিসল’ এবং ‘অ্যাড্রেনালিন’য়ের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

কবি নীলকন্ঠ জয়

সকল পোস্ট : নীলকন্ঠ জয়