বশীর আল-হেলাল বাংলা ভাষা ও প্রবন্ধের অন্যস্বর

 বশীর আল-হেলাল, বাংলাদেশের এই শক্তিমান কথাসাহিত্যিকের জন্ম ১৯৩৬ সালে ৬ জানুয়ারি। মুর্শিদাবাদ জেলার তালিবপুর গ্রামের মীর পাড়ায়। তালিবপুর মুর্শিদাবাদের একটি বৃহত্ ও বিখ্যাত গ্রাম। তালিবপুর গ্রামটি কান্দি মহকুমার ভবপুর থানার অন্তর্গত ও সালার রেলস্টেশনের কাছেই অবস্থিত। এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এক গ্রাম। বশীর আল-হেলালের জন্মগ্রাম তালিবপুরে প্রখ্যাত পল্লিগীতি শিল্পী আব্দুল আলীম ও ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদ আবুল বরকতসহ বহু কবি-সাহিত্যিক, সংগ্রামী-বিপ্লবীরও জন্ম।
খুব ছোটকালের কথা। তখন বশীর আল-হেলালের বয়স তিন কি চার। হাতেখড়ি হবে এই ছোট্ট ছেলেটির। তাঁর মা তাঁকে পরালেন নতুন জামা আর চন্দন বেটে কপাল জুড়ে প্রলেপ দিয়ে সাজালেন। মূল বাড়ি থেকে একটু দূরে বৈঠকখানায় বসে আছেন বাবা। এই ঘরেই তাঁর ভাই-বোনসহ অনেক আত্মীয়স্বজন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। নতুন জামা আর কপালজুড়ে চন্দনের প্রলেপ দিয়ে সাজিয়ে মা ছোট্ট ছেলেটিকে বাবার কোলে বসিয়ে দিলেন। বাবা তাঁর নিজহাতে তৈরি একটি কলম ছেলেটির ছোট্ট কোমল হাতে ধরিয়ে দিলেন। সেই ছোট্ট হাতটি বাবা তাঁর নিজহাতে শক্ত করে ধরে কলমটি চন্দনের মধ্যে চুবিয়ে কাঠের তক্তিতে লিখলেন, ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম’। শুরু হলো বশীর আল-হেলালের লেখাপড়া। তখন কি তাঁর মা-বাবা জানতেন এই ছেলেটি একদিন হবে বাংলাদেশের শক্তিমান কথাসাহিত্যিক; তার হাতেই একদিন রচিত হবে অনেক গল্প, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ গবেষণার বইসহ আরও অনেক কিছু।
বশীর আল-হেলালের পূর্বপুরুষ ১২ প্রজন্ম আগে ইরাকের বাগদাদ থেকে ভারতে এসেছিলেন। ভারত উপমহাদেশ তখন ব্যবসা-বাণিজ্যে সমৃদ্ধ ছিল। মূলত ধর্ম প্রচারের জন্য তাঁর পূর্ব-পুরুষগণ এখানে আসেন। এখানে তাঁরা মুর্শিদাবাদ এলাকায় বসবাস শুরু করেন।
বশীর আল-হেলালের বাবার নাম সৈয়দ মুহাম্মদ আলী আসমার। তিনি উত্তর ভারতের দেওবন্দ, বেনারস, রামপুর ইত্যাদি স্থানে শিক্ষালাভ করেন এবং ওই সমস্ত অঞ্চলে শিক্ষকতা করেন। তিনি আরবি-ফার্সি-উর্দু ভাষায় পণ্ডিত ছিলেন। আরবি-ফার্সি-উর্দু ভাষায় অসাধারণ পাণ্ডিত্যের জন্য সমগ্র ভারতে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া তিনি মৌলবি ও ইউনানি পশুচিকিত্সক ছিলেন।
তাঁর বাবা ফার্সি ও আরবি ভাষায় লেখালেখি করতেন। তিনি মূলত ফার্সি ভাষার একজন শক্তিমান সাহিত্যিক ছিলেন। তিনি উর্দু ভাষায়ও লিখতেন। বশীর আল-হেলালের মায়ের নাম আ-মাতার রোকেয়া (রোকেয়া খাতুন)। তিনি কেবল প্রথাগত ভাষাজ্ঞানের অধিকারী ছিলেন।
বশীর আল-হেলালের পিতামহ আবুল মুজফফর দীর্ঘদিন দার্জিলিংয়ের একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। ছিলেন বিশিষ্ট ফার্সি কবি। তাঁর কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছিল।
সৈয়দ মুহাম্মদ আলী আসমার ও আ-মাতার রোকেয়া পরিবারে ১২টি সন্তানের জন্ম হয়। এর অধিকাংশই কৈশোর অতিক্রম করার পূর্বেই মারা যায়। মেয়ে সন্তানের মধ্যে কেবল ওয়াকেফাতুল আহাদ বিয়ে হওয়ার পর মারা যান। কিন্তু শেষপর্যন্ত তাঁদের পরিবারে বেঁচেছিলেন ৩টি ছেলেসন্তান। নেয়ামাল ওয়াকিল (জন্ম ১৯২৬), নেয়ামাল বাসির (জন্ম ১৯৩২) ও নেয়ামাল বশীর (জন্ম ১৯৩৬)। নেয়ামাল ওয়াকিল ছিলেন কথাশিল্পী ও নাট্যকার। তিনি ১৯৬৫ সালে কলকাতায় স্কলারশিপ পেয়েছিলেন। নেয়ামাল বাসির পাকিস্তান সরকারের পার্লামেন্টের সেক্রেটারি ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ পার্লামেন্টের সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন। একইসঙ্গে অনুবাদক, ভাষাবিদ ও সাহিত্যিক হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছিল। নেয়ামাল বাসির ও নেয়ামাল বশীর দু’ভাইয়ের নাম প্রায় একইরকম এবং তাঁরা দুজনই লেখালেখি করতেন, ফলে তাঁদের লেখা যখন বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হতো তখন পাঠকরা দ্বিধায় পড়ে যেতেন আসলে লেখাটি কার। আর এ সমস্যা সমাধানের জন্য নেয়ামাল বশীর পরবর্তী সময়ে তাঁর নাম পরিবর্তন করে বশীর আল-হেলাল রাখেন।
বাবার কাছে পড়াশোনায় হাতেখড়ি হওয়ার পর বশীর আল-হেলাল ভর্তি হন তালিবপুর পাঠশালায়। তিনি চতুর্থ শ্রেণিতে ২ টাকা বৃত্তি পান। এরপর ভর্তি হন তালিবপুর গ্রামের এইচ.ই হাইস্কুলের প্রাইমারি সেকশনে। সেখানে তিনি ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন।
১৯৪৭ সালে বশীর আল-হেলালের দু’ভাই পূর্ববাংলায় চলে আসেন। কিছুদিন পর তিনিও পূর্ববাংলার রাজশাহীতে মেঝ ভাইয়ের কাছে চলে আসেন। সপ্তম শ্রেণিতে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। রাজশাহীতে এক বছর পড়াশোনা করার পর সেতাবগঞ্জ হাই স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই মেট্রিক পাস করেন।
মেট্রিক পাস করার পর ১৯৫২ সালে তিনি আবার জন্মভূমি পশ্চিমবঙ্গে ফিরে যান। ওই সময় তত্কালীন পূর্বপাকিস্তানে যাওয়া আসার জন্য ভিসা লাগত না। তখন তাঁর মামাদের ব্যবসা ছিল কলকাতায়। তিনি কলকাতার সরকারি কলেজে ভর্তি হলেন এবং মামাদের বাসায় থাকা শুরু করলেন। ১৯৫৪ সালে এই কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে আইএ পাস করেন। এরপর জলপাইগুঁড়ির এ.সি কলেজে বাংলায় অনার্সে ভর্তি হন। এই কলেজ থেকে ১৯৫৭ সালে দ্বিতীয় বিভাগে অনার্স পাস করার পর কলকাতায় চলে যান। সেখানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় এমএ ক্লাসে ভর্তি হন। ওই সময় বামপন্থি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন।
বামপন্থি ছাত্ররাজনীতিতে অনেকদিন যুক্ত ছিলেন। একপর্যায়ে কলকাতা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হিসেবে তালিকাভুক্ত হন এবং লালকার্ড পান। তখনকার দিনে লালকার্ড পাওয়া খুব সহজ ছিল না। ১৯৫৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় বিভাগে বাংলায় এমএ পাস করেন। ততদিনে লেখক হিসেবেও সুনাম অর্জন করেছেন। ওই সময় কলকাতা থেকে তাঁর প্রথম গল্পের বই প্রকাশিত হয়।
এমএ পাস করার পর বশীর আল-হেলাল কলকাতায় হজ কমিটিতে চাকরি নেন। তখন আকরম খাঁ কলকাতা থেকে একটি পত্রিকা বের করতেন। পত্রিকাটি সপ্তাহে তিনদিন বের হতো। এটা মুসলমানদের পত্রিকা ছিল। হজ কমিটিতে চাকরির পাশাপাশি এই পত্রিকায়ও চাকরি করতেন। একইসঙ্গে তাঁর লেখালেখিও অব্যাহত থাকে। বাবা ফার্সি, উর্দু বা আরবি ভাষায় লেখালেখি করলেও বশীর আল-হেলাল ছোট থেকেই মাতৃভাষা বাংলায় লিখতেন।
১৯৬৮ সালের প্রথমদিকে তিনি তাঁর মাকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। সার্বিক পরিস্থিতি ভালো ছিল না বলে ভারত থেকে পালিয়ে আসতে হয়েছিল। তাঁর মেঝ ভাই তখন ঢাকায় তত্কালীন পাকিস্তান সরকারের চাকরি করতেন। ঢাকায় আসার পর তাঁর চোখের সামনে একে একে ঘটে গেল ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০-এর নির্বাচন ও  মুক্তিযুদ্ধ। এসব আন্দোলন-সংগ্রামে তিনিও সামিল হয়েছিলেন।
১৯৬৯ সালে তিনি ফিরোজা বেগমের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ফিরোজা বেগম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ছিলেন। তাঁদের পরিবারও দেশবিভাগের পর ভারত থেকে পূর্ববাংলায় চলে আসেন। এই দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে।
মাকে নিয়ে ঢাকায় আসার পর বশীর আল-হেলাল বিভিন্ন বইয়ের সমালোচনা লেখা শুরু করেন। যা ওই সময় খুব কম লেখা হতো। আর শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী মহল ছাড়া এসব বিষয় তেমন কেউ পড়তেন না। বছরখানেকের মধ্যে তিনি লেখক-বুদ্ধিজীবী মহলে বেশ পরিচিত হয়ে ওঠেন। ১৯৬৮ সালের শেষের দিকে বাংলা একাডেমিতে চাকরির জন্য আবেদন করেন। ১৯৬৯ সালে সহ-পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হলেন বাংলা একাডেমিতে। সর্বশেষে বাংলা একাডেমির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৩ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
বশীর আল-হেলাল কথাসাহিত্যিক হিসেবে সুনাম অর্জন করলেও গল্প, উপন্যাস, কবিতা, অনুবাদ ও প্রবন্ধ-গবেষণায়ও যথেষ্ট অবদান রয়েছে। বড় ভাইয়ের কাছ থেকেই মূলত লেখালেখির ব্যাপারে উত্সাহ পেয়েছিলেন। ছোটবেলায় তিনি গল্পের বই পড়তে খুব ভালোবাসতেন। সেইসময় গল্পের বই পড়ার পাশাপাশি নিজেও গল্প লিখতেন এবং বড় ভাইকে দেখাতেন। বড় ভাই পড়ে খুব উত্সাহ দিতেন। ছেলেবেলায় যে গল্পগুলো লিখতেন সেগুলোর বেশির ভাগই ছিল ইসলামি। নিজে নিজে গল্প বানিয়ে তিনি সহপাঠীদের শোনাতেন। সহপাঠীরা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতেন।
সপ্তম শ্রেণি থেকেই তাঁর লেখালেখির শুরু। অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি লেখালেখি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন এবং পুরস্কৃত হন। এ সময় ছোট কাগজে-পত্রিকায় লেখা দেয়া শুরু করেন। ওই সময় খুবই ধার্মিক ছিলেন তিনি। হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর জীবনী তাঁর প্রায় মুখস্থ ছিল।
গ্রামীণ ও শহুরে মধ্যবিত্ত মানুষের জীবনকে আরো অর্থবহ করতে তিনি জীবনধর্মী ও সমাজসচেতনতামূলক ছোটগল্প ও উপন্যাস লিখেছেন। বশীর আল-হেলালের সকল সৃষ্টিকর্মে প্রধানত গ্রামীণ ও শহুরে মধ্যবিত্ত মানুষের জীবন ফুটে উঠেছে। তিনি বেশ ক’টি উপন্যাস লিখেছেন। তাঁর প্রকাশিত উপন্যাসের সংখ্যা ছয়। সেগুলো হলো—‘কালো ইলিশ’, ‘ঘৃতকুমারী’, ‘শেষ পানপাত্র’, ‘নূরজাহানদের মধুমাস’, ‘শিশিরের দেশে অভিযান’ ও ‘যে পথে বুলবুলিরা যায়’।
বাংলাদেশে যে ক’জন প্রবন্ধ-গবেষক রয়েছেন, তাঁদের অন্যতম বশীর আল-হেলাল। ভাষা-সাহিত্য বিষয়ে গবেষণা করে তিনি বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর বই লেখেন। বানান, ঊচ্চারণ ও পরিভাষা প্রয়োগের বিষয়ে প্রশিক্ষণের ওপরও তিনি কাজ করেছেন। তাঁর প্রবন্ধ-গবেষণার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই হলো : ‘আমাদের কবিতা’, ‘বাংলা গদ্য’, ‘ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস’, ‘বাংলা একাডেমীর ইতিহাস’, ‘আদর্শ বাংলা বানান’, ‘বাংলা ভাষার নানান বিবেচনা’, ‘বাংলা উচ্চারণ’, ‘কিশোর বাংলা উচ্চারণ মঞ্জুরী’, ‘ভাষা আন্দোলনের সেই মোহনায়’, ‘আমাদের বিদ্বত্সমাজ’।
প্রশাসনে বাংলা ভাষা প্রচলন ও ভাষা প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও তাঁর যথেষ্ঠ ভূমিকা রয়েছে। স্বাধীনতা-উত্তর সরকারি অফিস-আদালতে বাংলা ভাষা প্রচলনের জন্য বিশেষ করে বাংলা একাডেমির প্রতিনিধি হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এসময় সরকারি অফিসিয়াল কাগজপত্রের অনেককিছুই বাংলায় অনুবাদ করে দেন। বাংলা একাডেমির ছোটদের অভিধান সম্পাদনা পরিষদের একজন সদস্য ছিলেন। তিনি বাংলা একাডেমির ‘প্রশাসনিক পরিভাষা’র সংকলন সম্পাদনার দায়িত্বও পালন করেন।
অনুবাদক হিসেবে তিনি তাঁর সময়ে খ্যাতিমান ছিলেন। শুধু ইংরেজি নয়, এর বাইরে একসময় উর্দু-ফার্সি ভাষায়ও অনুবাদ করেছেন। তাঁর যেসব অনুবাদ বই বেরিয়েছে তার মধ্যে—‘এশিয়ার লোককাহিনী’ প্রথম খণ্ড, ‘যুগোস্লাভিয়ার ছোটগল্প’, ‘দেশে আসা’ ও ‘হামিদুর রহমান রিপোর্ট’।
বাংলা একাডেমি থেকে অবসর নেয়ার পর তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় রাজনৈতিক কলাম লেখতে শুরু করেন। শুধু ‘দৈনিক বাংলা’-য় তাঁর ১৬৫টি নিবন্ধ ছাপা হয়েছিল। এছাড়া অন্যান্য পত্রিকায়ও তাঁর বেশ ক’টি নিবন্ধ ছাপা হয়। এর সবই ছিল রাজনৈতিক নিবন্ধ।
বশীর আল-হেলাল কবি হিসেবে খুব শক্তিমান ছিলেন, তেমন না। কিন্তু কবিতা লিখেছেন। কবিতার ক্ষেত্রে তিনি নমনীয়। তিনি মনে করেন, কবিতার চিরায়তকে কমবেশি হোক সবসময় প্রবাহিত রাখা চাই। তিনি কবিতা লেখার জন্য অবশ্য নিজস্ব একটা ফর্ম তৈরি করে নিয়েছিলেন। যার নাম দিয়েছেন ভণিতা কবিতা। ১০ লাইনের এই কবিতাগুলোর শেষের দুই লাইনের মধ্যে কবির নাম থাকত। কবিতার প্রতিটি লাইনের শেষ শব্দের সঙ্গে পরের লাইনের শেষ শব্দের মিল থাকত।
বশীর আল-হেলাল-এর ভণিতা কবিতার একটি নমুনা :
চিঠির বাক্সে চিঠি আছে, পায়ে আমার বাত
ও মেয়ে, ওটা এনে দিবি? নামছে আঁধার রাত
আঁধার রাতে অন্ধ আমি, সকাল হওয়ার পরে
দেহ খাঁচায় তখনো পাখি থাকবে ধৈর্য ধরে
আশা আছে এতটুকু দে রে এনে দে চিঠিখানা
এই শেষবার সে লেখে নি আ’ ভুল ঠিকানা
চিঠিটা যদি বড় হয় ধর বড় হয় পাতা দুই
ইতিতে প্রথমে দেখে নেবে সেই নীল রঙে সাদা জুঁই
বশীর আল-হেলাল বলে এই বুড়ো কেন এত তোর আশা
আয়ুর অধিক হয় নাকি রে লম্বা ভালোবাসা
বশীর আল-হেলাল তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্য অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য : আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯১), বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৩), লেখিকা সংঘ পুরস্কার, গৌরী ঘোষাল স্মৃতি সম্মান পুরস্কার-২০০২ কলকাতা ও অধ্যাপক আবুল কাসেম পুরস্কার (২০০৪)।
-সংগৃহীত

মন্তব্য করুন