বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস -মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতা এবং প্রাসঙ্গিক আলোচনা//অলোক আচার্য


ইংরেজিতে স্বাস্থ্য নিয়ে একটি কথা প্রচলিত রয়েছে। স্বাস্থ্যই সম্পদ। স্বাস্থ্যই সকল সুখের মুল। এই স্বাস্থ্য বলতে বোঝায় সুস্থতা। স্বাস্থ্যের দুটি অংশ। শরীর এবং মন। একটি অন্যটির পরিপূরক। সুস্থ দেহের সাথে সুস্থ মনের ঘনিষ্ট যোগসূত্র রয়েছে। পূর্ণাঙ্গ সুস্থ বলতে মানবদেহের উভয় অংশকেই বোঝায়। যদিও মন শব্দটি যেহেতু স্পর্শ করা যায় না, বাহ্যিক দৃষ্টিতে সুখ-অসুখ বোঝা যায় না ফলে মানবদেহের এই অংশটি চিরকালই অবহেলিত। আমরা অধিকাংশই শরীর বলতে শুধু শরীরকেই বোঝাই। অসুস্থতা বলতে শরীরের কোনো রোগকে বুঝিয়ে থাকি। তবে মন যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং অসুস্থ থাকতে পারে সেটা বুঝতে পারি না। শরীর সুস্থ না থাকলে মন সুস্থ থাকে না। কোনো কাজে মনোযোগ রাখা কঠিন হয়। আর সুস্থ স্বাস্থ্য বলতে একটি রোগমুক্ত সুন্দর জীবনকে বোঝায়। যদিও একসময় ভ্রান্ত ধারণা ছিল যে স্বাস্থ্য শব্দটির সাথে শরীরের স্থুলাকার বা শীর্ণকার এর একটি সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য প্রকৃতপক্ষে একটি নিরোগ দেহ যা প্রতিটি মানুষ প্রত্যাশা করে। স্বাস্থ্য শব্দটির অর্থ অনেক বড় এবং বিস্তৃত। মনের সুস্থতার সম্পর্কও ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে আছে সেটাও বুঝতে পারি না। মন কিভাবে অসুস্থ হতে পারে অনেকের কাছেই বিষয়টি নতুন। অথচ শরীরে যেমন রোগ হয় এবং চিকিৎসা আছে অনুরুপভাবে মনেরও অসুখ হয় এবং চিকিৎসা আছে। ’মন খারাপ’ শব্দটি আমরা প্রায়ই ব্যবহার করি। বিভিন্ন কারণে আমাদের মন খারাপ হয়। মানসিক রোগ এবং মানসিক রোগের সুস্থতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রচুর টাকা-পয়সা,গাড়ি-বাড়ি থাকলেই তাকে সুখী মনে করার কোনো কারণ নেই। খাদ্যের গুণ যেমন মুখের স্বাদের ওপর নির্ভর করে না তেমনি স্বাস্থ্য বিষয়টিও কেবল শরীরের ওপর নির্ভর করে না। বরং এটি একটি স্বাস্থ্য বিষয়ে ক্ষুদ্র ধারণামাত্র এবং প্রচলিত ধারণা। মানসিক রোগ এবং এ নিয়ে আমাদের সমাজে ভ্রান্ত ধারণা এবং অজ্ঞানতা এখনও বিদ্যমান। মানসিক রোগীকে সমাজে অত্যন্ত ক্ষুদ্র চোখে দেখা হয়। তাদের অবহেলা,অশ্রদ্ধা করা হয়। দেশের গ্রামে গঞ্জে মানসিক রোগী দেখা যায়।
আবার আমরা যাদের সুস্থ চলাফেরা করতে দেখি তাদের কে মানসিক অস্থিরতায় ভুগছে তা শারীরিক রোগের মতো নির্ণয় করা সম্ভব নয়। কারণ বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে মনের ব্যাপার। অনেকই জানে না যে মানসিক রোগের আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে, চিকিৎসায় মানসিক রোগী সুস্থ হয় এবং মানসিক রোগ মানেই মানসিক ভারসাম্যহীনতা নয়। একটি টেকসই ভবিষ্যত গঠনে সুস্বাস্থ্যের বিকল্প নেই। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার বক্তব্য অনুযায়ী, স্বাস্থ্য সম্পূর্ণরুপে মানসিক,সামাজিক এবং শারীরিক সুস্থতার একটি অবস্থা, কেবল রোগ বা অসুস্থতার অভাব নয় (১৯৪৮)। এখানে একটি ধারণা স্পষ্ট যে সুস্থতা বলতে শরীর এবং মনের এবং সামাজিক অবস্থাকে বোঝানো হয়েছে। আমাদের খাদ্যাভাস, জীবনযাপন পদ্ধতি, দূষণ,সেবা প্রাপ্তি ইত্যাদি নানা কারণে সুস্থ দেহ,মন বা স্বাস্থ্য বিষয়টি হুমকিতে থাকে। প্রতিদিন ভাত,মাছ,মাংস,শাকসবজি আমারা খেয়ে থাকি। সবচেয়ে বড় কথা হলো খাদ্যের মাধ্যমে আমাদের স্বাস্থ্য হুমকিতে পরছে। এর প্রভাব আমাদের মনেও পরে। সুস্থ শরীর ছাড়া সুস্থ মন ধারণ করা কঠিন। আমাদের জীবন যাপনের অভ্যাসও স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক হতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে অজ্ঞানতার কারণে অতীতকাল থেকেই ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। অসুখ কেবল শরীরেই হয়, এই ধারনাই প্রতিষ্ঠিত। আর এক ধরনের অন্ধকারে ছিল মানুষ। আজও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে মানুষের সেই ধারণার খুব একটা পরিবর্তন ঘটেনি। এর কারণ মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে শিক্ষার অভাব,জানার অভাব এবং চর্চার অভাব।
মানসিক অসুখের খুব একটা গুরুত্বও নেই। শরীরে জ¦র হলে যেভাবে তা সারানোর জন্য ডাক্তারের কাছে ছোটাছুটি করা হয়, বিষন্নতার কারণে ডাক্তারের কাছে ছোটে না। অথচ বহু মানুষ বিষন্নতায় আক্রান্ত। দিনের পর দিন একই অবস্থায় থাকতে থাকতে আরও জটিল মানসিক রোগের দিকে ধাবিত হয়। বর্তমান সময়ের পারিপাশির্^ক অবস্থা মানসিক চাপ তৈরি করছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রেম সংক্রান্ত জটিলতা,পারিবারিক দুশ্চিন্তা,অশান্তি, চাকরিসহ নানা কারণে মানুষ সর্বদাই উদ্বিগ্ন থাকে। এই পরিস্থিতিতে ব্যক্তির মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হয়। মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন আতœহত্যার মতো পথ। অথচ এই চূড়ান্ত পরিণতির আগে সেই ব্যক্তি মানসিক অবসাদগ্রস্থ থাকে বা বিষণœ থাকে। কিন্তু এসব বিষয়ে আমরা বা আমাদের পরিবার এখনও অসচেতন। অথচ বহু আধুনিক চিকিৎসা এমনকি কেবল কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমেই তাকে সুস্থ করা সম্ভব। তাকে আতœবিশ্বাসী করা সম্ভব। চিকিৎসা ব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক এগিয়েছে। ফলে সময় হয়েছে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন হওয়ার।

অ.আ, প্রকাশকাল- 12:00 am

কবি অলোক আচার্য

সকল পোস্ট : অলোক আচার্য