ইংরেজিতে স্বাস্থ্য নিয়ে একটি কথা প্রচলিত রয়েছে। স্বাস্থ্যই সম্পদ। স্বাস্থ্যই সকল সুখের মুল। সুস্থ দেহের সাথে সুস্থ মনের যোগসূত্র রয়েছে। শরীর সুস্থ না থাকলে মন সুস্থ থাকে না। কোনো কাজে মনোযোগ রাখা কঠিন হয়। আর সুস্থ স্বাস্থ্য বলতে একটি রোগমুক্ত সুন্দর জীবনকে বোঝায়। যদিও একসময় ভ্রান্ত ধারণা ছিল যে স্বাস্থ্য শব্দটির সাথে শরীরের স্থুলাকার বা শীর্ণকার এর একটি সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য প্রকৃতপক্ষে একটি নিরোগ দেহ যা প্রতিটি মানুষ প্রত্যাশা করে। স্বাস্থ্য শব্দটির অর্থ অনেক বড়। যদিও স্বাস্থ্য বলতে আমরা সচরাচর আমাদের শরীরের অবস্থাকেই বুঝি। এর সাথে যে মনের সুস্থতার সম্পর্কও ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে আছে সেটাও বুঝতে পারি না। এর সাথে সামাজিক বিষয়টিও জড়িত। প্রচুর টাকা-পয়সা ,গাড়ি-বাড়ি থাকলেই তাকে সুখী মনে করার কোনো কারণ নেই। একজন অসুস্থ ব্যক্তির কাছে এর কোনো মূল্য নেই। সে যেকোনো মূল্যেই সুস্থ হতে চায়। একজন ধনী যে কিছুই খেতে পারে না অথচ তার সামনে খাদ্যের পাহাড় বিপরীতে একজন হাড়ভাঙা খাটুনি করা সুস্থ ব্যক্তি যে তৃপ্তি সহকারে তার খাদ্য গ্রহণ করতে পারছে। সুস্থতা বিষয়টি এমনই। বহু ধন সম্পদ তার কাছে মূল্যহীন। পেটপুরে খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে শেষ পর্যন্ত অম্বল বানিয়ে বিছানায় ছটফট করার চেয়ে পরিমাণমতো খেয়ে সুস্থ থাকাটা বেশি জরুরি। খাদ্যের গুণ যেমন মুখের স্বাদের ওপর নির্ভর করে না তেমনি স্বাস্থ্য বিষয়টিও কেবল শরীরের ওপর নির্ভর করে না। বরং এটি একটি স্বাস্থ্য বিষয়ে ক্ষুদ্র ধারণামাত্র এবং প্রচলিত ধারণা।
একটি টেকসই ভবিষ্যত গঠনে সুস্বাস্থ্যের বিকল্প নেই। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার বক্তব্য অনুযায়ী, স্বাস্থ্য সম্পূর্ণরুপে মানসিক,সামাজিক এবং শারীরিক সুস্থতার একটি অবস্থা, কেবল রোগ বা অসুস্থতার অভাব নয় (১৯৪৮)। এখানে একটি ধারণা স্পষ্ট যে সুস্থতা বলতে শরীর এবং মনের এবং সামাজিক অবস্থাকে বোঝানো হয়েছে। প্রতি বছর ৭ এপ্রিল বিশ^ স্বাস্থ্য দিবস হিসেবে পালন করা হয়। সারা বিশে^ই দিবসটি গুরুত্ব অনুধাবন করে পালন করা হয়। ১৯৪৮ সালের ৭ এপ্রিল বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা গঠিত হয়েছিল। ১৯৫০ সালের ৭ এপ্রিল থেকে বিশ^জুড়ে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। বর্তমান সময়ে নানা কারণে স্বাস্থ্য একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। আমাদের খাদ্যাভাস, জীবনযাপন পদ্ধতি, দূষণ,সেবা প্রাপ্তি ইত্যাদি নানা কারণে সুস্থ দেহ,মন বা স্বাস্থ্য বিষয়টি হুমকিতে থাকে। সুস্থ দেহের জন্য নিরাপদ খাদ্য অবশ্য প্রয়োজনীয়। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরা বেশ চ্যালেঞ্জিং। আমরা প্রতিদিন যে খাবার খাই সেগুলো কতটুকু নিরাপদ তা আমরা অধিকাংশই জানি না। চোখের আড়ালে প্রায় সব ধরনের খাদ্যেই কোন না কোনভাবে ভেজাল মেশানো হচ্ছে। আমরাও সেই ভেজাল খাদ্য নিয়মিতই গ্রহণ করছি। এভাবে নিয়মিত ভেজাল খাদ্য গ্রহণে আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিনষ্ট হচ্ছে। যারা ব্যবসায়িক লাভের আশায় খাদ্যে ভেজাল মেশানোর কাজ করছে তারা নিজেরাও সেই অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করছে। বাঙালির প্রধান খাদ্য ভাত। প্রতিদিন ভাত,মাছ,মাংস,শাকসবজি আমারা খেয়ে থাকি। সবচেয়ে বড় কথা হলো খাদ্যের মাধ্যমে আমাদের স্বাস্থ্য হুমকিতে পরছে। এর প্রভাব আমাদের মনেও পরে। আবার আমাদের নিজেদের খাদ্যাভাসের কারণেও সুস্থ শরীর অসুস্থ হয়। খাদ্যে অতিরিক্ত তেল,চর্বির ব্যবহার, জাঙ্ক ফুড গ্রহণের প্রবণতা বৃদ্ধি,রাস্তার পাশের খোলা খাবারের প্রতি আকর্ষণ বিশেষ করে আমাদের ছেলেমেয়েদের কাছে এই খাবার খুব আকর্ষণীয়, পঁচা-বাসি খাবার খাওয়া ইত্যাদি কারণে স্বাস্থ্য ভেঙে পরে।
সুস্থ শরীর ছাড়া সুস্থ মন ধারণ করা কঠিন। আমাদের জীবন যাপনের অভ্যাসও স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক হতে পারে। বেশ কৌশল করে আমাদের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে। আবার চাল থেকে মুড়ি তৈরি করার সময়ও মুড়িকে আকর্ষনীয় করতে ইউরিয়া সারের ব্যাবহার করা হয়। মাছ কয়েকদিন ধরে অবিকৃত অবস্থায় রাখতে এদেশে অসাধু ব্যবসায়ীরা ফরমালিন ব্যাবহার করছে। এতে তারা লাভবান হচ্ছেন কিন্তু ক্রেতার নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য মারাত্বক ঝুঁকির মধ্যে পরছে। ফরমালিন সাধারণত ব্যাবহার করা হয় গবেষণাগারে পঁচনশীল কোন জিনিসকে দীর্ঘদিন ঠিক রাখতে। কিভাবে যেন আমাদের দেশের এক শ্রেণির ব্যবসায়ির মাথায় পরিশেষে, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল এই কথাকে মাথায় রেখে সুস্বাস্থ্যের জন্য জীবনযাপন অভ্যাস পরিবর্তন করা, সর্বদা আরাম-আয়েশ ত্যাগ করে পরিশ্রম করা, খাদ্যাভাস পরিবর্তন এবং সমস্যাক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা ও সেভাবে জীবনযাপন করা।
অলোক আচার্য