রসালো ও সুস্বাদু ফল তাল// অলোক আচার্য


কথায় বলে তাল পাকা গরম! ভাদ্র মাসের গরমে বাজারে প্রচুর পাকা তালের সমারোহ দেখতে পাওয়া যায়। তবে শ্রাবণের শেষ থেকেই দেশের গ্রামে গঞ্জের হাটে-বাজারে পাকা তাল উঠতে আরম্ভ করে। পাকা তালের মিষ্টি ঘ্রাণ ভাসে বাতাসে। তাল অত্যনত্ম সুমিষ্ট এবং রসালো একটি ফল। তাল গাছ পাম গোত্রের একটি অন্যতম দীর্ঘ গাছ। এই গাছের পাতাগুলো পাখার মতো ছড়ানো থাকে। ফল হিসেবে তাল এবং এর পাতার বহুমুখী ব্যবহারের কারণে তালগাছ জনপ্রিয়। তাল গাছের পাতা থেকে তৈরি হয় গরমে আরামদায়ক পাখা। গরমে আরামদায়ক ফলে এই আধুনিক যুগেও তালের পাখার চাহিদা এখনও কমেনি। তালগাছের প্রায় প্রতিটি অংশই গুরুত্বপূর্ণ। পাখা তৈরি ছাড়াও তালপাতার চাঁটাই,ঘরের ছাউনি,মাদুর,খেলার পুতুল তৈরি করা হয়। একসময় তালপাতা লেখার কাজে বহুল ব্যবহৃত হতো। তালপাতায় লিখে তা সংরক্ষণ করা হতো। তালের কান্ড দিয়ে নৌকা তৈরি করতে দেখা যায়। এছাড়া বাড়িও তৈরি হয়।

তাল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ’ Borassus flabellifer । এই ফলের আবার একাধিক ইংরেজি নাম রয়েছে। তবে তাল শব্দটি আমাদের কাছে সুপরিচিত। কারণ বাংলা শব্দে এর একাধিক ব্যবহারও রয়েছে। যেমন- তালগোল পাকিয়ে ফেলা অথবা তাল না থাকা (কারও হুঁশ না থাকলে বলা হয়)। আবার পিঠে তাল পরার কথাও গ্রামে গঞ্জে প্রচলিত রয়েছে। যাই হোক এটি এশিয়া ও আফ্রিকার গ্রীষ্মকালীন গাছ। আমাদের দেশে রাস্তার পাশে তালগাছ বেশি দেখা যায়। বজ্রপাতে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেতে তালগাছ ব্যাপক হারে লাগানো উচিত। তালগাছ নিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতা লিখেছেন- ’তালগাছ এক পায়ে দাড়িয়ে, সবগাছ ছাড়িয়ে,উঁকি মারে আকাশে।”
ফল এবং বীজ দুই-ই বাঙালির প্রিয় খাদ্য তালিকায়। যখন তাল ছোট থাকে তখন তালের মধ্যেকার নরম রসালো শ্বাসের চাহিদা থাকে ব্যাপক। আবার পাকা তালের চাহিদাও প্রচুর। মিষ্টি ঘন নির্যাস বের করা হয় তাল থেকে। বাজারে সচরাচর দুই ধরনের তাল দেখা যায়। একটি কালো এবং অন্যটি একটু লালচে বর্ণের। তালের নির্যাস থেকে নানা রকমের পিঠা তৈরি করা হয়। তালের রস আটার সাথে মিশিয়ে বিশেষভাবে তেলে ভাজা হয়। এর বাইরেও তালের ব্যবহার রয়েছে। রস দুধ এবং চিনি দিয়ে ঘন জ্বাল দিয়েও খাওয়া হয়। তালের রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। তালে রয়েছে ভিটামিন এ,বি ও সি। এছাড়াও জিংক,পটাশিয়াম,আয়রন ও ক্যালসিয়াম ও বিভিন্ন খনিজ উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। এর সাথে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও এ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান। তাছাড়া তালের রস থেকে মিছরি তৈরি করা হয়।



কবি অলোক আচার্য

সকল পোস্ট : অলোক আচার্য