৯২ বছর বয়সে না-ফেরার দেশে চলে গেলেন ভারতের কোকিলকন্ঠী। রবিবার সকাল ৮.১২ মিনিটে প্রয়াত হন লতা মঙ্গেশকর। লতা মঙ্গেশকরের প্রয়াণে দু’দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। রবিবার সন্ধ্যায় মুম্বইয়ের শিবাজি পার্কে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হবে তাঁর শেষকৃত্য। লতার প্রয়াণে সোমবার অর্ধ দিবস ছুটি ঘোষণা করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারও।
সাধারণত শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-রাজনীতি-ক্রীড়ার জগতে গুরুত্বপূর্ণ কেউ প্রয়াত হলে বিষয়টিকে ১০০ বারের মধ্যে ৯৯ বারই ‘একটি যুগের অবসান’ বলে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। প্রয়াতকে বিরল বিপুল সম্মান জানানোর জন্যই এটা করা হয়। কিন্তু লতা মঙ্গেশকরের ক্ষেত্রে সম্ভবত এই অতি চেনা লব্জ বড় ম্যাড়মেড়ে দেখাবে। কেননা লতার মৃত্য়ুতে তো একটি নয়, ভারতীয় সংস্কৃতিজগতের একাধিক যুগের অবসান ঘটল। ভারতীয় লঘুসঙ্গীতের জগতে বোধ হয় ভেঙে পড়ল গোটা গানের ঘরটিই।
অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ৩৫টিরও বেশি ভারতীয় ভাষায় গান গেয়েছিলেন তিনি। তবে, কেবল ভারতেই নয়, বিশ্বের অনেক দেশে পারিবারিক নাম হয়ে উঠেছিলেন। ৭৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে লতা মঙ্গেশকর তার জাদুকরি কণ্ঠ দিয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে রেখেছিলেন।
তিনি ১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মধ্যপ্রদেশের ইন্ডোরে শাস্ত্রীয় সংগীত ব্যক্তিত্ব ও থিয়েটার শিল্পী পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকর ও শেবান্তির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন।
সাদামাটা পোশাক, হালকা শাড়ি, মাথায় দুটো বিনুনি করা, কপালে টিপ আর মুখে সব সময় হাসি। গান গাইতে শুরু করলেই কানে বাজতো মিষ্টি সুর। এটি পড়ার পরে, আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে লতা মঙ্গেশকরের কথাই বলা হচ্ছে। এক বিরাট শূণ্যতার সৃষ্টি করে আজ তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন, তবে তার গাওয়া গানে তিনি সব সময় আমাদের মনে থাকবেন। লতা মঙ্গেশকরের গান শোনেননি এমন কোনও মানুষ দেশে কমই আছে। ভারতরত্ন, যিনি প্রায় ২৫ হাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন। লতা মঙ্গেশকরের কন্ঠ তার কৈশোর থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত মধুর ছিল। তাঁর সুরেলা কণ্ঠের জাদু ছড়িয়ে লতা মঙ্গেশকর বিশ্বব্যাপী দেশের পরিচিতি বাড়িয়েছেন।
অভিনয় থেকে পেশা জীবন শুরু করলেও পরবর্তীতে তিনি ভারতের কিংবদন্তী গায়িকা হয়ে ওঠেন।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন কিংবদন্তী সঙ্গীত শিল্পী লতা মঙ্গেশকর। তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।
কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর গত জানুয়ারি মাসের শুরুতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
লতা মঙ্গেশকর ছিলেন এমন একজন কিংবদন্তীর প্লেব্যাক গায়িকা, যিনি ভারতের চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গীতকে অন্যরকম এক মাত্রা এনে দিয়েছিলেন।
সঙ্গীতনির্ভর বলিউডের চলচ্চিত্র জগতের শুরু থেকেই, প্লেব্যাক সিঙ্গার বা নেপথ্যের কণ্ঠ শিল্পীরা এই শিল্পের অবিচ্ছেদ্য অংশ – যেখানে পেশাদার শিল্পীরা গান গেয়ে থাকেন আর চলচ্চিত্রের পর্দায় সেসব গানের সঙ্গে মুখ মেলান অভিনয় শিল্পীরা।
‘নাইটিঙ্গেল অব ইন্ডিয়া’ বলে আখ্যা পাওয়া লতা মঙ্গেশকর অর্ধশত বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ভারতের ৩৬টি ভাষায় প্রায় ৩০ হাজার গান গেয়েছেন।
দশকের পর দশকজুড়ে তিনি ছিলেন ভারতের সবচেয়ে বেশি চাহিদাসম্পন্ন সঙ্গীত শিল্পী। বলিউডের প্রত্যেক শীর্ষ অভিনেত্রী চাইতেন, চলচ্চিত্রে তাদের গানটি যেন তাকে দিয়ে গাওয়ানো হয়।
মধ্য ভারতের শহর ইন্দোরে ২৮শে সেপ্টেম্বর ১৯২৯ সালে জন্ম গ্রহণ করেন লতা মঙ্গেশকর। তারা পিতা ছিলেন একজন গায়ক, থিয়েটারের অভিনেতা এবং মারাঠি ভাষায় গীতিনাট্যের প্রযোজনা করতেন।
পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। তাঁর অন্য ভাইবোনেরাও তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন এবং তাঁরাও ভারতের নামকরা গায়ক-গায়িকা হয়েছেন।
কোন গান বা সুর মাথায় গেঁথে যায় কেন?
নিউ ইয়র্কে যেভাবে আয়োজিত হয়েছিল বিখ্যাত ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’