এক
অঝোর মেঘ কে ছুৃঁয়ে বাঁচি বলি বহুবার –
অই যে আপন্ন মৃত্যু তারও স্বপ্ন বধূয়ার !
তাই পিনকাটা প্লেয়ার বাজায় গান –
‘নিরজনে সখী বলো বধূয়ারে’ স্বপ্ন হয়রান।
অকারণে আঁচলতলে সাঁজাল জ্বলে –
অকরুণ আমাদের ছায়াবাজি হেঁটে চলে।
হা মাথার ‘পরে মাথাগোঁজার একটি ছাত –
ছায়াজ্বরে খসে প্রচুর পিপাসা দিনরাত।
ভাবছি অলস একা এদেশ-বিদেশে ভেসে
হাতের পাশের প্রেমের হাতছানিতে শেষে –
কি না কি যেন পাইনি সে কি অতন্দ্র দুহাত
সে ধোঁয়াশাচ্ছন্ন তবু চিরচেনা হাত।
সে একা যায় কুয়াশাডোবানো পথে –
সে হারায় পথ বিদিশায় প্রেমান্ধ প্রহরে।
বুঝি কোনও বার্তায় হয়তো বা ছাপা হবে –
জন্মেছে কোথায় কখন এবঙ মৃত্যু কবে।
দুই
এবঙ সকল সাঙ্গ করেই যাওয়া সব ফেলে
ফেলে যাওয়া জানলা জ্বলে এলেবেলে।
তখন কি নিলো কি দিলো কি আসে যায়
কি ভরসা কি গালমন্দ কি আসে যায়।
জানি যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ –
হা জীবন ঘাটের মড়াও চায় লিলুয়া বাতাস
গরম ভাতেই আহ ভেতো বাঙালির সুখ –
গরম কফির কাপে পোড়াঠোঁট তেতোমুখ
হৃদি জুড়িয়ে যাওয়া অব্দি অপেক্ষা ভালো
হুজুগে বাঙালি অদিনে অপেক্ষা জানে ভালো।
এভঙ জীবনমরণপণ বাঙালি জানে।
আলোঅন্ধকারেও বাঙালি ধৈর্য্য জানে।
তিন
আমাদের অশ্রুত যে শ্রুতলিপিকায় –
আমাদেরই অভাবনীয় শত চলে যাওয়ায় -মহাকাল বাজনা বাজিয়ে যায় –
চিরকালীন সিম্ফনী কেউকেউ লিখে যায়।
কেউ তারে চিত্রপটে শত রঙের বিভায়
ধরে রাখে অধরায়।
আমি বলি — মহাকাল বাঁশরী বাজাও
আমি বলি — মহাকাল বাঁশরী বাজাও।
চার
কত রঙহীন দিন সেও তো কেটেছে ঠিক।
ঘুম-নির্ঘুম কালরাত ঘড়ির কাঁটায় টিকটিক ঠাডাপড়া পাড়াগুলি থমধরা তারাগুলি
অই যে আকাশখাকি কুকুরের ঘেউগুলি
একাত্তুর এমনই ছিলো রঙচটা ছালওঠা
ধর্ষকামে বিভৎসতায় ঝাঁঝরা সে ঠা-ঠা
গুলিতে-বেয়নেটে-কামানে জীবন্ত লাশ।
বাংলার বুক খাঁখাঁ রক্তাক্ত ইতিহাস।
ও শিল্পী ও কবি আঁকো লিখো রক্তছবি …
তবেই তুমি প্রেমী তুমি শিল্পী তুমি কবি।
ও শিল্পী ও কবি আঁকো লিখো রক্তছবি …
তবেই তুমি প্রেমী তুমি শিল্পী তুমি কবি।
পাঁচ
জেনেছি বয়স পেয়ে দৃষ্টিতে বৃষ্টিতে আর
নেইগো তেজালো সে দারুণ সৃষ্টিধার।
জেনেছি বয়স পেয়ে মরিচা ধরেছে মনে
জঞ্জালবর্জ্যের তোড়ে হৃদি হারিয়েছে বনে।
তথাপি শীতের সেই শিউলি-বকুল
অদম্য অন্তরে যুঁইজবাফুল …
আমাদেরই সে মেঠো ঘাসফুল …
সম্বৎসরের ঝরে ইতিহাসফুল।
জেনেছি শতেক ভুল
ভুলের মাশুল দিলে ফুটতেও পারে ফুল।
বহুল হেমন্তে ফাল্গুন দ্যোদুল
ছেঁড়াফুলে কম্পমান বসন্ত দ্যোদুল।