অলোক আচার্য–ছয় ঋতুর দেশে সবশেষে আসে ঋতুরাজ বসন্ত। প্রকৃতি সেজে ওঠে নতুন রুপে। আর প্রকৃতির এই যে রুপের পরিবর্তন ঘটে তার কারণ হলো নানা বর্ণের,আকারের ফুল ফোটে এ সময়েই। ফসলের মাঠ ছেয়ে যায় সবুজে। প্রকৃতিতে দখিণা বাতাস দোলা দেয়। সেই বাতাস মানুষের মনেও ছোঁয়া দিয়ে যায়। গাছে গাছে আম,লিচু,কাঁঠালের মুকুল দেখা দেয়। তবে বসন্তে সবার আগে আসে পলাশ, শিমুলের নাম। কারণ এই দুই ফুলের গাঢ় রং আর রুপ যা যৌবনদীপ্তের তারুণ্যের প্রকাশ ঘটায়। ঝকঝকে রোদে টকটকে লাল শিমুল সহজেই সকলের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। পলাশ ফুল সৌন্দর্যে অতুলনীয় হলেও সহজে দেখা যায় না। যে ফুল সহজে দেখা যায় সেটি শিমুল ফুল। রংয়ের সৌন্দর্যে পলাশের চেয়ে কম যায় না এ ফুল। বরং থরে থরে শিমুলের ডালজুড়ে ধরে থাকে বসন্ত এলে। বাংলাদেশ তো বটেই এই ফুল দেখতে পাওয়া যায় ভারত,দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া,পূর্ব এশিয়াতেও। শীতের শেষে শিমুল গাছের পাতা ঝরে যায়। বসন্তের শুরুতেই অথবা মাঘের শেষ থেকেই লাল টকটকে শিমুলের কলি আসতে শুরু করে। তারপর ফুলের কলি থেকে লাল পত্র বেরিয়ে আসে। লাল শিমুল ছাড়াও এক ধরনের সাদাটে ধরনের ফুলও ফোটে তবে তা আমাদের দেশে দেখা যায় না। লাল না হলে তো বসন্ত পূর্ণতাই পেতো না এদেশে। শিমুল ফুলই তো জানান দেয় প্রকৃতিতে বসন্ত এসেছে। অসংখ্য পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয় শিমুল গাছ। বসন্তের অন্যতম সৌন্দর্যের প্রতীক হলো শিমুল ফুল। লাল টকটকে শাড়ি গায়ে নতুন বউ যেমন সেজে থাকে, বসন্ত এলে শিমুল গাছও যেন সেভাবেই ঢেকে যায়। এই লাল এতটাই গাঢ় যে পথের ক্লান্তি এক নিমেষেই উধাও হয়ে যায়। তবে সময়ের সাথে সাথে আজ আর সেভাবে চোখে পরে না শিমুল গাছ। ফলে শিমুল ফুলও কমই দেখা যায়। শিমুল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ’বোমবাক্স সাইবা লিন’। রোপণের ৫-৬ বছরের মধ্যে শিমুল গাছে ফুল ফোটে। গাছ ৯০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। অকারণেই এই গাছ কেটে ফেলছে মানুষ। সৌন্দর্য এবং উপকারিতা কোনো অংশেই কম যায় না শিমুল গাছ।