রবিবার আছে, মানুষটার অবসর আর নেই! নিজের নাম দেওয়া রবিবার বাড়িটির মালিক বুদ্ধদেব গুহ সোমবারে কার্যত রবিবারের ছুটি নিয়ে পাকাপাকিভাবে চলে গেলেন। সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ শান্তিনিকেতন। শ্যামবাটিতে ফাঁকা পড়ে থাকা নিজের নাম দেওয়া রবিবার বাড়ি আজ মান্নাদের গানের কলির মতো ময়ুর মহল হয়ে পড়ে আছে। রাজাই শুধু নেই। পিছনে পড়েই আছে তাঁর মুকুট, তাঁর অমর সৃষ্টি একটু উষ্ণতার জন্য, মাধুকরী, বাবলী, চান ঘরে গান ইত্যাদি। একের পর এক অনবদ্য সৃষ্টি। তিনি শান্তিনিকেতনের স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে ভোটার না হলেও, পঞ্চায়েতের ট্যাক্স দিতেন তিনি। সর্বোপরি তাঁর মন পড়ে থাকত সেই শান্তিনিকেতনে। যেখানে ঘন ঘন আসতেন তিনি। আড্ডা দিতেন, গলা ছেড়ে গান গাইতেন। এই রসিক মানুষটি সখ করে তৈরি বাড়ির নাম দিয়েছিলেন ‘রবিবার’!
রূপপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন শ্যামবাটিতে এই বিশাল বাড়ি রবিবার। এখন ফাঁকাই। কেয়ারটেকার বাড়ির তদারকি করেন। শান্তিনিকেতনের প্রতি তাঁর অবাধ টান। শান্তিনিকেতনে দীর্ঘদিনের বাসিন্দা ছিলেন তিনি। চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফার্ম ছিল তাঁর। শান্তিনিকেতনে প্রায়ই আসতেন তিনি। তাঁর স্ত্রী ঋতু গুহ খুব ভালো রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইতেন। পাঁচ ছয় বছর আগে মারা যান। বুদ্ধদেববাবু নিজেও খুব ভালো গাইতেন। খুব রসিক মানুষ ছিলেন। আনন্দবাজারের রবিবাসরীয়তে শিকারের উপর লিখে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। স্থানীয় রূপপুর পঞ্চায়েতের আধিকারিক গীতিকণ্ঠ মজুমদার বলেন, ‘বুদ্ধদেববাবুর সঙ্গে পরিচয় হয় আনন্দবাজারের সাংবাদিক পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সূত্রে। তখন রূপপুরে পঞ্চায়েতের সেক্রেটারি ছিলাম। ২০০৩ সাল থেকে তাঁকে দেখেছি। রবিবার তাঁর বাড়ির নাম। তবে তিনি রোববার বলতেন। খুব রসিক মানুষ ছিলেন। খুব ঘুরতে ভালোবাসতেন। আড্ডা দিতেন। ভালো গান গাইতেন। খুব ধনী পরিবারের ছেলে। এপ্রিল মাসে তাঁর করোনা হয়। পরে ভালো হয়ে যায়।’
বিশ্বভারতীর প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজ কলি সেন বলেন, ‘খুব মজার মানুষ ছিলেন। হৈ হৈ করতে ভালো বাসতেন। খাওয়াতে ভালো বাসতেন। দুই একবার কথাবার্তা হয়েছে। খুব ভালো গান গাইতেন।’
(পূবের কলম পত্রিকায় প্রকাশিত।)