অলিয়ার রহমান

বাসনা।। অলিয়ার রহমান

তোমার সাথে হয়নি দেখা বছর পাঁচ,
আজও তবু জ্বালছে আলো শিমুল গাছ।
আজও সেথায় দুটি পাখি বাঁধছে ঘর,
তোমার মতো হঠাৎ তারা হয়নি পর।
বিবেক দিয়ে বড় হবার অনেক দায়,
আমার মতো সবাই বুঝি দহন সয়?

আঁখিজল || অলিয়ার রহমান

তোমার চোখের অশ্রু দেখে ভাবি,
চোখের জলেও আছে আমার দাবি।
দেখি তোমার কান্না হাসির খেলা,
আমার কাটে ব্যস্ত ব্যাকুল বেলা।
যতই আমি মুছি চোখের জল,
দুষ্টু লোকে খুঁজবে তাতে ছল!

মনের বসতবাড়ি।। অলিয়ার রহমান

সাদা মেঘের মত দ্রুতলয়ে উড়ে যায় মন
ফাগুনের দখিনা বাতাসে
উড়ে যায় তোমার বসতবাড়ির খোলা আঙিনায় –
যেখানে প্রতিদিন মন খারাপ করে ফুটে থাকে
বেলী আর ব্যথিত রক্তজবার দল।

নিম্নচাপ।। অলিয়ার রহমান

সকাল থেকে ঝরছে বারি অনিমেষ
চায়ের কাপে সকালটাতো কাটলো বেশ।
বৃষ্টি মেখে কেমন যেনো ঝাপসা কাঁচ
হঠাৎ আমার বুকের মাঝে নীলচে আঁচ।
জানলা খুলে উদাস মনে তাকিয়ে রই
আঁধার দিনে মানুষগুলো যাচ্ছে কই?
মনটা ওড়ে মেঘের সাথে অচিনপুর
সুখের বাড়ি আমার থেকে অনেক দূর।
ব্যালকনিতে ভিজছে টবের করমচা
হাতের মাঝেই ঠাণ্ডা হলো গরম চা৷
অলস দুপুর হারিয়ে গেলো সন্ধ্যাতেই
চোখের কোণে অশ্রু-মনের মন্দাতেই।
মাতাল হাওয়ায় সাগরজুড়ে নিম্নচাপ
তাই কি আজি আমার এতো মন খারাপ?

অন্ধকার যাত্রা।। অলিয়ার রহমান

চলতে শেখার পর থেকে মানুষ
অবিরাম ছুটে চলেছে আগামীর পিছে পিছে
দুরন্ত কৈশোর একটু একটু করে হারিয়ে গেছে
মোটা-মোটা বইয়ের কালো অক্ষরের
নীচে চাপা পড়ে।
একটা লাল ঝুটি কাকাতুয়ার ডিম থেকে
কীভাবে তার অবুঝ ছানাটি পৃথিবীর রূপ দেখে
সে ইতিহাস জানার আগেই যৌবন এসে
উঁকি দিয়ে যায় কৈশোরের শেষ প্রান্তের শরীর জুড়ে।
তারপর কতো হাসি, কতো কান্না, কতো প্রেম
কতো বিরহ, কতো মান-অভিমানের পালা বদল।
একটি মায়াবী মুখের জন্য জীবন উৎসর্গ
করে দিব বলে-যৌবনের দীপ্ত আলোয়
উজ্জ্বল করে দেয় মুখর গোধূলি বেলা।
খোঁপার ফুল, সোনার কাঁকন, শেষের কবিতা
অথবা বিস্তীর্ণ সমুদ্র সৈকত নেশায় আচ্ছন্ন
করে রাখে মানুষের সমস্ত দেহমন।

তারপর একদিন জানা যায়-এইসব শোভাযাত্রা
মরীচিকার মতো মানুষকে ভালোবেসে গেছে
একবিন্দু শিশিরের আয়ু নিয়ে।
বস্তুত, আলোর সন্ধানে ছুটে চলা এক-একটা
মানুষের জীবন, পরিশ্রান্ত দেহে ডুবন্ত সূর্যের
সামনে এসে নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকে
অনন্ত অন্ধকার যাত্রার জন্য।

মানুষের মন।।অলিয়ার রহমান

এই দিন এই ক্ষণ
এই নিশি এই মন
কভু তুমি ফিরে পাবে আর?
এই শীত এই ভোর
চিরচেনা ঘরদোর
কবে যেনো হয়ে গেছে পর!
তুমি একা আমি একা
তবু শুধু বেঁচে থাকা
নতুনের মায়াডোরে বাঁধা,
তারপর একদিন
কেউ হবে সাথী হীন
বাকিদের চোখজুড়ে কাঁদা।
যতটুকু কাছে পাও
ভেদাভেদ ভুলে যাও
মনে করো অতীতের কথা,
হয়তোবা এই ভাবে
আর নাহি কাছে পাবে
সেইদিন শুধু শোক গাঁথা।
আজ এই দিনটাকে
জীবনের বাঁকে বাঁকে
বেঁধে রেখো বাকীটা জীবন,
ভুলে গেলে যাও তবে
কেউ আর এই ভবে-
খুঁজে ফেরে মানুষের মন?

আঁধার।। অলিয়ার রহমান

এখন অনেক রাত-ঝিঁঝিঁপোকা চলে গেছে ডেকে
রাতজাগা পাখি তবু আঁধারেতে বেঁচে থাকা শেখে
একখানি বাঁকা চাঁদ- সেও আজ কালো মেঘে ঢাকা,
আর কভু উড়বে না- মানুষের বিবেকের পাখা?