পিঁপড়ে খেয়ে প্রথম সাঁতার শেখা!

দ্বিতীয় পর্ব

কুরুঙ্গী গ্রামের পাশেই ছিল গাজীখালি নদী। সেই নদীর যৌবনকাল হারিয়ে এখন দন্তহীন বাঘের রূপ ধারণ করে অশীতিপর বৃদ্ধের মতো নিথর, নিশ্চল হয়ে শুধু নিজের অস্তিত্বের জন্য লড়াই করছে।
নদীর এখন সেই ভরা যৌবন তো দূরে থাক, আছে শুধু জীর্ন-শীর্ণ শরীর। যে শরীরে পানি নেই, এখন তার মরো মরো অবস্থা। ছোটোবেলায় আমার কাছে এই নদীই ছিল সৌন্দর্য আর প্রকৃতির অপূর্ব এক সাম্রাজ্য। বর্ষায় নদীর ভাঙ্গা-গড়া, উথাল-পাথাল ঢেউ, স্রোতের শোঁ-শোঁ শব্দ, মাঝি-মাল্লাদের পাল তোলার নয়নাভিরাম দৃশ্য, সারি-সারি বাঁধা ডিংগী নৌকার বহর মনকে ভরিয়ে আর ভুলিয়ে দিত সবকিছু অনায়াসেই। নদীতে গোসল করতাম দলবেঁধে। সাঁতর কাটতামও দলবেঁধে। যেদিন প্রথম সাঁতার শিখতে গেলাম সেদিন আমাকে পিঁপড়ে খেতে হয়েছিলো এই জন্য যে, পিঁপড়েরা পানিতে ভাসে, আমিও সাঁতরাতে-সাঁতারাতে পানিতে ভাসতে পারর । সেই যে শুরু সাঁতারে আর কষ্ট হয়নি। তবে মধ্য বয়সে এসে বেশ ক’বছর আগে সেন্টমার্টিন বিচে সাঁতারাতে গিয়ে শরীরের ভারসাম্যতা রাখতে পারিনি। যা বলছিলাম, নদীতে ডুব দিয়ে হারিয়ে ছোটো বাচ্চাদেরকে মজা দেখাতাম।ওরা হেঁসে খুন হতো।
দূর-বহুদূরের কেরাই নৌকা, গয়না নৌকা, নানা রঙের পালতোলা নৌকা নদী বেয়ে বেয়ে চলে যেত অদৃশ্য অন্য কোনোখানে, অন্য কোনো লোকালয়ে। মাঝিরা মনের আনন্দে ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, পল্লীগীতি গেয়ে গেয়ে সুর তুলতো। সেই সুর মনকে ছুঁয়ে যেত। আর নিজেকে নৌকার মাঝির মধ্যে খুঁজে বেড়াতাম।
বেপরোয়া উদাসী মনে নদীর পাড়ে বসে বসে কত কথাই না মনে হতো। মনে হতো নদীর স্রোতে ভেসে ভেসে যদি হারিয়ে যেতাম সাত সমুদ্দুর তের নদীর অজানা এক স্বপ্নের দেশে- যেখানে পরীরা খেলা করে উড়ে উড়ে- বাতাসে বাতাসে।স্বপ্ন ভেঙে যায়।

কবির ভাষায়-
‘রূপ নারাণের কূলে
জেগে উঠিলাম
জানিলাম এ জগৎ
স্বপ্ন নয়।
রক্তের অক্ষরে দেখিলাম
আপনার রূপ
চিনিলাম আপনারে
আঘাতে আঘাতে
বেদনায় বেদনায়;
সত্য যে কঠিন,
কঠিনেরে ভালোবাসিলাম,
সে কখনো করে না বঞ্চনা।’


(চলবে)

মন্তব্য করুন