বাক্সবন্দী অনুকাহিনী /মুক্তি

বাক্সবন্দী অনুকাহিনী

সন্ধ্যা নামার আগেই চা বাগানের টিলার উপর ছোট্ট বাংলোটিতে টিম টিম বাতি জলে উঠলো
ওখানে ওরা দুজনেই ছিল ।
আসলে ওরা ওখানে থেকে গিয়েছিলো একযুগের একটু বেশি সময় ধরে ;পরস্পর পরস্পরের ভালোমন্দ দেখভালে।
গ্রীষ্ম বর্ষা পেরিয়ে এখন ওখানে
শীত তার আগমনী বার্তা জানান দিয়েছে,
অরণ্যের বুকে যেন পাতাঝরার মাতম ,
উত্তরের হিমশীতল বাতাসে বৃক্ষের বুকে কমলারঙের বিয়োগান্তের সুর চারিদিকে,
জানালার কার্নিশে একটু একটু করে কুয়াশাদের আনাগোনা,
বাইরে আকাশ ধূসর আবরণে ঢেকে যাচ্ছে ক্রমাগত,
চা বাগানের চাঁদোয়া শিশির বিন্দুর আলতো ছোয়ার আবেশে সিক্ত
আলো গুলো আস্তে আস্তে ঝিমুতে শুরু করেছে
ওদের হাতে সোনালী কাপ গুলো কাটাচ্ছে ব্যস্ত সময় ,
দুজন দুটো হেলান চেয়ারে বসে ;হয়তো একই দিকে তাকিয়ে অথবা
মনোচোখ দেখে ভিন্নতা।
রাত নামে ,
চারদিকে আদিগন্ত বনে রাতজাগা পাখিগুলো নিস্তব্ধতা ভাঙার চেষ্টায় ব্রত, নিস্তব্ধতা ভাঙতে অভিমানী মেঘেরাও গুরি গুরি জল নুপুরের ছন্দ তুলে,
কিনতু ওরা দুজনের কেউই নিস্তব্ধতা ভাঙবে না বলে পন করে রেখেছে ;
একরাশ নিস্তব্ধতার মাঝে সচল দুটি মন নিজস্ব চৈতন্যে ।
যুগের পর যুগ একসাথে পথ হেটেও
অবিকশিত কথা কিছু একান্ত নিজস্ব রয়ে গেছে ;
যার খবর নেবার সময় হয়নি যেন কতকাল,
মরীচিকা ধরা বাক্সবন্দী অনুকাহিনী ;
যেখানে জীবন ধারণ করেছে অসংখ্য অসমাপ্ত ঘটনার অস্তিত্ব,
অনাদিকালের বোঝাপড়া গুলো বাকি রয়ে গেছে যুগের পর যুগ।
রাতভর মৌনতার আড়ালে নতুন করে জন্ম নেয় অপ্রকাশিত আরো এক পরিনাম, অন্ধকার কেটে হয় ভোর ,
আলো জলে ,
কোলাহল হয় ,
কোলাহল ভাঙে ,
আমাবস্যা পূনির্মা সবই নিয়মে চলে ,
জীবনের প্রয়োজনের দেনা পাওনা মিটে ,
চা বাগানের টিলার ওপর ছোট্ট বাংলোটিতে সন্ধ্যা নামার আগে প্রতিদিন নিয়ম করে বাতি জলে
শুধু অনুকাহিনী গুলো কয়েদি হয় মরীচা ধরা পুরাকালীন বাক্সে।