নাসির আহমেদ কাবুলের তিনটি কবিতা

কবিতাগুলো তোমার জন্যে
নির্ঘুম রাত জেগে থাকার গল্প শোনাতে পারবো না তোমাকে আর,
বর্ষায় কদম ফোটার আনন্দ ভাগাভাগির সময়ও
ফিরে আসবে না আর কোনদিন;
পদ্মপাতার জল-টলমল চোখে অভিমান থিতু হবে না কখনও আর,
হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দেয়ার ইচ্ছেগুলো মন খারাপ করা
অন্ধকারে ডুবসাঁতার দেবে যখন, তখন
কবিতাগুলো তোমার হবে।

এক-একটি কবিতা হাজার মণের দীর্ঘশ্বাসের পাহাড় হয়ে
তোমার বুকে আছড়ে পড়বে একদিন,
সেইদিন তুমি কুহকের অরণ্য ভেদ করে জোছনার জলে
অবগাহন করবে—কবিতার প্রতিটি শব্দ-প্রতিশব্দ-উপমা-রূপক
তোমার আঁচলে ঠাঁই পাবে—আর তুমি
অভিধানের পাতায় পাতায় আমাকেই দেখবে যখন,
তখনই কবিতাগুলো তোমার হবে।

কবিতার জন্য চাই সফেদ আকাশ, সোনালী চাঁদের হাসি,
ঝিরঝির বৃষ্টি, মুগ্ধ বাতাসে ঝিঁঝির উৎসব,
ঘাসের ডগায় রূপালি সকাল—
পাখির ঠোঁটে বারোমারি কীর্তন…

এখন বারবেলা, কালবেলা; মন খারাপ করা মজা পুকুরে
অভিমানী জোছনার ডুবসাঁতার, কার যেন সখের নোলক
দুর্বাঘাসে মৃত্যুবিছানায়—ইচ্ছের পানশি মাঝ নদীতে টালমাটাল,
এমন অসময়ে কবিতাগুলো তোমার জন্য নয়—
আমিও কেউ নই তোমার।

পুরানা পল্টন, ঢাকা
৩ জুলাই, ২০১৮


আহা, এমন বৃষ্টি চাইনি আমি!

হঠাৎ বৃষ্টির শব্দে কানের কাছে দীর্ঘশ্বাস শুনি যেন
যেন বাতাস ভারি করা আর্তনাদের বিউগল বাজে
গভীর রাতে ঝড়ের শব্দে বৃষ্টির ফোঁটায়;
আহা, এমন বৃষ্টি চাইনি আমি!
এমন অযাচিত বৃষ্টিতে
ভিজতে-ভিজতে শোকার্ত মানুষের সারিতে দাঁড়িয়ে
আমিও আমার অস্তিত্ব নিয়ে লজ্জিত হই,
কেননা আমিও যে পুরুষ!

সবকিছু বৃষ্টির মতো অবিশ্রান্ত এখন-
ফসলি ক্ষেত ডুবে যায় বানের জলে;
ধর্ষিতার আর্তনাদ মেঘের শব্দকেও ছাড়িয়ে যায়;
শহরের, নগরের প্রাসাদগুলো- অট্টালিকাকে
হলিআর্টিজান, রেইট্রির নরক উদ্যান মনে হয়!
সেই উদ্যানে উলঙ্গ মানুষগুলোর তাণ্ডব দেখে
একাত্তরের কথা মনে পড়ে খুব।

ওরা কারা? উলঙ্গ উদ্ভ্রান্ত জারজ সন্তানরা কি
পাকিস্তানী হানদারদের ঔরসজাত?
ওরা কি রাজাকার, আলবদর-আলসামসদের বীজ!
কী ওদের পরিচয়?
আমি দলা-দলা থুথু ছিঁটিয়ে দেই ওদের মুখে
ওদের মূল্যোৎপাটন চাই এই বাংলায়।

আমি বৃষ্টির জন্য কান পেতে থাকি, অঝর ধারার বৃষ্টি
ভালোবাসার বৃষ্টি, মানবতার বৃষ্টি-
এমন বৃষ্টি নয়, যে বৃষ্টি চোখের জলের
প্লাবন বইয়ে দেয়!

বাসস, ঢাকা
১৩ মে, ২০১৭

তখন বসন্ত ছিলো
তখন বসন্ত ছিলো, ছিলো গাছের পাতায় রোদ্দুর
ঝিলমিল জোছনা রাতে ছিল তারার মিছিল, সেই
এক মুগ্ধ রাতে তোমার দুয়ার ছিল খোলা।
আমি তখন তোমার চোখে চোখ রেখে
দাঁড়িয়েছিলাম।

তখন বসন্ত ছিল, এখন দূর পাহাড়ে ঢেকে আছে সব।

তখন বসন্ত ছিল, ছিলো ঘুমের ঘোরে স্বপ্নের সেতার
দরবারী কানাড়া বেহাগে মাতাল সময় ছিল, তখন
তোমার বাঁশি বেশ আবেগে বেজেছিল
আমি যখন প্রথমবার তোমার
হাত ধরেছিলাম।

তখন বসন্ত ছিল, এখন দুই হাত অনেক দূরের পথ।

তখন বসন্ত ছিল, ইচ্ছেঘুড়ি দূর আকাশে পেয়েছিল ঠিকানা
ব্যাকুল প্রজাপতির ডানায় প্রণয়ের রঙ ছিল, তারপরও
অলক্ষ্যেই দু’জনের পথ দু’দিকে গেলো বেঁকে!
সেই থেকে নদীর দুই তীরে আজও
তুমি আর আমি।

৯ এপ্রিল, ২০১৫
মোহাম্মদপুর, ঢাকা

মন্তব্য করুন