বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান/ নূর হোসেন মোল্লা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতার নাম সায়েরা খাতুন। তাঁর শৈশব এবং কৈশর অতিবাহিত হয় টুঙ্গীপাড়া আর গোপালগজ্ঞে। তিনি ১৯৪১ সালে গোপালগজ্ঞ মিশন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন।অতপর তিনি কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে আই,এ, ক্লাসে ভর্তি হন। এ কলেজ থেকে তিনি বি,এ, পাশ করেন। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগষ্ট ভারত বিভক্তির পর তিনি ঢাকায় আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এল,এল-বি ক্লাসে ভর্তি হন। তিনি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, আবদুর রহমান চৌধুরী, আজিজ আহমেদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, অলি আহাদ, নঈম উদ্দিন প্রমুখ নিয়ে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারী তিনি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র লীগ গঠন করেন। তিনি১৯৪৮ সালের রাষ্ট্র ভাষা বাংলা আন্দোলনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হলে তিনি যুগ্ম সম্পাদক মনোনীত হন। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে তিনি গোপালগঞ্জ আসন থেকে নির্বাচিত হন। এদেশের স্বাধিকার আদায়ের জন্যে ১৯৬৬ সালে আমাদের মুক্তির সনদ ৬ দফা ঘোষণা করেন। পাকিস্তান সরকার ১৯৬৮ তাঁর বিরুদ্ধে আগরতলা যড়যন্ত্র মামলা দায়ের করেন। ১৯৬৯ সালের গণ আন্দোলনের মুখে সরকার ২২ ফেব্রুয়ারী মামলাটি প্রত্যাহার করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারী তিনি বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টোর পরামর্শে আওয়ামী লীগ তথা বঙ্গবন্ধুর নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বাঙ্গালী নিধনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এবং ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্য রাতের আগে অপারেশন সার্চলাইট শুরু করলে বঙ্গবন্ধু রাত ১২-২০ মিনিটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এ রাতেই পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাঁকে গ্রেফতার করে তিন দিন পর পশ্চিম পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালী কারাগারে বন্দি রাখেন। তিনি ন্যায্য অধিকার এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর জীবনে ৪৬৮২ দিন কারাবাস করেন। এর মধ্যে ১৯৩৮ সালে স্কুলের ছাত্র অবস্থায় ৭দিন।১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত ৫ দিন। ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারী পর্যন্ত ১৩২ দিন। ১৯৪৯ সালের ১৯ এপ্রিল থেকে ৮জুলাই পর্যন্ত ৮০ দিন।১৯৪৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ২৭ দিন। ১৯৪৯ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৩ দিন। ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারী থেকে ১৯৫২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ৭৮৭ দিন। ১৯৫৪ সালের ৩০ মে থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২০৬ দিন। ১৯৫৮ সালের ১১ অক্টোবর থেকে ১৯৬১ সালের ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১১৫৩ দিন।১৯৬২ সালের ৬ জানুয়ারী থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত ১৫৮ দিন। ১৯৬৪ সালের ১৯ জানুয়ারী থেকে ১৯৬৫ সালের ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ৬৬৫ দিন।১৯৬৬ সালের ৮ মে থেকে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ১০২১ দিন এবং ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারী পর্যন্ত ২৮৮ দিন। রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট সেনাবাহিনীর কতিপয় বিপথগামী জুনিয়র অফিসার কর্তৃক সপরিবারে নিহত হন। এ সময়ে তাঁর বয়স ছিল ৫৫ বছর ৪ মাস ২৮ দিন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড ছিল বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক হত্যাকান্ড। এ হত্যাকান্ডে বঙ্গবন্ধু সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রী খন্দকার মোস্তাক আহমেদ সহ আওয়ামী লীগের কতিপয় ব্যক্তি জড়িত ছিলেন ।২০২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবর্ষ পূর্তি হয়েছে। আমাদের সৌভাগ্য, তাঁর জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষে আমরা মুজিব বর্ষ পালন করছি।২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালর ১৭ মার্চ পর্যন্ত মুজিব বর্ষের দিনক্ষণ। নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মুজিব বর্ষ পালিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন খাঁটি বাঙ্গালী মুসলিম। তাঁর আচার-আচরণ এবং জীবনযাপনে বাঙ্গালির ঐতিহ্যবাহী ধারা বিদ্যমান ছিল। তাঁর বেশভূষা ছিল সাধারণ। তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী হয়েও তিনি বঙ্গ ভবন ও গণ ভবনে থাকেন নি।তিনি ছিলেন রাখাল রাজা,বাঙ্গালীর স্বজন। তিনি ইতিহাসের সন্তান, নিজেই ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। তিনি ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী। মুজিব বর্ষ উদযাপনে আমাদের দেবার কিছুই নেই।আছে শুধু শ্রদ্ধা আর ভালবাসা। হে আল্লাহ, বঙ্গবন্ধুকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।

মন্তব্য করুন