তিশা মোশতাকের প্রেমকাহিনী : বইমেলায় বিরূপ প্রভাব

কিছুদিন আগে রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদ একই কলেজের শিক্ষার্থী সিনথিয়া ইসলাম তিশাকে বিয়ে করে আলোচনায় আসেন। তারা ভালোবেসে একে অপরকে বিয়ে করেছেন বলে জানান। তাদের বিয়ের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

৬০ বছরের মোশতাকের একটি মেয়েও আছে। তার বয়স ওই তরুণীর থেকে বেশি। এখন তাঁদের এই ‘প্রেমের বিয়ে’ নিয়েও সরগরম নেটদুনিয়া। প্রেমের সপ্তাহে সোশাল মিডিয়াতে হট টপিক এই বিয়ে। কিন্তু তাতে কোনও সমস্যা নেই খন্দকার মোস্তাক আহমেদ এবং সিনথিয়া ইসলাম তিশার। ১৮ বছরের তিশা জানান,  ভালোবেসে এবং স্বেচ্ছায় তিনি বিয়ে করেছেন ৬০ বছরের মোস্তাক আহমেদকে। এখন স্বামীকে নিয়ে সুখের সাগরে ভাসছেন তিশা।

ভালোবাসার শুরু
তিশা জানান, তাদের প্রেমের শুরু ফেসবুকে। তাঁকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান মোস্তাক। তিনি জানান, ওই স্কুলের নবীনবরণ উৎসবে মোস্তাকের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ হয় তার। তিশা সেখানে গিয়েছিলেন নতুন ছাত্রী হিসাবে আর মোস্তাক খন্দকার যান ওই কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য রূপে। তারপরে নিয়মিত কথা বলতে বলতেই তা প্রেমের রূপ পায়।

বিয়ে করতে রাজি

তাদের প্রেম জমে ওঠার পরে পরিণতি কী হবে সেটা তিশার কাছে যানতে চান মোস্তাক। সঙ্গে সঙ্গে তিশা জানিয়ে দেন যে তাঁকে বিয়ে করতে রাজি তিনি। তবে তিশার বাড়ির লোক এই সম্পর্কটা মেনে নেননি। তিশাকে ঘরে তালাবন্ধ করে রাখেন তার বাবা-মা। কিন্তু, বাড়ির ছাদ থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যান তিশা। ঠাকুরগাঁও থেকে তিনি চলে যান ঢাকায় খন্দকার মোস্তাকের কাছে। সেখানে ধর্মীয়রীতির পরে আইনমাফিক বিয়ে করেন তারা।

করা হয় মামলাও

তিশার বাবা-মা খন্দকারের বিরুদ্ধে মেয়েকে অপহরণ করার অভিযোগ করেন। বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালীন তিশাকে কিছুদিন হোমে কাটাতে হয়। মোস্তাকের আইনজীবী সাহাবুদ্দিন খান জানান,  তিশার বাবা সাইফুল ইসলাম একটি মামলা করে তাকে নাবালিকা হিসাবে দাবি করেন। কিন্তু আদালতে তিশা এসে জবানবন্দি দিয়েছেন যে স্বেচ্ছায় তিনি মোস্তাককে বিয়ে করেছেন। তিশা যে প্রাপ্তবয়স্ক তার প্রমাণও দেওয়া হয় আদালতে।

যা খুশি ওরা বলে বলুক

অনেকেই মন্তব্য করেছেন যে টাকার জন্যই এই বিয়ে করেছে তিশা। কিন্তু মোস্তাক বলেন,  ‘তিশা ভালো পরিবারের সন্তান। সে ভালোবেসে আমাকে বিয়ে করেছে। এখানে টাকা-পয়সার লোভের প্রশ্নই আসে না।’ তিশাও জানান,  স্বামীকে তিনি বয়স্ক বলে মনে করেন না। তিনি বলেন,  ‘যে যা খুশি বলুক, আমি তাতে কান দিচ্ছি না। আমি আমার স্বামীর কাছে সুখে আছি।’

বইমেলায় তোপের মুখে আবারও বইমেলা ছাড়লেন মুশতাক-তিশা
শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে বইমেলায় গিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনার সাক্ষী হওয়ার পরে সোমবার আবারও বইমেলায় গিয়েছিলেন সামাজিক মাধ্যমে আলোচিত দম্পতি খন্দকার মুশতাক ও সিনথিয়া ইসলাম তিশা।

তবে সোমবারও একই ঘটনার সাক্ষী হতে হয়েছে তিশা-মুশতাককে। দর্শনার্থীদের ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান ও নানা আপত্তিকর মন্তব্য বইমেলা অঙ্গন থেকে বের হয়ে যেতে হয়েছে তাদের।

সোমবার বিকেলে ৩টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট গেট দিয়ে বইমেলায় প্রবেশ করেন এই দম্পতি। সেখানে গিয়ে কিছুক্ষণ অবস্থান করার পরেই একদল মানুষ ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিতে শুরু করেন। এরপর নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তা নিয়ে মেলা থেকে বের হয়ে আসেন খন্দকার মুশতাক ও তিশা।

এসময় সাংবাদিকদের উদ্দেশে খন্দকার মুশতাক বলেন,  ‘বইমেলা একটি পবিত্র জায়গা। এখানে একজন লেখক-পাঠক হিসেবে আমার আসার অধিকার রয়েছে। যারা এসব করেছে, তারা পাঠক না। তারা মেলায় এসেছে এমন কাণ্ড ঘটানোর জন্য। আমি সাইবার ক্রাইমে অভিযোগ দিয়েছি।’

তিশা বলেন,  ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজন মানুষ বলছে, আমাদেরকে মেরে ফেলতে চায়। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে বলব  আমার নিরাপত্তা কোথায়? একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি আমার নিরাপত্তা চাই।’

এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় খন্দকার মুশতাকের দুইটি বই বের হয়েছে। নিজেদের বইয়ের প্রচারে বইমেলায় গিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন তারা। এ ঘটনায় নিরাপত্তা চেয়ে ডিএমপির শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন খন্দকার মুশতাক ও সিনথিয়া ইসলাম তিশা। শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টায় খন্দকার মুশতাক আহমেদ শাহবাগ থানায় এ জিডি করেন।