ছন্দ ও শুদ্ধ বানান চর্চা/নাসির আহমেদ কাবুল

আমরা যারা নিয়মিত লেখালেখি করি, অন্তত তাদের শুদ্ধভাবে বাংলা ভাষা লেখার চেষ্টা করা উচিত। সেই প্রচেষ্টার সহায়ক হিসেবে আজকের এই পোস্টটি কিছুটা অবদান রাখতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
প্রতিদিন আমরা অন্তত হাজারখানেক শব্দ ব্যবহার করি লিখতে, পড়তে বা কথা বলতে। কথা বলার সময় আমরা বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিকভাষা ব্যবহার করি, সেটা দোষের কিছু নয়। কিন্তু লেখার বেলায় তো প্রমিত বানানটাই লিখতে হবে! বাংলা একাডেমি প্রণীত বানানকে অনুসরণ করে আমি ধারাবাহিক এই পোস্টটি লিখতে চেষ্টা করব। আমার এই লেখায় সহায়তা নিয়েছি বাংলা একাডেমির আধুনিক বাংলা অভিধান, প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম, হায়াৎ মাহমুদের বাংলা লেখার নিয়মকানুন, শিশুসাহিত্যিক জহিরুলের ইসলামের বাংলা ভাষা ও বানানের সহজ পাঠ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান লিখিত বাংলা কবিতার ছন্দ এবং মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান লিখিত বাংলা গান রচনাকৌশল ও শুদ্ধতা থেকে। বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ থেকেও আমি সহায়তা নিয়েছি। সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি ভাষার পণ্ডিত নই, ভুল আমারও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভুলটি ধরিয়ে দিলে কৃতজ্ঞ থাকবো।
অনুচ্ছেদ এক : তৎসম শব্দ
তৎসম শব্দ কী?
সংস্কৃতভাষা থেকে অপরিবর্তিত অবস্থায় যেসব শব্দ বাংলাভাষায় এসেছে সেগুলোই তৎসম শব্দ।
বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম-এ তৎসম শব্দের ব্যবহারে কয়েকটি ব্যতিক্রম উল্লেখ করা হয়েছে। এই ব্যতিক্রমগুলি ছাড়া বাকিসব তৎসম শব্দ পূর্বের নিয়মেই লিখতে হবে।
ই ঈ উ ঊ
যেসব তৎসম শব্দে ই ঈ উ ঊ উভয় শুদ্ধ, সেসব শব্দে আমরা শুধু ‘ই’ ব্যবহার করব। আকার চিহ্নেও তাই করব আমরা।
যেমন : কিংবদন্তি, ধরণি, ধমনি, মঞ্জরি, মসি, যুবতি, পঞ্জি, রচনাবলি, লহরি, সূচিপত্র, নাড়ি, পদবি, পল্লি, চুল্লি, চিৎকার, তরণি, ভঙ্গি, সরণি, উর্ণা, উষা, চিৎকার।
রেফের ব্যবহার
মনে রাখুন, রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না।
যেমন : অর্জ্জুন, ঊর্দ্ধ, কর্ম্ম, কার্ত্তিক, কার্য্য, বার্দ্ধক্য, মূর্চ্ছা, সূর্য্য বানানের পরিবর্তে লিখতে হবে অর্জুন, ঊর্ধ্ব, কর্ম, কার্তিক, কার্য, বার্ধক্য, মূর্ছা, সূর্য ইত্যাদি।
‘ঙ’ না কি ‘ং’
সন্ধির ক্ষেত্রে ক খ গ ঘ পরে থাকলে পূর্ব পদের অন্তস্থিত ম স্থানে অনুস্বার (ং) হবে। যেমন :
অহম + কার = অহংকার
তেমনি-
ভয়ংকর, সংগীত, শুভংকর, হৃদয়ংগম, সংঘটন।
শব্দটি সন্ধিবদ্ধ না হলে ঙ স্থানে ং হবে না। যেমন :
অংক না-অঙ্ক
অংগ না-অঙ্গ
আকাংখা না-আকাক্সক্ষা
আতংক লিখবেন না, লিখুন আতঙ্ক
কংকাল লিখবেন না, লিখুন কঙ্কাল
গংগা লিখবেন না, লিখুন গঙ্গা
বংকিম লিখবেন না, লিখুন বঙ্কিম
বংগ লিখবেন না, লিখুন বঙ্গ
লংঘন লিখবেন না, লিখুন লঙ্ঘন
শংকা লিখবেন না, লিখুন শঙ্কা
শৃংখলা লিখবেন না, লিখুন শৃঙ্খলা
সংগে লিখবেন না, লিখুন সঙ্গে
সংগী লিখবেন না, লিখুন সঙ্গী।
সংস্কৃত ইন-প্রত্যয়ান্ত শব্দের দীর্ঘ ঈ-কারান্ত রূপ সমাসবদ্ধ হলে সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়ম অনুযায়ী সেগুলিতে হ্রস্ব ই-কার হয়। যেমন :
গুণী – গুণিজন
প্রাণী- প্রাণিবিদ্যা,
মন্ত্রী-মন্ত্রিপরিষদ
ইন-প্রত্যয়ান্ত শব্দের সঙ্গে ত্ব ও তা প্রত্যয় যুক্ত হলে ই-কার হবে। যেমন :
কৃতী- কৃতিত্ব
দায়ী- দায়িত্ব
প্রতিযোগী-প্রতিযোগিতা
মন্ত্রী- মন্ত্রিত্ব
সহযোগী-সহযোগিতা।
বিসর্গ (ঃ)
শব্দের শেষে বিসর্গ (ঃ) থাকবে না। যেমন :
ইতস্তত, কার্যত, ক্রমশ, পুনঃপুন, প্রথমত, প্রধানত, প্রয়াত, প্রায়শ, ফলত, বস্তুত, মূলত।
এ ছাড়া নিচের শব্দগুলিতে মধ্যস্থ বিসর্গ বর্জিত হবে। যেমন :
দুস্থ, নিস্তব্ধ, নিস্পৃহ, নিশ্বাস।

মন্তব্য করুন