যে স্মৃতি ভোলা যায় না

আমাদের সময়ে বছরে বছরে বর্ষাকাল আসতো। বর্ষাকাল যেন নতুন আমেজ- নতুন কিছু। নদীর প্লাবনের পর নদী যখন পানিতে টইটম্বুর- তখন দু’পাশের ছোট ছোট খাল-বিল, পুকুর, ডোবা নালা ভরে গ্রামে পানি ঢুকতো। নদীর বেড়ে যাওয়া পানি আসতে শুরু করার সময় প্রবাহিত পানিকে আমরা এগিয়ে আনতে যেতাম।
নতুন পানি গ্রামে আসছে জেনে কী- যে ভালো লাগতো, সে বোঝানো যাবে না। ভালো লাগতো এই ভেবে যে, নতুন পানিতে ছিপ দিয়ে মাছ ধরব, গোসল করব, নৌকা চালাব, কলাগাছের ভেলায় ভেসে বেড়াবো ইত্যাদি। নদীর পানি নিজের বাড়ীর আঙ্গিনায় আসবে-এ তো বিরাট পাওয়া (পরিবেশগত কারণে এ সময় এটা স্বাভাবিক ছিলো) ।
যা হোক পানি এলে গ্রাম ও এলাকা পানিতে টইটম্বুর হতো।বর্ষার নতুন পানিতে মাছ ধরার হৈচৈ পড়ে যেতো। দোওজাল, ঝাঁকি- জাল, ওচা, যুতি, দোয়াইর, বানা ইত্যাদি (মাছ-ধরার-আঞ্চলিক উপকরণ) দিয়ে মাছ ধরা হতো টেংরা, গোলসা, ডিমওয়ালা পুঁটি, বাইন, মাগুর, শিং, কৈ ইত্যাদি নতুন পানির মাছ কী যে স্বাদ-কী যে মজা লাগতো বলাইবাহুল্য।
বড়শি দিয়ে মাছধরা এ এক নেশা। নেশার মধ্যে কেটে যেতো কত সময় -এখনো এ সমস্তই স্মৃতিতে ভেসে বেড়ায় সময়ে অসময়ে। সব বাড়িতে তখন টিউবওয়েল ছিলো না। কুয়া-ইদারা ছিলো কোন কোন বাড়ীতে। বিশুদ্ধ পানির জন্য ভেলায় করে গায়ের বধূরা তখন টিউবওয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করতো।
গরু-বাছুরের গোসলের জন্য বর্ষার পানিই যথেষ্ট ছিলো। এসময় ধান ও পাট কাটার হিড়িক লেগে যেত। ধান কেটে নৌকায় ভরে কৃষক সেই ধান ঘরে তুলতো।
কবির ভাষায়–
‘ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই-ছোটো সে তরী
আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।’
সত্যিই সোনার ধানে কৃষকরা অনাবিল আনন্দে উজ্জীবিত হতো, উল্লসিত হতো- আনন্দময় এ গর্ব আমার, এ গর্বে আমার স্বত্বা আজীবন স্পর্ধিত।

(চলবে)

মন্তব্য করুন