শুকতারা উঠতে আর বাকি কতক্ষণ

মাহমুদা রিনি

বয়স বাড়ছে পৃথিবীর!
নাকি আমি কালোত্তীর্ণ হচ্ছি!
সত্যি সত্যি বয়স বাড়ছে, তার চেয়েও বড় সত্যি আমি হেরে যাচ্ছি।
বয়স বাড়ছে, অসহিষ্ণুতার উত্তাপ বাড়ছে চারপাশে, মানুষের ভিতরে দেয়াল বাড়ছে।
আর আমি ক্রমাগত কুঁকড়ে যাচ্ছি পরাজিত সৈনিকের মতো।
নিজের সামনে ছোট হতে হতে মাটিতে মিশে যাচ্ছি। আমার চারপাশে গজিয়ে উঠছে কাঁটাওয়ালা গাছ,
যার শেকড় সরীসৃপের মতো এগিয়ে আসছে আমার দিকে
আমাকে জাপটে ধরবে বলে।
এইতো সেদিনও আমার ছিল জোরালো উচ্চারণ, পেশীগুলো দৃঢ় হয়ে উঠতো ঝাপটের মতো।
দুচোখের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ছিল বজ্র-বিদ্যুতের আগুন।
আজ তা বিড়লের মত পেশীহীন গলায় মিউমিউ ডাকে এলিয়ে পড়ে।
কোলের কাছে পোষা শৃগাল শিকারী দৃষ্টি ভুলে একটুকরো মাংসের আশায় মুখ থুবড়ে আছে।
শৃগালটা আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয় বয়স বাড়ছে, সময় এখন অন্য ভাষায় কথা বলে।
এখন চারপাশে ধর্ম- অধর্ম প্রবল,
এখন কোরবানির পশু গলা বাড়িয়ে দেয়।
এখন খড়গ হাতে দেবতারা রণ-পা চড়ে,
গীর্জার ঘন্টাধ্বনি প্রচণ্ড প্রতিধ্বনি তোলে,
এখন সৌরজগত আভূমি নত হয় প্রলয় দেবতার পায়ে,
এখন সরীসৃপ হামাগুড়ি দেয় সাদা আলখাল্লার ভিতর। আমি ক্রমাগত হারিয়ে যেতে থাকি, আমি ক্রমাগত হেরে যেতে থাকি।
এখন রমনীরা গোধূলি আলোয় বেগুনি হয়ে ওঠে না, তাদের চোখে আঁধারের মায়াজাল।
রাতচরা পেঁচার হুম হুম ডাকে নরকের প্রতিধ্বনি। আগুন রাঙা আকাশের গায়ে গনগনে উত্তপ্ত শিখা।
তারা চোখ ফিরিয়ে নেয় ঝলসে যাওয়ার ভয়ে।
তারা অবগুণ্ঠিত হয় নিশাচর শ্বাপদের ভয়ে।
তাদের স্তনের অমৃতসুধা শুকিয়ে যায় কাঁটাওয়ালা মুগুরের ভয়ে।
শিশুটি ধীরে ধীরে বিকলাঙ্গ হয়ে ওঠে।
শিশুটি ধীরে ধীরে বধির হতে থাকে
শিশুটি ধীরে ধীরে বাকহীন হতে থাকে
আর আমি ক্রমাগত হেরে যেতে থাকি।
আমি ক্রমাগত কালোত্তীর্ণ হতে থাকি।
আমি ক্রমাগত আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি– শুকতারা উঠতে আর বাকি কতক্ষণ!

কবি নীলকন্ঠ জয়

সকল পোস্ট : নীলকন্ঠ জয়