বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে প্রত্যাশা/আনোয়ারা নীনা

বাঙালি জাতির ধারক যিনি তিনি হলেন আমাদের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । যার জন্ম না হলে আজ আমরা পেতাম না স্বাধীন-সার্বভৌম ভূখণ্ড, পেতাম না একটি লাল সবুজ পতাকা-তিনি হলেন আমাদের জাতির পিতা।

তাঁর অসামান্য নেতৃত্ব, ত্যাগ, সাংগঠনিক দক্ষতা, সাহস, দেশ প্রেমের মাধ্যমে বিশ্বের বুকে একটি নতুন মানচিত্র উপহার দিয়েছেন। বাঙালির অধিকার রক্ষায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন পথিকৃৎ। তাই তো কিউবার মহান বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো ১৯৭৩ সালে আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের শীর্ষ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাতের পর বলেছিলেন- “আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসকিতায় তিনি হিমালয়।”

স্বাধীনতার স্বপ্নের পতাকা হাতে নিয়েই ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা সত্বেও ক্ষমতা নিয়ে গদিতে বসতে পারছিলেন না। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জনসভায় স্বাধীনতার দিকনির্দেশনা হিসেবে এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে তিনি বজ্রকন্ঠে ঘোষণা করেছিলেন- “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।” এই কালজয়ী ভাষণ আমরা শুনিনি এমন কেউ নেই। কিন্তু এত গুরুত্বসহকারে বা অর্থ বুঝার চেষ্টা করিনি। কিন্তু ভাষণের মর্মকথা এবং অর্থ বুঝে যিনি এই ৭ই মার্চের ভাষণকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি হলেন আমাদের ভালুকার সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ কামরুল আহসান তালুকদার। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন ৭ই মার্চকে “জাতীয় ভাষণ দিবস” এবং ৭ মার্চের ভাষণকে জাতীয় ভাষণ হিসেবে যেন স্বীকৃতি দেয়া হয় । এর প্রেক্ষিতে ভালুকার সাবেক ইউএনও মোঃ কামরুল আহসান তালুকদার ভালুকায় সর্বপ্রথম ২৫/০১/২০১৭ খ্রিঃ জেলা প্রশাসক বরাবরে ২৫.১.২০১৭ তারিখে স্মারক নং-নিপ্র/সাধারণ/২০১৭-১৩১ মোতাবেক একটি প্রস্তাবনা পাঠান। তারপর ৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৭ খ্রিঃ মোঃ কামরুল আহসান তালুকদারের পরিকল্পনায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ নিয়ে ভাষণ উৎসব উদযাপনের উদ্যোগ গ্রহন করেন এবং ভালুকায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ উৎসবের ঘোষণা করেন। পরদিন ৬ ফেব্রুয়ারী হালিমুন্নেছা চৌধুরানী মেমোরিয়েল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের উপস্থিতিতে হাজারো শিক্ষার্থীর মাঝে এই ভাষণ প্রতিযোগিতার কথা ঘোষণা দেন।

এরই প্রেক্ষিতে ভাষণের ৪৩০টি সিডি ও প্রিন্ট কপি ভালুকা উপজেলায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দেন। ৭ই মার্চ ২০১৭ খ্রিঃ এর চুড়ান্ত প্রতিযোগিতা হবে বলে তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন। এর আগে প্রথমে প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে, ইউনিয়ন পর্যায়ে এবং সর্বশেষ উপজেলা পর্যায়ে প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার কথা ছিল। ৬ ফেব্রুয়ারী এই প্রতিযোগিতার কথা ঘোষণার পর পরই শুরু হয়ে গেল ভাষণের উৎসব। ভালুকা উপজেলার প্রায় এক লক্ষ শিক্ষার্থী এই ভাষণের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছিল। এমনও হয়েছে ভালুকা উপজেলায় মুজিব কোর্ট দর্জিরা বানিয়ে শেষ করতে পারেনি। অনেক ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা কান্নাকাটিও করেছে এই পোশাক যখন কিনতে পারেনি বা তৈরি করতে পারেনি। যে বাচ্চাটি সবে মাত্র আধো আধো বোলে কথা বলতে শিখেছিল সে বাচ্চাটি বলে উঠেছে আধো আধো ভাঙ্গা ভাঙ্গা উচ্চারণে বলেছে, ‘‘ভাইয়েরা আমার…’’। শুধু তাই নয় এক আবেগ ঘন উৎসব মুখর পরিবেশ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল সেই সময়ে ভালুকায়। ২০১৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারীতে যদিও প্রতিষ্ঠান ও ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রতিযোগিতা শেষ হয়েছিল কিন্তু মোঃ কামরুল আহসান তালুকদারের বদলী জনিত কারণে আর প্রতিযোগিতা শেষ করে যেতে পারেননি। তবে ভালুকার মানুষ কৃতজ্ঞ উনার প্রতি। যিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করে ক্ষুদে শিক্ষার্থীকে দেশ মাতৃকার কাজে নিয়োজিত করে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাঁর মহৎ উদ্যোগে ভালুকা উপজেলায় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী “ক্ষুদে বঙ্গবন্ধু”তে পরিণত হয়েছিল। সারা উপজেলা থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক এই তিনটি পর্যায়ে মোট ১২জন শিক্ষার্থী সেরা নির্বাচিত হয়েছিল।

১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ৩০ অক্টোবর ২০১৭ সালে। ২৫তম ব্যাচের এই বিসিএস অফিসার বদলী জনিত কারণে ভালুকা ছেড়ে গেলেও ধীরে ধীরে পূর্ণতা পেতে শুরু করেছে তার স্বপ্নগুলো। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন-
১. ৭ই মার্চকে যেন ‘‘ভাষণ দিবস’’ ঘোষণা করা হয়।
২. ৭ই মার্চের ভাষণটি যেন ‘‘জাতীয় ভাষণ’’হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।

১৫/১০/২০২০ ইং তারিখে ৭ই মার্চকে ঐতিহাসিক দিবস ঘোষণা করা হয়। আমরা ভালুকাবাসী সেই সাথে গর্ববোধ করছি যে, আমাদের ভালুকা থেকেই প্রথম এই স্বীকৃতির আওয়াজ তুলেছিলেন মোঃ কামরুল আহসান তালুকদার। ৭ই মার্চের ভাষণকে উৎসবে পরিণত করার এবং ভাষণ চর্চার উদ্যোগ নেয়ায় আস্তে আস্তে এটা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় ২৩/০৭/২০১৭ ইং তারিখ তিনি ব্যক্তিগত পর্যায়ে জাতীয় জনপ্রশাসন পদক পান।
আজো ভালুকাসহ সারা দেশে ৭ই মার্চের ভাষণ প্রতিযোগিতা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে।

আনোয়ারা নীনা
প্রধান শিক্ষক
হালিমুন্নেছা চৌধুরাণী মেমোরিয়েল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
ভালুকা, ময়মনসিংহ।

কবি আঞ্জুমান আরা খান

সকল পোস্ট : আঞ্জুমান আরা খান

মন্তব্য করুন