শিক্ষার্থীদের জন্য চাই সঠিক পরিকল্পনা/ কে এম মাসুম বিল্লাহ

বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনায় শিক্ষার ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি এবং সুদূরপ্রসারী। মহামারীর করোনার ছোবলে বন্ধ আছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গত বছর মার্চ মাসে যখন প্রথম ধাপে ১৫ দিনের জন্য স্কুল-কলেজসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয় তখন কে জানত এত দীর্ঘদিন বন্ধ রাখতে হবে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে চলতি বছরের শুরুর দিকে করোনার প্রকোপ কিছুটা কমলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। তবে দেশে হঠাৎ করেই করোনা আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে বাড়তে থাকে, সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে করোনার ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট যা পূর্বের তুলনায় অত্যন্ত শক্তিশালী।
সংক্রমণ কমানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আসে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা! এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত মুখ থুবড়ে পরে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত স্কুল কলেজ খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হতে পারে আত্মঘাতী, কারণ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বয়স বিবেচনায় তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই কম। তবে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কুফলও কম নয়। এসব কিছু বিবেচনায় নিয়ে সরকারকে একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দীর্ঘদিন স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় অস্বস্তিতে আছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পড়ালেখায় মনোযোগ নেই কারও, মানসিক অবসাদে ভুগছে অনেক কোমলমতি শিক্ষার্থী। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় ঘরে চার দেয়ালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে জীবন। করোনা মহামারীর কারণে খুব বেশি ঘরের বাহির হওয়ারও সুযোগ নেই, নেই ঘুরতে যাওয়ার মতো কোনো অবস্থাও। শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ ঝুঁকে পড়ছে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের দিকে। বিভিন্ন ধরনের ভিডিও গেমস, কিংবা সোশ্যাল সাইটগুলোতে সময় কাটাচ্ছে এসব শিক্ষার্থী। অনেকেই নিঃসঙ্গতায় ভুগছেন, মানসিক সমস্যার মধ্যে থাকার কথাও উঠে এসেছে বিভিন্ন প্রতিবেদনে।
সাম্প্রতিক একাধিক পরিসংখ্যান বলছে, গোটা বিশ্বের ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের ৮০ শতাংশই বিভিন্ন কারণে শরীরচর্চাবিমুখ। এদের অনেকেই মোবাইল ফোন, অ্যান্ড্রয়েড গেম, ভিডিও গেম, টিভি দেখার প্রতি অতিরিক্ত আসক্তির ফলে শরীরচর্চা বিমুখ হয়ে পড়েছে। করোনা সংক্রমণের হার কয়েকদিন থেকে নিম্নগামী, সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি কিছুটি নিয়ন্ত্রণে এলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ব্যাপারে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ও শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হবে বড় চ্যালেঞ্জ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষার্থীদের পূর্বের মতো মানিয়ে নেওয়া সত্যিকার অর্থেই কঠিন হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে আগে থেকেই পরিকল্পনা গ্রহন করতে হবে যাতে করে শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে মানিয়ে নেওয়ার সুযোগ পায়। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থবিধি মানানো হবে আরও বড় চ্যালেঞ্জ বিশেষ করে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য বিষয়গুলো একটু কঠিন হয়ে যাবে। শিক্ষার্থীদেরকে নতুন করে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে কিছু পরিকল্পনা হাতে নেওয়া যেতে পারে।
সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরকে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে ও পরে তাদের অবস্থান কী হবে। এছাড়াও দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শিক্ষার্থী ঝরে যেতে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন। সত্যিকার বাস্তবতা অনেকটা সেরকমই। করোনার কারণে পরিবারের আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় অনেক নিম্ন ও প্রান্তিক পরিবারের সন্তানদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হতে পারে। তাই ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের ব্যাপারেও থাকতে হবে সঠিক পরিকল্পনা। স্কুল-কলেজে আসার জন্য উৎসাহিত করতে হবে। বিভিন্ন ধরনের কো-কারিকুলাম প্রোগ্রামের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা ও পুরস্কারের ব্যবস্থাও রাখা যেতে পারে। অভিভাবকদের নিতে হবে বাড়তি সচেতনতা। বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যাওয়া আসার সময়গুলোতে সন্তানদের স্বাস্থ্যবিধি মানানোর কাজটি অভিভাবকদেরকেই করতে হবে। অভিভাবকদের জন্য অবশ্য আরও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। দীর্ঘদিন স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা পড়ালেখাবিমুখ, এদের অনেকেই যেহেতু ডিজিটাল ডিভাইসগুলোতে আসক্ত হয়ে পড়ছে তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিলে অভিভাবকদের বাড়তি সচেতনতা দরকার হবে।

কে এম মাসুম বিল্লাহ : ব্যাংক কর্মকর্তা, পটুয়াখালী

অ.আ প্রকাশকাল- 11:17 PM

কবি অলোক আচার্য

সকল পোস্ট : অলোক আচার্য